আব্দুল আহাদ
শিক্ষার্থী,হাটহাজারী মাদ্রাসা।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই যে,পবিত্র কুরআনের পরে ইসলামের দ্বিতীয় উৎস হল-রাসুল স. এর পবিত্র হাদীস। মূলত কিতাবুল্লাহ ও হাদীসে রাসুল স.দ্বীনে ইসলামের মূলভিত্তি।
এ দুয়ের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করা অর্থাৎ এ কথা বলা যে, কুরআনই দ্বীনের একমাত্র ভিত্তি, যা ইসলামের সাথে চরম শত্রুতা বৈ কিছুই নয়। অতএব,হাদীস ব্যতিত শুধু কুরআন দ্বারা ইসলামের পূর্ণরূপ বিকশিত হতে পারে না। উম্মতের ঐক্যমতে কুরআনই হল ইসলামের মূলভিত্তি এবং পূর্ণাঙ্গ সংবিধান;কিন্তু তা হল একটি সংক্ষিপ্ত কিতাব,যার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়। আর রাসুল স. হলেন এর ব্যাখ্যাকার এবং তাঁর কর্মবহুল জীবন হল এই কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। যেমনঃ আল্লাহ তা'লা বলেন, و أنزلناإليك الذكرلتبين للناس ما نزل إليهم ولعلهم يتفكرون
অর্থ: আমি এই কুরআন আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি,যাতে মানুষের প্রতি অবতীর্ণ বিষয় গুলো আপনি সঠিকভাবে স্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করে দিতে পারেন।(সূরা নাহল-৪৪)
কুরআনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন না থাকলে আল্লাহ তার প্রিয় নবীর উপর এই দায়িত্ব অর্পন করতেন না। প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম আওযায়ী রহ.(মৃ.১৫৭ হি:) তিনি বলেন-হাদীস কুরআনের প্রতি ততটা মুখাপেক্ষী নয়,কুরআন যে পরিমাণের মুখাপেক্ষী হাদীসের প্রতি।(তালিকুস সাবীহ)
অর্থাৎ কুরআনের মর্ম অনুধাবনের জন্যে হাদীসের সাহায্য নেয়া ছাড়া কোন গন্তব্যই নেই। যেমন গৃহ নির্মাণের জন্যে শুধু ঘরের ম্যাপ সামনে থাকলেই হয় না;বরং পদে পদে ইঞ্জিনিয়ারের নির্দেশনার প্রয়োজন হয়।
তেমনি ইসলামের ইমারাতও শুধু কুরআন দ্বারা পূর্ণতা লাভ করতে পারে না,বরং এতে রিসালাতের হিদায়াতও আবশ্যকীয়। আর এতেই নিহিত রয়েছে খোদা তালার অসংখ্য হিকমত ও রহস্য। হাদীস ও সুন্নাতের গুনে ইলমুল ফিকহ তথা ইসলামী আইন শাস্ত্র এমন বিশ্বজনীনতা লাভ করেছে,যার উদাহরণ বিগত ও বর্তমান যুগের কোন শাস্ত্রে পাওয়া যায় না। তারপরও এটা মনে রাখতে হবে যে, রাসুল স. এর বাণী,কর্ম তথা তার পবিত্র জীবনাদর্শ ব্যতীত কারো পক্ষে সত্যিকারের মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়।
যেমন,তাওহিদের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হল নামাজ। কুরআনের বহু জায়গায় নামাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে কিন্তু এর বিস্তারিত নিয়ম-কানুন কোথাও পাওয়া যায় না। তাই এগুলোর নিয়ম-কানুন জানার জন্যে হাদীসে নববীর প্রয়োজন হয়। অনুরূপ যাকাতের কথা পবিত্র কুরআনে বারংবার বর্ণিত হলেও ইহার নেসাব ও বন্টনের সকল পদ্ধতি আহাদিসে নববীতেই বিস্তারিত আকারে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রনীতি ও সমাজনীতি বিশেষ করে এখানে উল্লেখ্য। কারণ আল্লাহর খিলাফাত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই জমিনে মানুষের আগমন,কিন্তু খেলাফত প্রতিষ্ঠার পন্থা কি হবে? আইনের রূপরেখা কি হবে? প্রশাসনিক ক্ষমতার সীমা-পরিসীমা কী?
