।।মুফতী রফিকুল ইসলাম আল মাদানী।।
অনেক আনন্দে কাটাচ্ছো তোমরা মাদরাসা জীবন। এর মধ্যেই তোমরা দেখেছো বড় হওয়ার স্বপ্ন। তোমাদের বসতে হচ্ছে পরীক্ষার আসনে। তোমরা শিক্ষার্থী। একই সাথে তোমরা পরীক্ষার্থী। এ পর্যন্ত কত পরীক্ষাই তো তোমরা দিয়েছো। এবার দিতে যাচ্ছো দাওরায়ে হাদীস সমাপনী (মাস্টার্স) পরীক্ষা। আমি এই সমাপনী পরীক্ষার্থীদের শুভকামনায় কয়েকটি লাইন লিখতে চাই।
হাজারো বিপ্লব আন্দোলনের অর্জন দাওরায়ে হাদীস সনদের স্বীকৃতি। অনন্ত আশা আকাক্সক্ষা ও চেষ্টা-প্রচেষ্টার বিনিময়ে এই সনদ আজ মাস্টার্স সমমান লাভ করেছে। ধন্যবাদ যারা এর জন্য ত্যাগ বিসর্জন দিয়েছেন। শুভেচ্ছা জানাই তাদেরকে যারা এই সুযোগ পেয়ে ধন্য হবে। কওমী মাদরাসার জগতে দরসে নেজামীর সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরায়ে হাদীস। এই তো কয়েকটা দিন পরেই আসছে ১৪৪১ হিজরি দাওরায়ে হাদীসের সমাপনী পরীক্ষা।
‘আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ’এর তত্ত্বাবধানে দেশের বৃহত্তর ৬টি বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে এই পরীক্ষা। দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষা হলো দরসে নেজামীতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। দাওরায়ে হাদীস সনদ মাস্টার্স সমমান স্বীকৃতি লাভ করায় এ পরীক্ষার গুরুত্ব আরো বেড়েছে। তাই এ পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বর্তমানে অনেক চাপে থাকতে হয়।
যদিও তারা মেশকাত জামা’আত পর্যন্ত অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়ে ফেলেছো, তবু দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) পরীক্ষাটা বর্তমানে বেশী আলোচিত। সবার মধ্যেই এ পরীক্ষা নিয়ে একটা আগ্রহ জমেছে। যখন হাইআতুল উলয়ার ফলাফল প্রকাশ হয়, সেদিন অনেক পত্রিকার শিরোনাম হয় দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স)পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে । ফেসবুকে হয় জমজমাট আড্ডা। বেশ একটা উৎসব উৎসব পরিবেশ থাকে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত মাদরাসাগুলোতে। আর মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের তো আনন্দের অন্ত নেই।
এই তো আর মাত্র কয়টা দিন, সবকিছু ভুলে ভালো মতো পড়ালেখা করো। এই সময়টা তোমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। এ পরীক্ষাটা খুব ভালো করে দাও তোমরা। তোমার নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের জন্য, মাদরাসার সুনামের জন্য এবং পরম করুণাময় আল্লাহকে রাজী করার জন্য। আমাদের পড়ালেখা আল্লাহর জন্য, সবকিছু আল্লাহর জন্য। পরীক্ষা হলো সত্যিকার পড়ালেখা প্রমাণ করার মাধ্যম। প্রতিযোগিতামূলক পড়ালেখার অন্যতম পদ্ধতি।
ভুলে যেও না :
আমাদের আসল পরীক্ষা হলো পরকালের পরীক্ষা। মহান প্রভু কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন,
