নুরুদ্দীন তাসলিম।।
দেশের মূল ধারার ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে সাধারণ বিদ্যালয়গুলোকে পড়াশোনা করেন প্রায় ৯০ ভাগ বা এরথেকেও বেশি মুসলিম শিক্ষার্থী। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় সাক্ষরতা রাখলেও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইসলামী মূল্যবোধের যেই শিক্ষা দেওয়া হয় এই শিক্ষার্থীরা সে বিষয়ে একেবারেই পিছিয়ে। বলতে গেলে প্রয়োজনীয় দ্বীনি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত তারা। পারিবারিক ও নিজস্ব প্রচেষ্টায় কেউ কেউ কোরআন শরিফসহ কিছু মাসায়েল সম্পর্কে অল্পবিস্তর জানলেও প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নেই তাদের জানা শোনা। তাই জীবনঘনিষ্ঠ ইসলামী বিষয়াদিতে ত্রুটি থেকে যায় অনেক ক্ষেত্রে।
বিপুল সংখ্যক মুসলিম শিক্ষার্থীর দ্বীনি শিক্ষার অভাব দূর করতে ইতোমধ্যে সময়ে সময়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের একত্র করে দ্বীনের গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা করা, ছুটির সময়ে সংক্ষিপ্ত কোর্সের ব্যবস্থা করা, নৈশ মাদরাসা ও বছরব্যাপী খণ্ডকালীন (সপ্তাহের যে কোনো ২/৩ দিন ২/৩ ঘণ্টার) দ্বীনি শিক্ষার কোর্স চালু করতে দেখা যাচ্ছে উলামায়ে কেরামকে। তবে এই উদ্যোগগুলোর প্রায় সব ক’টিই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। এর বিস্তৃতিও ঘটেনি সেভাবে।
রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত দারুর রাশাদ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মদ সালমান বলেছেন, পরিস্থিতির কারণে এবারের শিক্ষার্থীরা স্বভাবতই খুব একটা বেশি সময় পাবে না, তাই কোরআন শিক্ষার বিভিন্ন কোর্স, দীনিয়াত কোর্সেগুলোতে তারা সময় লাগাতে পারেন। এবার তারা যে ছিুটি পাবেন এ সময়ে পুরো চিল্লা দেওয়া সম্ভব নয় তাই যতটুকু সম্ভব তারা দশ দিন, সাত দিন, তিন দিন অথবা ২৪ ঘন্টা এমন সময় দিতে পারে তাবলীগে।
শিক্ষার্থীদের দ্বীনমুখী করতে বিভিন্ন মাদ্রাসার পক্ষ থেকে দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী কোর্সের আয়োজনের বিষয়েও চিন্তা ভাবনা করা যেতে পারে বলে মতামত দিয়েছেন তিনি।
স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে ইসলামী জ্ঞানের যে কমতি রয়েছে দ্বীনি পরিবেশে সময় কাটানোর মাধ্যমে তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব; তাই শিক্ষার্থীদের ছুটির সময় নিয়ে অভিভাবকদেরও চিন্তা ভাবনা করা ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করেন চিন্তাবিদ আলেমগণ।
রাজধানীর শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার-এর মহাপরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ বলেছেন, ‘ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি জাগতিক শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে ইসলাম। তবে জাগতিক শিক্ষার সঙ্গে প্রয়োজনীয় ইসলামী জ্ঞান থাকাও সবার জন্য জরুরী’।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দেশে সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেভাবে শিক্ষা কারিকুলাম সাজানো হয়েছে এতে প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষার প্রাধান্য নেই, তাই শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষা সিলেবাস-এর মধ্য থেকেই ধর্মীয় প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো শেখার জন্য সময় বের করে নিতে হবে’।
প্রথমে শিক্ষার্থীকে ও তার অভিভাবককে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করতে হবে। তারা এ বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে পরবর্তীতে তাদের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করা সহজ হবে বলে মতামত দিয়েছেন এই ইসলামী চিন্তাবিদ।
সাধারণ শিক্ষিতদের দ্বীনমুখী করতে ওলামায়ে কেরামেরও গুরু দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ।
তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম আকাবিরীন মানুষকে দ্বীনমুখী করতে যেভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন, বর্তমান আলেমসমাজকেও এভাবেই কাজ করতে হবে।
‘বর্তমানে অনলাইনে সাধারণ শিক্ষিতদের দ্বীন শিক্ষার জন্য বিভিন্ন কোর্স শুরু হয়েছে, এগুলোতে আলেমদের সময় দেওয়া প্রয়োজন’।
‘এছাড়া জুমার বয়ানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিশেষ আলোচনা করা যাতে করে শিক্ষার্থী এবং তাদের বাবা-মা সবাই দ্বীনি শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি অনুভব করে’।
‘বিভিন্ন মাদ্রাসা রয়েছে যেখানে জেনারেল শিক্ষিতদের জন্য পার্ট টাইম দ্বীনি শিক্ষার শর্ট কোর্স-এর আয়োজন করা হয়েছে। এসবের ব্যাপক প্রচার-প্রসার করা। এবং সময়সীমা জেনারেল শিক্ষিতদের জানিয়ে দেওয়া যাতে করে সহজেই তারা অবসরে দ্বীনি শিক্ষার জন্য সময় বের করতে পারেন’।
এছাড়া দাওয়াত তাবলীগের মেহনত এর সাথে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমেও তাদের ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা যেতে পারে বলে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
‘এতে করে পরীক্ষার পরের ছুটিতে তারা চিল্লাসহ তাবলীগে বিভিন্নভাবে সময় দিতে পারবেন। প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষাও শিখতে পারবেন, দ্বীনি পরিবেশে থাকতেও পারবেন। দ্বীনের প্রচার-প্রসারের স্বার্থে এমনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ বলে মতামত দিয়েছেন মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ।
এছাড়া যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো সাধারণ শিক্ষিতদের জন্য দ্বীনি কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়নি তারাও ওয়ারাসাতুল আম্বিয়া হিসেবে এমন উদ্যোগ নিতে পারেন যাতে করে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতরা প্রয়োজনীয় ইসলামি জ্ঞান অর্জন করতে পারে।
গোপালগঞ্জের গহরডাঙ্গায় প্রায় তিন দশক ধরে এসএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য কোরআন শিক্ষা কোর্স-এর আয়োজন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরও কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
এনটি