শাসক ও শাসিতের পরস্পর সম্পর্ক হবে কোন ধরনের? ইত্যকার আরো বহু প্রশ্ন আছে যেগুলির মৌলিক আলোচনা পবিত্র কুরআনে থাকলেও তাফসিলি কোন আলোচনা কুরআনে নেই। হ্যাঁ! তার আলোচনা রয়েছে হাদীসে নববীতে। অতএব হাদীসে নববীর গুরুত্ব দ্বীনে ইসলামে কতটুকু! তা বলার অপেক্ষা রাখে না, বরং এ বিষয়ে চোখ বন্ধ করেই বলি- পবিত্র কুরআনের পরেই হাদীসের অবস্থান। আর হাদীসই হল শরীয়তের উৎসগত দ্বিতীয় দলীল। ইহার অস্বীকারকারী, অমান্যকারী নিঃসন্দেহে কাফের। অতএব হাদীসের অবস্থান ইসলামী শরীয়তে কতটুকু তা একজন মুসলিমের কাছে সূর্যের মত স্পষ্ট। কিন্তু তা বুঝতে হলে,পড়তে হলে,বিশ্লেষণ করতে হলে তারই আবশ্যকীয় কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে যেগুলোকে বিজ্ঞজনের মতে ইলমে হাদীস বলে।
ইলমে হাদীসের পরিচয়ঃ আল্লামা হাফেজ বদরুদ্দীন আইনী রহ.(মৃঃ ৮৫৫ হি.) তিনি বলেন- যে শাস্ত্র অধ্যায়ন করলে রাসুল স. এর বাণী,কাজ ও অবস্থাদী সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়, তাকে ইলমে হাদীস বলে। (উমদাতুল কারী-১/১১)
ইলমে হাদীস দুই প্রকার: ক. علم الحديث بالرواية খ. علم الحديث بالدراية ১. যে শাস্ত্র অধ্যায়ন করলে রাসুল স. এর কথা ও কাজের বর্ণনা এবং বর্ণনাগুলোর মূলপাঠ ও মূলপাঠের শব্দ লেখনরীতি সম্পর্কে অবগত হওয়া যায় তাকে علم الحديث بالرواية বলে।
২. আর যে ইলম দ্বারা বর্ণনার বাস্তবতা, শর্তাবলী, প্রকারভেদ,রাবীর অবস্থা, রাবীর শর্তসমূহ,বর্ণনার প্রকারগুলো ও এ সম্পর্কীয় অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়,তাকে علم الحديث بالدراية বলে।(ইবনুল আকফানী রহ.) আল্লামা ইযযুদ্দীন ইবনু জামায়া রহ.(মৃ. ৭৬৭ হি.)
