শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


হাটহাজারী মাদ্রাসায় বুখারী শরীফ প্রথম খণ্ডের আখেরি দরস সম্পন্ন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর চলতি শিক্ষাবর্ষের দাওরায়ে হাদীস জামাতে বুখারী শরীফ প্রথম খন্ডের শেষ দরস সম্পন্ন হয়েছে।

বুধবার (২৬ জানুয়ারী) সকাল ৮টা থেকে আনুষ্ঠিত বুখারী শরীফের আখেরি দরস ও দোয়া-মুনাজাত পরিচালন করেছে দারুল উলূম হাটহাজারীর শায়খুল হাদীস ও প্রবীণ আলেম হযরত আল্লামা শেখ আহমদ। বুখারী শরীফের প্রথম খন্ডের শেষ দরসে পুরো দারুল হাদীস মিলনায়তন তরুণ আলেমদের জমায়েতে কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

দরসদানে আল্লামা শেখ আহমদ বুখারী শরীফের প্রথম খণ্ডের শেষ হাদীসের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। এ পর্যায়ে তিনি হাদীসের বর্ণনাকারী বিখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহুর ইসলাম গ্রহণ করার কাহিনী বর্ণনা করেন।

শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমদ বলেন, হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহুর পৈত্রিক নিবাস পারস্য অঞ্চলে তথা বর্তমান ইরানে ছিল। তার বাবা ছিলেন অগ্নিপূজকদের সর্দার। সালফান ফারসি রাদিয়াল্লাহ আনহুকে তার বাবা খুবই স্নেহ করতেন। একদিন সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহুর পিতা তাকে নিজেদের আবাদি ভূমি দেখে আসতে পাঠালেন।

তিনি বলেন, পথিমধ্যে খ্রিস্টানদের একটি গীর্জা দেখতে পেলেন। তাতে পার্দীর নেতৃত্বে খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদেরকে প্রার্থনা করতে দেখলেন। এ অবস্থার বর্ণনা দিয়ে হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু বলেন, আল্লাহর কসম, আমার কাছে তখন মনে হচ্ছিল আমরা অগ্নিপূজার যে ধর্মের উপর আছি এটা তার চেয়ে উত্তম। তিনি সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে থেকে যান এবং যে কারণে জমি দেখতে আর যাওয়া হয়নি। এ সময় তিনি পাদ্রির কাছে জানতে চান, এই ধর্মের উৎস কোথায়? উত্তরে তিনি বললেন, মুলকে শামে বা সিরিয়া দেশে। তখন সালমান ফারসি পার্দিকে অনুরোধ করলেন, সিরিয়ার পথে কোন কাফেলা যদি যায়, তাকে যেন খবর দেওয়া হয়।

শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমদ ঘটনা বর্ণনার ধারাবাহিকতায় বলেন, এরপর হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু তার পিতার কাছে ফিরে আসলেন। বিলম্বে ফেরার কারণ জানতে চাইলে সালমান ফারসী তাঁর বাবাকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বললেন, আমি তাদের ধর্ম সম্পর্কে যা দেখেছি তা আমার পছন্দ হয়েছে। আল্লাহর কসম, সূর্যাস্ত পর্যন্ত আমি তাদের সাথে ছিলাম৷ তাদের ধর্ম আমাদের ধর্মের চেয়ে উত্তম। এতে হযরত সালমান ফারসির পিতা রাগ হলেন এবং তার পায়ে শিকল পরিয়ে ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখলেন।

ইতিমধ্যে গীর্জা থেকে তার কাছে খবর পাঠানো হলো সিরিয়ার পথে একটি কাফেলা যাচ্ছে। তখন সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু পায়ের কড়া ভেঙ্গে সিরিয়ার পথে কাফেলার সাথে রওনা হয়ে গেলেন।