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ
যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য, কে তোমাদের মধ্যে ভালো আমল করে। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (সূরা মূলক-২)
পরকালের পরীক্ষায় যে যতো ভালো ফলাফল অর্জন করবে সে তেমন মহা পুরস্কার লাভ করবে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنَى وَزِيَادَةٌ
যারা ভালো করেছে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম বিনিময়। আরো অতিরিক্ত। (সূরা ইউনুস-২৬)
পরকালের পরীক্ষায় যে অকৃতকার্য হবে তার হতাশা ও অশান্তির শেষ নেই। ওই পরীক্ষা দ্বিতীয়বার পুনরায় দেওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। সাবধান! আল্লাহ তা’য়ালাকে তোমরা ভুলে যেওনা। ভুলে যেও না পরকালকে। পরীক্ষার প্রস্তুতি যতো কঠিন হোক না কেন, নামায,দোয়া ও সুন্নতী আমলে যেন কোনো অবহেলা না হয়। সময় মতো নামায আদায় করা চাই। ইবাদত করা চাই মনোযোগ দিয়ে, সাহায্য চাও আল্লাহ তা’য়ালার কাছে। তিনিই সবকিছুর মালিক।
ভয় নেই :
সুদৃঢ় মনোবল নিয়ে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। পরীক্ষার কক্ষেও পুরো মনোবল নিয়ে পরীক্ষা সম্পাদন করতে হবে। নিজের সাহস আর মনোবল হলো সফলতার প্রথম চাবি। মনে রাখবে,পরীক্ষা ভয়ের কিছু নয়; পরীক্ষা জীবনের উন্নতির সোপান যা ভালোভাবে অতিক্রম করার মাধ্যমেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তাই ভয় না পেয়ে জয় করবো মাস্টার্স সনদটাকে। মন ভালো রেখে ব্যাপক উৎসাহ নিয়ে পরীক্ষা দাও। ফল ভালো হবেই । ইনশাআল্লাহ!
শরীর ঠিক তো তুমি ফিট :
সময়ের কাজ সময়ে করলে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া যায়। জীবনের পহেলা সবক ‘আজ কা কাম কাল পর নাহ ঢাল’। তাই পড়াশোনার রুটিনটা সারা বছরই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হয়। এখন পরীক্ষার আগে খাওয়া দাওয়া, ইবাদত বন্দেগী ভুলে পড়ালেখার দরকার নেই। রাত দিনের সময়সূচি অবশ্যই ভাগ করে নিতে হবে। তবে বিশ্রামের জন্য সময় রাখবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। তুমি যদি এখন বেশী বেশী রাত জেগে পড়ালেখা করো, তাহলে পরীক্ষার রাতে বা আগের দিন ঠিক মতো রিভিশন দিতে পারবে তো ? অহেতুক দুশ্চিন্তা বাদ দিতে হবে। পড়া, খাওয়া, ঘুম, ইবাদত-বন্দেগী সবই করতে হবে। তবে অবশ্যই নিয়ম মতো,নেযাম মতো। মনে রাখবে , শরীর ঠিক থাকলেই তুমি ফিট।
পরীক্ষার আগের দিন করণীয় :
পরীক্ষার আগের দিনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটা আসার আগেই তুমি পেয়ে যাবে প্রবেশপত্র ও রেজিষ্ট্রেশন কার্ড। এগুলোর কয়েকটি ফটোকপি করে রাখবে। পরীক্ষার দিন কী কী নিয়ে যেতে হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলো গুছিয়ে নেবে। যেমন প্রবেশপত্র ও রেজিষ্ট্রেশন কার্ডের মূল কপি, তিন-চারটি কলম, লম্বা স্কেল, ঘড়ি ইত্যাদি একটি স্বচ্ছ ফাইলে ভরে রাখবে।