বলেনঃ علم الحديث بالدراية এটি এমন কতগুলি মূলনীতি ও নিয়মের নাম,যার দ্বারা হাদীসের মতন ও সনদের অবস্থা জানা যায়।(কাওয়াইদুত তাহদীস-১/২৮)
ইলমে হাদীসের গুরুত্বঃ আল্লামা ইবনুস সালাহ রহ.(মৃ. ৬৪৩ হি.) বলেন-ইলমে হাদীস হল সকল জ্ঞানের মধ্যে সর্বোত্তম জ্ঞান। এবং উপকারী বিষয় সমূহের মধ্যে সর্বাধিক উপযোগী।
এই জ্ঞানকে কেবলমাত্র উম্মতের বিজ্ঞজনরাই পছন্দ করে। আর নিম্নশ্রেণীর লোকেরাই অপছন্দ করে। এটি এমন একটি জ্ঞান যা ফুনুনাতের মধ্যে সর্বাধিক প্রবেশকারী। বিশেষ করে তা ফেকাহশাস্ত্রে মানুষের চক্ষুদৃষ্টির ন্যায় ভূমিকা রাখে।(উলূমুল হাদীস-৫)
ইমামুযযামান আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহ. (মৃ. ৮৫২ হি.) বলেন -তামাম উলুম এর মধ্যে প্রধান যে তিনটি ইলিম রয়েছে (হাদীস,তাফসীর,ফেকাহ) তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই এটির অসামান্য ভূমিকা রয়েছে।
যেমনঃ হাদিসের ক্ষেত্রে তো আর বলারই প্রয়োজন নেই। আর দ্বিতীয়ত হল-তাফসীর, এ বিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ কথা হল আল্লাহর কালাম সর্বপ্রথম যে বিষয়সমূহের মাধ্যমে তা'বীর করা হয় তা হল আহাদীসে নাবাবীয়্যাহ। আর এ ক্ষেত্রে অর্থাৎ আহাদীসের ক্ষেত্রে তার প্রমাণিকতা ও মান নির্ণয়ের জন্য দর্শকের প্রয়োজন,যে নাকি শাস্ত্রজ্ঞান সম্বন্ধে পারদর্শী হতে হবে।
কারণ শাস্ত্রজ্ঞান ছাড়া হাদীসের মান নির্ণয় করা অসম্ভব। তৃতীয়ত হল ফেক্বাহ, এ বিষয়ে সম্মানিত ফক্বিহ ও মুফতি মহোদয় দলীল দিতে হলেই নবীজী স. থেকে প্রমাণিত ও মানগত দিক দিয়ে উন্নত হাদীসই পেশ করতে হবে,নতুবা তা জনসম্মুখে প্রত্যাখ্যাত সাব্যস্ত হবে। আর এমন কাজ ইলমে হাদীস সম্পর্কীয় জ্ঞান ছাড়া অসম্ভব।(النكت الوفية ١/٢٢٧)
এছাড়া হাফিজ ইরাকী রহ.(মৃ. ৭২৫ হি.) তিনি বলেন-ইলমে হাদীস একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষরিত বিষয়,যার রয়েছে অসীম উপযোগীতা,এবং ইহার উপরই অধিকাংশ বিধানাবলীর নির্ভরতা। পাশাপাশি এই জ্ঞানের মাধ্যমে হালাল-হারাম ও ওয়াজিবাত জানা যায়। (التبصرة والتذكرة ١/٩٧)
অতএব বলা যায় যে,সমস্ত জ্ঞান এর মধ্যে ইলমে হাদীস আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ট। কারণ ইহার দ্বারাই পবিত্র কালামের সঠিক মর্ম জানা যায়, এবং নবীজি স. এর অবস্থা, তাঁর চরিত্র সম্পর্কেও অবগত হওয়া যায়।