আল্লামা শেখ আহমদ বলেন, হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু অনেক বয়স্ক ছিলেন। আল্লামা শামসুদ্দীন যাহাবী ও ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. বলেন, কোন বিতর্ক ছাড়া তাঁর বয়স আড়াইশত বছর ছিল। তবে কোন কোন বর্ণনাকারী সাড়ে তিনশত বছরের কথাও বলেছেন। হযরত ঈসা আ. এর দূতকেও তিনি দেখেছেন, যার বর্ণনা পবিত্র কুরআনের সূরা ইয়াসীনের ১৪নং আয়াতে ‘ফাআযযানা বিছালিছিন” বলে উল্লেখ আছে। আল্লাহ তাআলা সালমান ফারসীকে ঈমানী জযবা দান করেছিলেন। যে কারণে বয়স্ক হওয়া সত্ত্বেও তিনি দমে যাননি।

সিরিয়ায় গিয়ে সালমান ফারসি সেখানকার চার্চে যাজকের কাছে গিয়ে বললেন, এমি এই ধর্মকে ভালবাসি এবং আমি এখানে থেকে আপনার সেবা করে ধর্ম পালনের নিয়ম শিখে সেই মতে ইবাদত করতে চাই।

সেই পাদ্রী সালমানকে থাকার অনুমতি দিলেন। কিন্তু কিছু দিন থেকে দেখলেন, উক্ত পাদ্রী ভাল লোক ছিলেন না। সে অনুসারীদেরকে যা উপদেশ করেন, সেমতে নিজে আমল করেন না। মানুষকে দান-সদকা করতে বলেন। পরে সেই দানের অর্থ গরীবদেরকে না দিয়ে নিজে আত্মসাত করে গচ্ছিত রাখত। একদিন সে মারা যায় এবং অনুসারীরা কান্নাকাটি করতে লাগল। তখন সালমান তাদেরকে পুরো ঘটনা বলল। এরপর পাদ্রীর ঘর তল্লাশী করলে গচ্ছিত ধনসম্পদ দেখে সকলে হতভম্ব হয়ে যান। তখন উপস্থিত সকলে কসম করে বলল, আমরা তাকে কবর দিব না।

এরপর নতুন এক যাজককে নিয়োগ দেওয়া হল। তিনি অত্যন্ত ভাল ও পরহেযগার ছিলেন। সবসময় ইবাদতে মশগুল থাকতেন। হযরত সালমান ফারসীর তার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও আস্থা তৈরি হল। সবসময় তার সাথে থেকে ইবাদত করতেন। একসময় তিনি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়লে সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু তার কাছে জানতে চাইলেন, ‘আপনার মৃত্যু হলে আমি কার কাছে যাব?’ তখন উক্ত পাদ্রী বললেন, এখন সঠিক ধর্মঅনুসারী পাওয়া মুশকিল। বেশিরভাগ মানুষই দুনিয়ার মোহে পড়ে গেছেন। তবে ইরাকের মাসুলে একজন পাদ্রী আছে, তার কাছে যেতে পারো।

এরপর উক্ত যাজকের মৃত্যুর পর হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু ইরাকের মাসুল শহরের প্রধান যাজকের কাছে আসেন। কিছুদিন তিনি এখানে থাকার পর এই যাজকও মৃত্যুর সন্নিকবর্তী হয়ে যান। তারপর তিনি উপদেশ দেন, তার ইন্তিকালের পর যেন নসীবিন এর যাজকের দরবারে গমন করেন তিনি। এরপর সেই যাজকও চরম বার্ধক্যে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার কাছে পরবর্তী গন্তব্যের উপদেশ চাইলেন। তিনি সালমান ফারসীকে উমুরিয়া স্থানের বড় যাজকের কাছে যেতে বলেন। তারপর তিনিও এক পর্যায়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সালমান ফারসী কার যাবেন উপদেশ কামনা করেন।