এমন কলম নেবে, যেগুলো দিয়ে দ্রুত লেখা যায়। তোমার জানামতো ভালো কয়েকটি কলম আগে থেকেই কিনে রাখবে। এগুলো দ্বারা কয়েক পৃষ্ঠা করে লিখে লিখে তোমার সুবিধা মতো কলমগুলো চালু করে রাখবে। পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আগে থেকে কিনে রাখবে। প্রথমদিন যে বিষয়ে পরীক্ষা হবে তা আগের দিন ও রাতে যথাসাধ্য রিভিশনের চেষ্টা করবে। তবে পরীক্ষাকালীন সময় অতিমাত্রায় রাত জাগবে না। কোনো কিছুই পরিমাপের বেশী খাবে না। পেটে সমস্যা হয় এমন খাবার অবশ্যই পরিহার করবে।
ভালো নম্বর পাওয়ার সহজ অনুশীলন :
ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য মূল কিতাব ভালোভাবে আয়ত্ব করতে হবে, প্রচলিত গাইড বইয়েরও সহযোগিতা নিতে হবে। আর লেখা ও উপস্থাপনা সুন্দর হওয়া তো আকর্ষণীয় উত্তরপত্রের জন্য একান্ত জরুরী বিষয় আছেই।
এক. মূল কিতাব আগে আয়ত্ব করতে হবে :
মূল কিতাব যথাযথভাবে আয়ত্ব করা,অনুবাদ জানা, শাব্দিক বিশ্লেষণ ও হাদীসের ব্যাখ্যা অনুশীলন করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষায় পাশের জন্য নয়, জীবনের প্রয়োজনে মূল কিতাবে দখল থাকা আবশ্যক।
মূল কিতাবে পূর্ণ জ্ঞান ছাড়া জীবনে কোনো ক্ষেত্রেই উন্নতি করতে পারবে না। তবে মূল কিতাব সহজে আয়ত্বের জন্য কিছু কলাকৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
মূল কিতাব আয়ত্ব করাকে একটি কঠিন বা দুর্বোধ্য বিষয় মনে করা হয়। একটি অজানা আশঙ্কায় দিন-রাত অতিবাহিত করতে হয়। নিজের প্রতি আস্থার জায়গায় চিড় ধরে। কিন্তু আমি তোমাদের বলব, কোনোভাবেই আশাহত হবে না। বরং স্বীয় লক্ষ্যে অবিচল থাকবে। এক মিনিটের
জন্য চোখ বন্ধ করে মনের গহিনে প্রবেশ করে নিজেকে প্রশ্ন করো :
মূল কিতাবকে ভয় না পেয়ে জয় করার জন্য ভালোবেসে কতটা সময় দিয়েছো? শুধু পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কিতাব পড়ো, নাকি রাসূলের (সা.) হাদীস জানার জন্য বুঝে পড়ো? মূল কিতাব আয়ত্ব করার জন্য কী কী উপায় উপকরণ অবলম্বন করেছো?
ওপরের প্রশ্নগুলো ছাড়াও অনেক প্রশ্ন হতে পারে। কোনো প্রশ্নের উত্তর না বোধক হলে বুঝতে হবে, হচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পানির যেমন বিকল্প নেই, তেমনি কোনো বিষয়ে সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য স্থির মনোবল, বিষয়টির প্রতি ভালোবাসা-আগ্রহ ও কঠোর অনুশীলনের বিকল্প আজও সৃষ্টি হয়নি।
হাইআতুল উলয়ার বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতিতে সব বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। এত দিনে তোমরা পাঠ্যবইয়ের সব অংশ শেষ করেছো নিশ্চয়ই। কোনো কিতাবের কোনো বিষয় বাকি থাাকলে তাড়াতাড়ি শেষ করে নাও। জেনে রেখো, কোনো বিষয়ে পরীক্ষা খারাপ হলে মোটের ওপর ফলাফল ভালো হয় না। প্রতিটি বিষয়ে ভালো হলেই সামগ্রিক ফল ভালো হবে। তাই সব বিষয়ের ক্ষেত্রেই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করো।