ইলমে হাদীসের প্রয়োজনীয়তা : ইলমে হাদীসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম, নিম্নে এর কিছু দিক তুলে ধরা হচ্ছে, ১. ইলমে হাদীসের মাধ্যমেই দ্বীনে ইসলামকে কোনরকম তাহরিফ তথা বিকৃতি ও তাবদিল থেকে সংরক্ষণ করা সম্ভব। কেননা সালিহীনরা হাদিসে নববীকে সনদ(সূত্র) সহ বর্ণনা করেছেন। আর যদি এ ইলিম না হত;তাহলে সহীহ হাদীস জয়ীফ ও মাওযু হাদীসের সাথে মিলে যেত আর তখন নবীজী স. এর কথা অন্যের কথার সাথে গোলযোগপূর্ণ হয়ে যেত।
২. এটি এমন একটি ইলম যা সেই পদ্ধতিকে স্পষ্ট করেছে যা মুতাকাদ্দিম উলামায়ে কেরাম হাদীস প্রমাণ করার জন্য অনুসরণ করেছিলেন এবং অনুপ্রবেশ কারী থেকে এটিকে শুদ্ধ করেছিলেন।
৩. এই ইলমের নিয়মাবলিই বিশ্ববাসীর মধ্যে যারা হাদীস বর্ণনা করতে তাসাহুল তথা নমনিয়তা প্রদর্শন করে তাদের উপর পতিত হওয়া বড় বিপদ থেকে তাদেরকে রক্ষা করেছে। যেমনঃ নবীজী স. বলেন, من كذب علي متعمدا فليتبوأ مقعده من النار ( صحيح المسلم ) অর্থাৎ যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার উপর মিথ্যা কথা বলে সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা বানিয়ে নেয়।
৪. এ ইলম খারাবী ও অনিষ্টতা থেকে ব্যক্তির মেধাকে হেফাজত করে। কেননা প্রাচ্যবিদ ও ইসরায়েল সম্প্রদায় তাফসির ও হাদীসের মধ্যে যে সমস্ত প্রত্যাখ্যাত, মিথ্যা কথা ও নিছক ঝুট ঘটনাবলী প্রবেশ করে দিয়েছে তা কেবল ইলমে হাদীসের মাধ্যমেই নির্ণয় করা সম্ভব। কেননা সিলসিলাতুর রিজালের সংরক্ষণ কেবল ইলমে হাদীসের গন্ডিতেই রয়েছে, যা সহজেই কোন জ্ঞানের সত্য-মিথ্যা যাচাই করে দেয়।
৫. এই জ্ঞান গবেষকদের পাঠ্যপুস্তকের অর্থ অনুসন্ধান করার এবং তাদের বিষয়াবলি বোঝার পথ খুলে দেয়। পাশাপাশি কোন নসের সত্যতা বা মিথ্যা সহজেই বর্ণনা করে দেয়।
অতএব উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা গেল ইলমে হাদীসের প্রয়োজনীয়তা কি পরিমাণ বিশাল!
অতএব পাঠক বন্ধুকে বলি, হে প্রিয়! একটু চিন্তা করে দেখো যদি ইলমে হাদীস না হত তাহলে কি এসব ইলম উদঘাটন করা সম্ভব হত? না,কখনই হত না।
হামিলিনে ইলমে হাদীসের মর্যাদা: যারা এই ইলিম ধারণ করে এবং তা শেখা ও শেখানোর কাজে নিয়োজিত থাকে,তারা আলেমদের কাছে অধিক সম্মানের পাত্র হয়। এ থেকেও উনাদের বড় পরিচয় হলো,তারা হাদিসের একেকজন ধারক ও বাহক। এছাড়াও পরকালে হাদিসের বাহকের মর্যাদা সবার উপরে হবে।কারণ আল্লাহ তা'লা বলেন, يوم ندعو كل أناس بإمامهم অর্থাৎ বিচার দিবসে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার সরদার সহ ডাকবো। (٧١- الإسراء)
আর একথা স্পষ্ট যে, আহলে হাদীস তথা হাদিসের জামাতদের সরদার হলেন স্বয়ং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অতএব বিচার দিবসে তাদেরকে নবীজী সাঃ এর নাম সহ আহ্বান করা হবে। হায়! ঐদিন তাদের কতইনা ইজ্জতের হবে!
