মনজুর সা'দ।।
ইসলামী ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ খুব সুন্দর একটি উপন্যাস। মুসলমান ভাই-বোন সকলেরই পড়া উচিত। মোড়ে মোড়ে টুইস্ট। হাস্যরস। রোমাঞ্চ। সবমিলিয়ে অসাধারণ একটি উপন্যাস। ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার হিসেবে তিনি এই সময়ের জনপ্রিয় ও পাঠকপ্রিয় মানুষ।
লেখকের অনবদ্য ও সুখপাঠ্য আরও চারটি উপন্যাস রয়েছে। সবগুলোই আমি পড়েছি। আঁধার মানবী, একটি লাল নোটবুক, শেষ চিঠি ও পুণ্যময়ী। এই বইগুলোর অবস্থান এখন পাঠকপ্রিয়তার সর্বোচ্চ শিখরে।
লেখনীর মাধ্যমে তিনি সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটে তোলার চেষ্টা করেছেন এবং ডিভাইসের প্রতি আসক্ত যুবসমাজকে গল্পে গল্পে তুলে এনেছেন বইপাঠের জগতে।
মানুষ আজ বড্ড পেরেশান। কোথায় পাবে সে একটু পরিত্রাণ? নগ্নতা, অশ্লীলতা ও চারিত্রিক অবক্ষয় এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সমাজের সবচেয়ে ভালো মানুষটিও আজ নিজের ব্যাপারে সন্দিহান যে, কখন কোন গর্তে সে পা পিছলে পড়ে!
বইটি পড়ে আমি শুধু মুগ্ধই হই নি। রীতিমতো অবাকও হয়েছি বটে। এতো সুন্দর জীবন। এতো সুন্দর চরিত্র। লেখক কীভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন! লেখক মাহিন মাহমুদ আমার বড়ো ভাই, আমার লেখাতো ভাই, আমার প্রিয় একজন মানুষ। যাঁর প্রতিটি লেখা আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। এই বইটি লেখার পেছনে লেখকের অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। কতো বিনিদ্র রজনী তিনি যাপন করেছেন তা আল্লাহ মাবুদই ভালো জানেন।
দুই.
আদি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বিরাট বড়লোকের ছেলে। দ্বীনে আসার পর বাবার অবৈধ আয়-উপার্জন তাকে আর চুপ থাকতে দেয় না। প্রতিবাদ করে। তখনই ঘটে বিপত্তি। বাবার প্রাসাদোপম বাড়ি থেকে তাকে বিতাড়িত হতে হয়। প্রাসাদ ছেড়ে এসে, অতি সাধারণ একটা মেসে শুরু হয় আদি’র সাদাসিধে জীবন। যে জীবনে প্রাচুর্য নেই; কিন্তু হৃদয়ভরা প্রশান্তি আছে। আছে স্রষ্টাকে নিয়ে ভাবার অফুরন্ত উপকরণ
•‘আদি’ আমাদের গল্পের মূল ভাবনা হলেও, ইমাম সাহেবই যেন ছড়িয়ে আছেন এই গল্পের ‘অন্তে’। ইমাম সাহেবকে খুঁজতে গিয়ে ঘটতে থাকে নানান বিচিত্র ঘটনা! একে একে সামনে আসতে থাকে চরম কিছু বাস্তবতা। কে এই ইমাম!
•ট্রেনে আদির সঙ্গে পরিচয় হয় একজন বই-বালকের। স্মার্টফোনের এই যুগেও বইয়ের পাতায় ডুবে থাকাই যার নেশা। এই নেশার আড়ালে তার অন্য কোনো পেশা নেই তো!…কে এই বালক!
•আদির ব্যাগ চুরি হয় ট্রেনেই। ব্যাগে ছিল জরুরি কিছু কাগজপত্র আর নগদ টাকা। ব্যাগ হাতিয়ে নেওয়াই চোরের উদ্দেশ্য ছিল না। তাহলে উদ্দেশ্যটা কী!
কিছু বিভ্রাট। কিছু রোমাঞ্চ। অনেক রহস্য। আর, কিছু চরম সত্যের মুখোমুখি নিয়ে দাঁড় করাবে পাঠককে। রহস্যের গণ্ডি টপকাতে হলে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে।
বইটির প্রতিটি পাতায় পাতায় আমি হারিয়ে গিয়েছি। এই সমাজে মানুষের অভাব নেই, কিন্তু ভালো মানুষের বড়োই অভাব। বইটি শেষ করার পর আমার বারবার ইচ্ছে জেগেছে , আমিও যদি আদি হতে পারতাম। প্রাসাদ ছেড়ে কুঁড়েঘরে একটু শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারতাম। শেষ রাতে প্রভুর দুয়ারে সিজদায় আমার আত্মা ঠান্ডা করতে পারতাম। আমি প্রাসাদপুত্র হতে চাই না, আমি আদির মতো সৎ এবং ভালো মানুষ হতে চাই।
একজন আদর্শ মানুষ হওয়ার জন্য আমি মনে করি, এই একখানা বই-ই যথেষ্ট। প্রতিটি মানুষের জীবন অমূল্য রত্ন। নিজেকে কল্পনার রাজ্যে চালান করে আমি হারিয়ে গেছি “প্রাসাদপুত্রের” কোমল পাপড়িতে। আমার চিন্তার জগতে ওসায়াত দান করেছে।
এতো সুন্দর জীবনও যে কারোর হই সেটা আমি জানতাম না। যদি আমি এই বইটি না পড়তাম বুঝতেই পারতাম না।
আমার কাছে ‘প্রাসাদপুত্র’ বইটি একটা ম্যাসেজ। যেটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। ইশ,আমার যদি প্রচুর পরিমান অর্থ কুড়ি থাকতো তাহলে এই বইটি আমি পৃথিবীর সকল প্রাসাদপুত্রদের হাতে তুলে দিয়ে বলতাম,হে প্রাসাদপুত্র, দুনিয়ার এই সামান্য প্রাসাদ ছেড়ে চলে এসো, আখেরাতের সুউচ্চ প্রাসাদের দিকে...
বই: প্রাসাদপুত্র
লেখক : মাহিন মাহমুদ
প্রকাশনী: মাকতাবাতুল হাসান
লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া শারইয়্যাহ, মালিবাগ।
-এএ