দাওরায়ে হাদীসের কোনো একটি কিতাব শুরু শেষ ভালোভাবে পড়ে নিলে সব বিষয়ে সম্যক ধারণা হবে। এক্ষেত্রে “সুনানে তিরমিযী ” পরিপূর্ণ একটা রিভিশন দেওয়া দরকার। এছাড়া কিতাবুল ঈমান “সহীহ বুখারী” ও “সহীহ মুসলিম” থেকে, কিতাবুল ইলম, ওহী ও মাগাজী “সহীহ বুখারী” থেকে, কিতাবুল উজহিয়্যা, জাবাইহ ও জিহাদ “সুনানে আবি দাউদ” থেকে, আল ই’তেসাম বিল কিতাব ওয়াসসুন্নাহ, “সুনানে ইবনে মাজাহ” থেকে এবং কিতাবুল বুয়ূ ও ক্বিসাস, হুদুদ, শাহাদাত “সহীহ মুসলিম” ২য় খন্ড থেকে ভালোভাবে আয়ত্ব করতে হবে।
আর শামাইলে তিরমিযী, ক্বালা আবু দাউদ এবং মুকাদ্দামায়ে মুসলিম মূল কিতাব ও ব্যাখ্যা গ্রন্থের মাধ্যমে ভালোভাবে বুঝে,পরিপূর্ণভাবে অনুশীলন করতে হবে। “শরহে মাআ’নিল আসার”, “সুনানে ইবনে মাজাহ” এবং “মুয়াত্তাইন” এর লিখক ও কিতাব পরিচিতি আংশিকভাবে এবং প্রতিটি কিতাবের অন্তত শুরু অংশ থেকে খুব ভালোভাবে পড়া আবশ্যক।
দুই. গাইড ছাড়া উপায় নেই :
সর্বোচ্চ ফলাফলের জন্য মূল কিতাব ভালোভাবে আয়ত্ব করার বিকল্প নেই। হাইআতুল উলয়ার বর্তমান প্রশ্নের ধরণ অনেকটাই সৃজনশীল। প্রতিটি প্রশ্নেই হরকত লাগানো, অনুবাদ করা ও শাব্দিক বিশ্লেষণ এবং হাদীসের মর্ম বর্ণনা করার কথা থাকে। এসব বিষয়ে পাশ নম্বর বা এর কাছাকাছি নম্বর থাকে।
এছাড়া হাদীসের সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও যথাযথ সমাধানের জন্য মূল কিতাবের শরণাপন্ন হতে হয়। তবে প্রশ্ন ও উত্তরের ধরণ বুঝার জন্য গাইডের সহায়তাও আবশ্যক। এছাড়া খুটিনাটি প্রশ্ন গাইড থেকে যেভাবে সহজে অনুধাবন করা যায়, মূল কিতাব থেকে তা বাহির করা অনেক জটিল। অতএব সর্বোচ্চ নম্বরের জন্য মূল কিতাব ও গাইড পরস্পর সম্পূরক। তবে দুর্বল ছাত্ররা যদি শুধু গাইডে নির্ভর হয়, তাদের জন্য হাদীসের অনুবাদ ও হরকত লাগানোর নীতিমালা ভালোভাবে বুঝে পড়া প্রয়োজন।
তিন. লেখা ও উপস্থাপনা চমৎকার হতে হবে :
হাতের লেখা শিক্ষিত মানুষের অলঙ্কার । উত্তরপত্র আরবী ভাষায় লেখা এবং সুন্দর লেখা ও সাবলীল উপস্থাপনার জন্য প্রতিটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য নম্বর বরাদ্দ আছে। পরীক্ষকের প্রথম দৃষ্টি লেখার প্রতি হয়। এ সুবাদে গবেষকগণ অনেক কথাই বলেছেন। কেউ বলেছেন, হাতের লেখা ভালো হতে পরীক্ষায় সহজেই কৃতকার্য হওয়া যায়।
কেউ বা বলেছেন, হাতের লেখা ভালো হলে অনেক নম্বর পাওয়া যায়। এর কোনোটাই অস্বীকার করার মতো নয়। পরীক্ষা এবং হাতের লেখা বিষয়ে একটা সরল হিসাব আছে। দাওরায়ে হাদীস পরীক্ষায় মোট ১০টি বিষয়। প্রতিটি বিষয়ে হাতের লেখা ও পরিচ্ছন্ন উপস্থাপনার জন্য তিন তিনটি নম্বর। ১০টি বিষয়ে ৩০টি নম্বর ।