ইমাম সুফিয়ান বিন উয়াইনা রহ.(মৃ. ১৯৮ হি.) তিনি বলেন -বিচার দিবসে হাদিসের লোকদের (হাদিসের ধারক-বাহক) চেহারা আলোকিত ও উজ্জ্বল থাকবে। মু'জামুল আওসাত লিততাবারানীতে আছে, হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اللهم ارحم خلفاءنا, قلنا يا رسول الله! وما خلفاء كم? قال الذين ياتون من بعدي يروون احادثي و سنتي و يعلمون الناس
অর্থ: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি দোয়ারত অবস্থায় বলছেন, হে আল্লাহ! আপনি আমার খলিফাদের প্রতি রহম প্রদর্শিত হন। তখন আমরা বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আপনার খলিফা কারা? তিনি বললেন,যারা আমার পরবর্তীতে এসেও হাদীস ও সুন্নাহ বর্ণনার কাজ আঞ্জাম দিবে এবং মানুষদেরকে তা শিক্ষা দেবে।
জনৈক কবি আহলে হাদীসদের নিয়ে খুব চমৎকারই বলেছেন,
اهل الحديث هم اهل النبي ؓ وان
لم يصحبوا نفسه انفاسه صحبوا
হাদিস চর্চাকারীরাই রাসুল স.এর পরিবারভুক্ত। তারা তাঁর সংশ্রব লাভ করতে না পারলেও তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাসের সংশ্রবে ধন্য হয়েছেন। ইমাম আবু ইসহাক ইবরাহিম বিন আব্দুল কাদির রাহ. বলেন, اهل الحديث طويله اعمالهم وجوههم بدعاء النبي صلى الله عليه وسلم منضرة
অর্থাৎ হাদীসের চর্চাকারীদের আয়ু দীর্ঘায়িত হয় এবং নবীজি স. এর আশির্বাদে তাদের চেহারা হয় তরতাজা, আলোকময়।(الرسالة المستطرفة )
বর্তমান যুগে আমাদের অবস্থা : ইলমে হাদীসের এই মহান গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান যুগে আমাদের অবস্থা ইলমে হাদীসের ক্ষেত্রে খুবই দুঃখজনক।
কেননা আমাদের অধিকাংশ ছাত্রভাই বর্তমান যুগে হাদীস মুখস্ত করা,সনদ মুখস্ত করা এবং রাবীদের হালাত নিয়ে দিরাসা করা বা হাদীসের দূর্লভ শব্দমালা মুখস্থ করা বা হাদীসের ইল্লত, জারাহ-তা'দীল,তাখারিজ,হাদীস তাসহিহ,তাজয়িফ ও তাহসিন ইত্যাদি নিয়ে দিরাসা করার প্রতি ন্যূনতম গুরুত্ব দেয় না । এমনকি এগুলো যে আবশ্যকীয় কিছু বিষয় তা বোধ হয় তাদের ধারনাই নাই।
এ জন্য আমাদের ছাত্রদের পড়াশোনার মধ্যে অধিকাংশ উসলুব ফাহমি গালাত হয়ে থাকে। অন্যদিকে খুবই দুঃখজনক হলেও সত্য একটি কথা হল,আমরা যখন উস্তাদের সামনে হাদিসের ইবারত পড়ি তখন এত দ্রুত পড়ি যে,হাদীসের বর্ণ ও শব্দ পরিবর্তন হয়ে যায়,যা স্পষ্ট আদাবুল হাদীসের পরিপন্থী কাজ। ( المدخل الى علوم الحديث-١٥ )
এ জন্য চাই সঠিক সংস্কার, একটি মুসলিহ প্রজন্ম, যারা নাকি সালাফদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই দ্বীনের খেদমত করে যাবে। বিশেষ করে ইলমে হাদীসের এক বিপ্লব সৃষ্টি করবে। তারা নিজের যোগ্যতা নিয়েই সামনে আগাবে। তাদের থাকবে ফান্নি ইস্তে'দাদ।
হে পাঠক ভাই! তুমিই চেষ্টা করো!
তুমিই পারবে যুগের ইবনে হাজার,সুয়ুতি ও খাতিবে বাগদাদী হতে! তোমাকে দিয়েই এ বিপ্লব সম্ভব ইনশাআল্লাহ। এ যুগে আবারো হোক হাদিস ও ইলমে হাদীসের উত্থান। সুউচ্চ হোক ইমামে আজম,শাফেয়ী, আহমদ ও মালিক রাহিমাহুমুল্লাহ এর কন্ঠে স্মরণীয় সেই অতীতের দরসগাহ।নিমজ্জিত হোক অন্ধদের সব অপচেষ্টা। রাব্বে কারীম তোমাকে ও আমাকে আমাদের সালাফদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
-এটি