তিনি বলেন, আমার জানামতে হক্বের উপর আছেন, এমন কোন যাজককে আর দেখতেছি না। তবে সব আলামতে বুঝা যাচ্ছে, এখন শেষ যামানার নবীর আগমনের সময় হয়ে গেছে। মক্কা শরীফে আল্লাহ তাআলা পয়গাম্বর পাঠাবেন। একসময় তিনি মদীনার খেজুর বাগান এলাকায় হিজরত করবেন। যদি সম্ভব হয় তার কাছে গমন করবে।

এই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে চিনতে পারার তিনটি আলামত আছে- (১) তিনি নিজের জন্য সদকা গ্রহণ করবেন না। (২) তিনি হাদিয়া গ্রহণ করবেন এবং (৩) তাঁর পীঠে মুহরে নবুওয়াত অংকিত থাকবে।

আল্লামা শেখ আহমদ ঘটনার বর্ণায় এ পর্যায়ে বলেন, উক্ত যাজকের ইন্তেকালের পর হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু মক্কাগামী একটা কাফেলা দেখতে পেলেন। তখন সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহুর কাছে কিছু সম্পদও হয়।

তিনি ছাগল ও উট পালতেন। তিনি উক্ত কাফেলাকে প্রস্তাব দিলেন, যদি তাকে আরবের মক্কায় যেতে সাহায্য করেন, তাহলে তাদেরকে সব ছাগল-উট দিয়ে দিবেন। তারা রাজি হলেন। কিন্তু পথিমধ্যে উক্ত কাফেলার লোক বিশ্বাসঘাতকতা করে ওয়াদিউল কুরা নামক স্থানে তারা সালমান ফারসীর সব সম্পদ জবর দখল করে তাকে গোলাম পরিচয় দিয়ে বিক্রি করে দিল।

তারপর একে একে সালমান ফারসীকে বিক্রি করতে করতে এভাবে প্রায় দশজনের মালিকানা বদল হল। সর্বশেষে তাকে মদীনার বনু কুরাইজার এক বদমেজাযী ইহুদী ক্রয় করে নিল। সেই ইহুদী সালমান ফারসীকে দিয়ে ভারি ভারি ও কষ্টকর কাজ করাতো সারাদিন।

একদিন সালমান ফারসী খেজুর গাছের উপরে পরিষ্কার করার কাজ করছেন। তখন সালমান ফারসী গাছের নীচে মালিককে অন্যদেরকে সাথে আলোচনা করতে শুনলেন যে, মক্কা থেকে একটা কাফেলা এসেছে। তাদের একজন নিজেকে নবী দাবি করছেন। তিনি চুপচাপ শুনলেন।

এরপর রাতের বেলায় সংগোপনে কিছু খেজুর নিয়ে সালমান ফারসী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন, আপনার জন্য এই সদকার খেজুর নিয়ে আসলাম। তখন তিনি উত্তর দিলেন যে, আমি সদকার কিছু নিজের জন্য গ্রহণ করি না। তিনি সদকার খেজুরগুলো উপস্থিত সাহাবাগণের মাঝে বণ্টন করে দিলেন।

এতে হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু যাজকের বর্ণিত একটি আলামতের প্রমাণ পেলেন। দুয়েক দিন পর তিনি আবারও কিছু খেজুর নিয়ে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এগুলো আপনার জন্য হাদিয়া।

তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেজুরগুলো গ্রহণ করে নিজেও আহার করলেন এবং উপস্থিত অন্যদেরকেও দিলেন। এতে সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু দ্বিতীয় আলামতও অবলোকন করলেন। এরপর সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পেছনের দিকে গেলেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বুঝতে পেরে গায়ের চাদর সরিয়ে দিলেন। এতে সালমান রাদিয়াল্লাহ আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পীঠে মুহরে নবুওয়াত দেখতে পেলেন। তিনি আর একটুও বিলম্ব করলেন না। সাথে সাথে কালিমা পড়ে রাসূলের হাতে মুসলমান হয়ে গেলেন।