যার হাতের লেখা ভালো নয় পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগেই তার ৩০টি নম্বর বিয়োগ হয়ে গেল। যেখানে তিন চার নম্বরের ব্যবধানে ক্রমিক নম্বরের অনেক ব্যবধান হয়, সেখানে ত্রিশে ব্যবধানে কোথায় নিয়ে দাঁড় করাবে আমরা সহজেই বুঝতে পারি। তাই পরীক্ষায় মর্যাদার আসন পেতে হলে হাতের লেখা ভালো ও সুন্দর করতেই হবে।
উত্তরপত্র সুন্দর হওয়ার জন্য করণীয় :
কয়েকটা বিষয় অনুসরণ করলে আশাকরি সবার লেখাই সুন্দর দেখাবে। উত্তরপত্র আকর্ষণীয় হবে। স্বপ্নের ফলাফল পেয়ে জীবন আনন্দে হেসে উঠবে। সে বিষয়গুলো হলো :
১. লেখার লাইন সোজা হতে হবে। লেখার লাইন আঁকাবাঁকা অথবা কোনো একদিকে ঝুঁকে যাওয়া, তো হবে না।
২. লেখার লাইন বেশী ফাঁকা ফাঁকা অথবা খুব সরু হলে সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তাই স্বাভাবিক পরিমাণ ফাঁকা বুঝে লেখা সাজাতে হবে।
৩. লেখা যেন বেশী ছোট না হয়, অক্ষর যেন ছোট-বড় না হয়, অক্ষর একটি দেখতে যেন আরেকটির মতো না হয়, সব অক্ষর যেন স্পষ্ট হয় এবং অক্ষর থেকে অক্ষর ও শব্দ থেকে শব্দের দূরত্ব যেন স্বাভাবিক পরিমাণ মতো হয় তা লক্ষ্য রাখতে হবে। এ সব গুণ সুন্দর লেখার অন্যতম শর্ত। লেখা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদি দেখতে একই রকম হয়, একই নিয়মে সাজানো হয়, তাহলে সেই লেখা সহজেই নজর কাড়ে। পরীক্ষক দেখে প্রতিক্রিয়াশীল হয়। আর লেখক পায় প্রাণ উৎসারিত ধন্যবাদ!
৪. আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় উত্তরপত্র লিখলে,উত্তরের ক্রমিক নম্বরগুলো আরবী ভাষায় লেখা আমি ভালো মনে করি। যেমন الجواب عن السوال الأول তবে যে ভাষায়ই লেখো ডানে বামে না লিখে মিডেলে তুলনামূলক বড় অক্ষরে লিখবে। আর প্রশ্নের অংশগুলোও আরবীতে লিখলে সহজেই চোখে পরবে, ভালো দেখাবে।
যেমন, ب ۔ ا ইত্যাদি। তবে প্রশ্নের এসব অংশ আরবী, উর্দূ উত্তরপত্রের ডান পাশে এবং বাংলা উত্তরপত্রের বাম পাশে হলেই ভালো। তুলনামূলক বড় অক্ষরে উত্তরপত্রের বাম পাশে হলেই ভালো। তুলনামূলক বড় অক্ষরে লিখতে হবে।
৫. প্রতিটি ছোট ছোট বিষয় এবং শিরোনাম, উপশিরোনাম অবশ্যই প্যারা দিয়ে লেখতে হবে। লম্বা কোনো বিষয় হলে এর বিভিন্ন অংশ ছোট ছোট শিরোনাম ও উপশিরোনামে ভাগ করা যায়। এ সব বিস্তারিত জানার জন্য আমার লেখা “আরবী কী লিখবো কিভাবে লিখবো” পড়তে পারো। জীবনের সাথি হিসেবে সংরক্ষণ করতে পারো।
৬. উপস্থাপনা সুন্দর ও গতিশীল হওয়ার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অথবা বিগত বছরের কোনো প্রশ্নোত্তর মুখস্ত করে কিছুক্ষণ নিরবে চিন্তা করো কেমন আয়ত্ব হয়েছে। অতঃপর তা মুখস্ত লিখো। মনে করবে তুমি পরীক্ষার হলে। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হবে। এরপর কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখো কী অবস্থা ? প্রয়োজনে নম্বর বরাদ্দ করো। এভাবে অনুশীলন করলে কাক্সিক্ষত সফলতা অর্জন হবেই ইনশাআল্লাহ!
৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার হলে বসতে হবে :
প্রতিদিনের মতোই পরীক্ষার দিন ঘুম থেকে উঠবে। কোনো রকম চাপ বা দুশ্চিন্তা যেন তোমার কাছে ঘেষতে না পারে। তাহাজ্জুদ নামায আদায় করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে। কিছু সময় কুরআনে কারীম তিলাওয়াতের চেষ্টা করবে। যেদিন যে বিষয়ের পরীক্ষা থাকবে, সেদিন সেই বিষয়বস্তু একটু উল্টেপাল্টে দেখে নেবে। স্বাভাবিক থাকবে। খুব বেশী সিরিয়াস হওয়ার দরকার নেই। আধঘন্টা আগে তোমাকে পরীক্ষা কক্ষে বসা প্রয়োজন। তাই হাতে সময় নিয়ে বের হবে।
পরীক্ষার আসনে বসে :
পরীক্ষার আসনে বসেই কিছুক্ষণ দোয়া দরূদ পড়ে নেবে। খাতা হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত বসে বসে সম্ভাব্য বিষয়গুলো মনে মনে রিভিশন দেবে। এ সময়ে রিভিশন দেওয়া কোনো বিষয় পরীক্ষায় আসলে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে লেখা সহজ হবে। উত্তরপত্র হাতে পেয়ে এতে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ইত্যাদি যা লেখার ছক থাকবে, তা পূরণ করে নেবে। নির্দিষ্ট ঘরে এসব বিষয় লেখতে হবে। লেখার পর পূণরায় অবশ্যই মিলিয়ে নেবে। খেয়াল রাখবে, সব বিবরণ নির্ভুল হতে হবে। এসব কালো কালির কলম দিয়ে লেখতে হবে।
সবকটি প্রশ্ন পড়ে কোনটার উত্তর তুমি দিতে পারবে, তা পেনসিল দিয়ে সনাক্ত করে নিতে পারো। তোমার কাছে যেটা সহজ মনে হয়, সে প্রশ্নের উত্তর আগে দেবে। প্রশ্ন ভালো করে পড়ে বুঝে নিতে হবে। ঘড়ি দেখবে, সময়ের প্রতি খেয়াল রাখবে। কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে যদি সময় খুব বেশী চলে যায়, তবে পরবর্তী এক বা একাধিক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এ জন্য কোন প্রশ্নে উত্তর লেখতে কী পরিমাণ সময় লাগবে তা ভেবে নিও। নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরে নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।
রিভিশনে কমবে ভুল :
সময়ের প্রতি সচেতন থেকে ১০/১৫ মিনিট আগেই উত্তর শেষ করার চেষ্ট করবে। কারণ, রিভিশন দিতে পারলে ভুলের পরিমাণ কমবে। জানা ছিল না এমনকিছু রিভিশনের সময় স্বরণ হতে পারে। তখন তা লিখে দিবে।
উল্লেখ্য যে,সবপ্রশ্নের উত্তরে যথাসাধ্য কিছু লেখার চেষ্টা করিও। এতে কিছু নম্বর আশা করা যায়। আর কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি অসম্পূর্ণ থাকে, তাহলে ভালো ফলাফলের মোটেই আশা করা যায় না। তাই সময়ের হিসাব করে যথাসময়ে সব প্রশ্নোত্তর অবশ্যই সম্পাদন করতে হবে।
পরীক্ষা শেষ হলে :
প্রতিদিন পরীক্ষা শেষে কে কয়টা উত্তর সঠিক দিতে পেরেছো, কয়টা পারোনি এসব নিয়ে একদমই আলোচনার দরকার নেই। এসব মেলাতে গিয়ে যদি দেখো তোমার কিছু ভুল হয়েছে, তাতে তোমার মন খারাপ হবে, যা পরবর্তী পরীক্ষায় প্রভাব ফেলবে। হল থেকে বের হয়ে সোজা রুমে এসে হাত-মুখ ধুয়ে খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম নিবে। পরের দিনের পরীক্ষার বিষয়ে মনোযোগী হবে।
মনে রেখো :
পরীক্ষা শেষে প্রবেশপত্র এবং যেসব জিনিস পরীক্ষার হলে নিয়েছো, সব খেয়াল করে অবশ্যই নিয়ে আসবে। শুভকামনা তোমার জন্য। তোমার অনাগত ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হোক। সফল হোক। হেসে উঠুক আনন্দের ঝলমলে প্রভাত।
-কেএল