নুরুদ্দীন তাসলিম।।
গতকাল শুক্রবার ( ২১ জানুয়ারি) সকালে হঠাৎ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুই সপ্তাহের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এরই সঙ্গে আরো পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
হঠাৎ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণ হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রী ড. দিপু মনি জানান, শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের সঙ্গে কথা বলে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা অফিসারের কার্যালয় খোলা থাকবে, সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চলবে। এবং শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম চালু থাকবে বলে জানিয়েছেন ডক্টর দীপু মনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে দীপু মনি বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেরা সিদ্ধান্ত নেবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে হল খোলা থাকবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কথা বলা হলেও কোথাও মাদ্রাসা অথবা কওমি মাদ্রাসা বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। এ কারণে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকেই মাদ্রাসা খোলা থাকবে কিনা বন্ধ নিয়ে বেশ আলোচনা ও গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে কওমি মাদ্রাসার কেন্দ্রীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন বেফাক সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র বলছে, যেহেতু স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দুই সপ্তাহ পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা কিংবা বন্ধ রাখার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে, তাই এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে।
‘এর আগে করোনা পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিষয়টি যখনই সামনে এসেছে প্রত্যেকবারই কওমি মাদ্রাসা বন্ধ অথবা খোলা খোলার বিষয়টি প্রজ্ঞাপনে ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু যেহেতু এবার শুধু স্কুল-কলেজের কথা বলা হয়েছে এখানে কওমি মাদরাসার কথা আলাদাভাবে বলা হয়নি তাই আপাতত মাদরাসা আগেহর মতই চলতে পারে’ বলে মতামত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এছাড়া সূত্র বলছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল চালু রাখা হয়েছে। যেহেতু মাদ্রাসাগুলোতেও আবাসিক ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীরা সবসময় পড়াশোনায় থাকে, তাই আবাসিক ব্যবস্থাপনার কারণে স্বভাতই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাদরাসা খোলা থাকার কথা। এখানে সংক্রমণ বৃদ্ধির খুব একটা আশঙ্কা নেই বলেও জানিয়েছে সূত্র।
এ বিষয়ে বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গহরডাঙ্গা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মুফতি রুহুল আমিন প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘আমরা ইতো মধ্যেই শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। এছাড়া আমাদের শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘন্টা যেভাবে মাদ্রাসার ভিতরে থাকে এটাকে পুরোপুরি কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থায় বলা যায়। তাই শিক্ষার্থীরা এখানে নিরাপদ থাকবেন।
তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে যেহেতু স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি তাই কওমি মাদ্রাসাগুলো চালু থাকবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখে অবস্থা খারাপ হলে তখন অবশ্যই মাদ্রাসা বন্ধের কথা জানানো হবে’।
এদিকে জাতীয় দ্বীনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব ও হাইয়াতুল উলইয়ার সদস্য মুফতি মোহাম্মদ আলী আওয়ার ইসলামকে বলেছেন, বিগত কয়েক বার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ক্ষেত্রে মাদ্রাসার বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছিল। এমনকি সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়ও মন্ত্রণালয়ের অনুমতিতে মাদরাসাগুলেঅ বন্ধ ছিল। কিন্তু এবার মাদ্রাসার বিষয়টি আলাদাভাবে করা হয়নি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই মাদ্রাসার ক্লাস চালু থাকবে, পরবর্তীতে এ বিষয়ে কোনো প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে বোর্ডের দায়িত্বশীলরা তা জানিয়ে দিবেন।
একই কথা বলেছেন সিলেট আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তালিম বাংলাদেশ-এর মহাসচিব ও হাইয়াতুল উলইয়া সদস্য মাওলানা আব্দুল বছির।
তিনি আওয়ার ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিচলিত হওয়ার মতো কিছু দেখছি না আমি, কারণ মাদ্রাসাগুলো স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান এবং মাদরাসা বন্ধের বিষয়ে আলাদাভাবে কিছু বলাই হয়নি এবার। এছাড়া বোর্ডের দায়িত্বশীলরা এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করছেন, যদি বন্ধ করার মত পরিস্থিতি হতো তাহলে প্রত্যেকটি বোর্ড এটা জানিয়ে দিতেন’।
এদিকে বোর্ডে সংশ্লিষ্ট আরো অনেকে বলেছেন, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ ৫ নির্দেশনায় ১০০ জন পর্যন্ত জমায়েতের কথা বলা হয়েছে। তাই মাদ্রাসাগুলোতে প্রত্যেক ক্লাসে ১০০ জন অথবা এর কম শিক্ষার্থী থাকতে পারে। আবার কোন কোন মাদ্রাসায় ক্লাসে ১০০ জন পর্যন্ত ছাত্রও থাকে না, তাই বিষয়টি নিয়ে খুব একটা সমস্যা হবে না বলে মন্তব্য তাদের।
কওমি মাদরাসাগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন, হঠাৎ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা এবং বন্ধের কারণে তাদের যাতায়াতে সমস্যার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেছেন অনেকে।
এটি / এনটি