এভাবে মুসলমান হওয়ার পর হযরত সালামন ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু নিজের জীবনের বিস্তারিত কাহিনী বর্ণনা করে কীভাবে মুসলমান হলেন এবং সর্বশেষ গোলামির জীবন কাটাচ্ছেন, তার সবই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শোনালেন।

শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমদ ঘটনা বর্ণনার ধারাবাহিকতায় এ পর্যায়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে শান্ত্বনা দিয়ে সবর করতে উপদেশ দিলেন। গোলামির যিন্দেগীর কারণে মালিকের অনুমতি না থাকায় তিনি ইসলামের প্রথম দিকের গুরুত্বপূর্ণ বদর ও উহুদের যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। সর্বপ্রথম তিনি খন্দকের যুদ্ধে শরীক হতে পেরেছেন।

খন্দক খননের পরামর্শও হযরত সালমান ফারসী দিয়েছিলেন এবং সেই যুদ্ধেও মুসলমানগণ বিজয়ী হয়েছিলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তার মনিবের সাথে আযাদীর জন্য চুক্তি করার পরামর্শ দিলেন। তখন সালমানের ইহুদী মনিব বললেন, মুক্তি পেতে হলে চল্লিশ আউন্স স্বর্ণ দিতে হবে এবং ৩০০ খেজুর গাছের বাগান করে দিতে হবে, যে বাগানের সবগুলো গাজে খেজুরের ফলন শুরু হবে। তবেই মুক্তি পাবে।

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালে তিনি সালমানকে রাজি হয়ে যেতে বললেন। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত সাহাবায়ে কেরামকে খেজুরের চারাগাছ দিয়ে সালমানকে সাহায্য করতে বললেন।

খেজুরের চারাগাছ যোগাড় হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালমানকে ৩০০ খেজুর গাছের চারা রোপণের জন্য নির্ধারিত জায়গায় গর্ত করতে বললেন। গর্ত করা হলে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে চারা রোপণ করে দিলেন। রাসূলের হাতে রোপণ করা বাগানে এক বছরের মাথায় বিস্ময়করভাবে খেজুরের ফলন শুরু হয়ে গেল। এভাবে একটা শর্ত পুরণ হলো।

তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে এক ব্যক্তি থলেতে রাখা কিছু স্বর্ণ হাদিয়া দিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালমানকে উক্ত ব্যাগ নিয়ে মালিককে দিতে বললেন। সালমান বললেন, হুজুর! স্বর্ণ তো ৪০ আউন্স লাগবে। তখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালমানকে বিসমিল্লাহ বলে ব্যাগ ধরতে বলে মালিককে দিতে বললেন। উক্ত ইহুদী মেপে দেখলেন, বরাবর ৪০ আউন্স স্বর্ণ হল।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মুজেযায় এভাবে সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু আযাদ হয়ে গেলেন। তারপর সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহ আনহু জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সোহবতে ছিলেন। তিনি অনেক বয়স্ক হওয়ায় অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি ছিল।

তিনি জিহাদসহ নানাকাজে বুদ্ধিপরামর্শ দিয়ে ইসলামের প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ খেদমত করেছেন। খন্দকের যুদ্ধেও খন্দক খোঁড়ার আইডিয়া তিনিই দিয়েছিলেন। তাঁকে কেউ বাবার নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন আমার নাম ‘সালমান ইবনে ইসলাম’। কারণ, তাঁর বাবা অগ্নিপূজারি হওয়ায় তিনি বাবার পরিচয় উল্লেখ করতেন না।

এ পর্যায়ে বুখারী শরীফ প্রথম খন্ডের শেষ হাদীসের ব্যাখ্যা করে আল্লামা শেখ আহমদ বলেন, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত মাঝখানে আল্লাহ তাআলা আর কোন নবী পাঠাননি। এখানে ব্যবধান হল ৫৭০ এর ব্যবধান। এখানে হাদীসের বর্ণনাকারী ভাঙ্গা শতাব্দির উল্লেখ না করে ছয়শত বছর বলেছেন। আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে এই ব্যবধানের মতো এত বড় ব্যবধান আর হয়নি। কারণ, এর আগে ঘন ঘন নবী পাঠাতেন। এমনকি একই সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক নবীও দ্বীনি দাওয়াতের কাজ করেছেন।

হাদীসের ব্যাখ্যা শেষে আল্লামা শেখ আহমদ বুখারী শরীফের গুরুত্ব বর্ণনা করে বলেন, পবিত্র কুরআনুল কারীমের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাব বুখারী শরীফ; যা পৃথিবীব্যাপী প্রসিদ্ধ।

তিনি বলেন, বুখারী শরীফের মাঝে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জবানে বর্ণিত সহীহ হাদীসসমূহ জমা করেছেন শায়খ ইসমাঈল বুখারী রাহ.। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারীম। আর কুরআনুল কারীম শুধু আলফাজের (শব্দ) নামই না, বরং আলফাজ এবং অর্থের সমন্বয়ের নাম কুরআনুল কারীম।

আল্লামা শেখ আহমদ বলেন, যেসব শব্দ ও ব্যাক্যাবলী আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত জিবরাঈল আ.কে বলেছেন, জিবরাঈল আলাইহিস সালাম প্রিয় নবী সা. এর কাছে সেভাবেই নিয়ে এসেছেন। এরপর সে শব্দই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে বর্ণনা করেছেন। এর মাঝে কোনো পরিবর্তন পরিবর্ধন হয়নি। এটাকে বলা হয় ওহীয়ে মাতলু।

তিনি বলেন, যেভাবে জিবরাঈল আলাইহিস সালাম থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনেছেন, যেভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাহাবায়ে কেরাম শুনেছেন। যেভাবে সাহাবা থেকে তাবেয়ী শুনেছেন। যেভাবে তাবেয়ী থেকে তাবে-তাবেয়ীন শুনেছেন।

এভাবে প্রায় ২০০ বছর পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা ধারাক্রমে মাহফুজ রেখেছেন। এরপর কিতাব আকারে মাহফুজ হয়। যার ফলে প্রায় ১৪শ বছর অতিক্রম করে ফেলেছে। কিন্তু প্রিয় নবী কীভাবে ঘুমাতেন, ঘুমানোর সময় কি করতেন, কী কাজ করে ঘুমাতেন, ঘুমানোর পরে কী করতেন, ঘুম থেকে কি বলে উঠতেন, কীভাবে ঘুম থেকে উঠতেন; এসব কিছু সবিস্তারে আমাদের সামনে চলে এসেছে।

সবশেষে তিনি বলেন, যে যতবেশী কুরআন তেলাওয়াত করবেন, তিনি তত বেশি আল্লাহর নৈকট্যলাভ করবেন। মৃত্যুর পর জান্নাত মিলবে। কেয়ামাতের দিন রাব্বুল আলামীন বলবেন, তুমি কুরআন পড়তে থাকো। যেখানে গিয়ে তোমার কুরআন পড়া শেষ হবে, সেখানেই তোমার জান্নাত। সবশেষে তিনি আকাবিরে দেওবন্দের নকশে কদমের উপর চলার জন্য তরুণ আলেমদেরকে উপদেশ দেন।

দরস ও হিদায়াতী বয়ান শেষে শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমদ বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন। মুনাজাতে তিনি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে জাতিকে রক্ষায় মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করেন। বিশ্বের মজলুম মুসলমানদের জন্য দোয়া করেন। বিশেষভাবে ফিলিস্তিন, আরাকান, দিল্লিসহ ভারতের নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য দোয়া করেন।

দাওরায়ে হাদীসের তরুণ আলেমদের ইলম ও আমলের উন্নতি এবং দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও দ্বীনি খিদমতের তওফিকের জন্য বিশেষ দোয়া করেন। এ সময় পুরো দারুল হাদীস মিলনায়তন জুড়ে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। গ্রন্থনায়- মুনির আহমদ

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