শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান ঢাকাস্থ চাঁদপুর ফোরামের সেতুবন্ধন সভা অনুষ্ঠিত অর্থবহ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয়: প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ বিস্ময়কর হাফেজ শিশুর সঙ্গে শায়খ আহমাদুল্লাহ মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর জানাযা ও দাফন সম্পন্ন

হানাফি মাযহাবের কিতাবাদিতে বেশিরভাগ সময় শাফেয়ি মাযহাবকে কেন ‘রদ’ করা হয়?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: একজন তালিবুল ইলম জানতে চেয়েছেন- ক. আমাদের ফিকহের কিতাবে বিশেষত দরসী কিতাবে আমাদের সাথে কেবল ইমাম শাফেয়ী রহ. এর মাযহাবকে মুকারানা করা হয় কেন? অন্য দুই মাযহাবের ব্যাপারে তো এমন মুকারানা করা হয় না।

খ. ছাহিবে হিদায়া ইমাম মুহাম্মাদ রহ. এর কিতাবসমূহের মধ্য থেকে ‘আল জামিউল সাগীর’-এর মতন নির্বাচন করার কোনো উদ্দেশ্যে আছে কি?

গ. আমরা বিগত মাসের ‘আলকাউসার’ পাঠ করে জানতে পারলাম- ছাহিবে হিদায়া তাঁর হিদায়াগ্রন্থে যেসব হাদীস উল্লেখ করেছেন, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সনদসহ বর্ণিত। কিন্তু মুতাকাদ্দিমীনের কিতাব বিলুপ্ত হওয়ার কারণে এর সনদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ফলে বর্তমান তাখরীজকারগণ এসব হাদীসের ব্যাপারে ‘লাম আজিদ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন।

এর থেকে আমাদের মনে যেসব সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে হুজুরের নিকট তা নিরসনের দরখাস্ত করছি- ১. আমরা জানি, আল্লাহর দ্বীন মাহফূজ। আর দ্বীন মাহফূজ হওয়ার অর্থ হল কুরআন-হাদীস মাহফুজ। আর হাদীস মাহফূজ হলে তা সনদসহ মাহফূজ হবে। তাহলে সনদ বিলুপ্ত হবে কীভাবে। আর সনদ বিলুপ্ত হলে হাদীস সংরক্ষিত থাকার অর্থ কী?

২. আমরা জানি, সাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হুবহু লফজে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং একই হাদীস কয়েক সনদে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং একটা সনদ যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে আর এক সনদে তো হুবহু হাদীসটি পাওয়া যাবে। কিন্তু যেসব হাদীসের ব্যাপারে ‘লাম আজিদ’ বলা হয় তা তো কোনো হাদীসের কিতাবে হুবহু লফজে পাওয়া যায় না। অন্যান্য হাদীসের কিতাবে এর সমার্থক হাদীস পাওয়া যায়। এর থেকে কেউ কেউ বলেন যে, তিনি ‘রিওয়ায়েত বিল মা’না’ করেছেন। এই দুই মতকে আমরা কীভাবে দেখব এবং প্রথম মতটি নিলে প্রশ্নগুলোর সমাধান কী হবে? আল্লাহ তাআলা হুজুরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

উত্তর-
ক. অন্যান্য মাযহাবের তুলনায় এই দুই মাযহাবে লেখক-গ্রন্থকার বেশি হয়েছেন এবং ‘মানহাজে ইসতিদলালে’র ক্ষেত্রে অন্য দুই মাযহাবের তুলনায় শাফেয়ী মাযহাবের সঙ্গে পার্থক্য অধিক। তাছাড়া কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত বিভিন্ন ইলমী শহরে দুই মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় আলিমগণ পাশাপাশি অবস্থান করেছেন, যারা মুনাযারা ও ইলমে জাদালে অধিক পারদর্শী ছিলেন। এ ধরনের আরো অনেক বিষয় আছে, যা উপরোক্ত বিষয়ের কারণ হয়েছে। কিন্তু ‘ফিকহে মুকারানের’ বিশদ গ্রন্থসমূহে এই মুকারানা ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ না শাফেয়ী মাযহাবের সঙ্গে সীমাবদ্ধ, আর না তার সঙ্গে বেশি।

খ. ‘জাহিরুর রিওয়ায়াহ’-এর কিতাবের মধ্যে ‘আলজামিউস সাগীর’ তিন বিষয়ে স্বাতন্ত্রের অধিকারী। ১. এ কিতাবের উপস্থাপনা রচনামূলক এবং সহজবোধ্য। ২. এতে ফিকহের অধিকাংশ মৌলিক শিরোনাম সন্নিবেশিত রয়েছে। ৩. এতে প্রত্যেক শিরোনামের বুনিয়াদী মাসাইল উল্লেখিত হয়েছে, ‘ফুরূয়ে মুখাররাজা’ এ কিতাবের বিষয়বস্ত্ত নয়।

‘কিতাবুল আসল’-এ মাসাইল অনেক, কিন্তু উপস্থাপনা সম্বোধনধর্মী। ‘আলজামিউল কাবীর’ ও ‘আযযিয়াদাত’-এর বিষয়বস্ত্ত হল ‘ফুরূয়ে মুখাররাজা’। আর ‘আসসিয়ার’ গ্রন্থে শুধু ‘কিতাবুল জিহাদ’ ও আলকানূনুদ দুয়ালী’ সংক্রান্ত মাসাইল রয়েছে।

‘বিদায়াতুল মুবতাদী’ গ্রন্থের উদ্দেশ্যে হল, সালাফের সহজবোধ্য ভাষায় ফিকহী অধ্যায়গুলোর বুনিয়াদী মাসাইল সংকলিত করা। তো এ উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য ‘আলজামিউস সাগীর’ ও ‘মুখতাসারুল কুদূরী’র চেয়ে উপযোগী গ্রন্থ আর কী হতে পারত?

গ. হাদীস ও সুন্নাহ বর্ণনার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীন থেকে ‘রিওয়ায়েত বিল মা’না’র প্রমাণ রয়েছে। (আল-কিফায়া ফী ইলমির রিওয়ায়াহ, লিল খতীব পৃ. ২৩৯-২৪৭ আলমুহাদ্দিসুল ফাসিল, রামাহুরমুযী পৃ. ৫৩৩-৫৩৭; আলফুসূল ফিল উসূল লিল জাসসাস খ. ৩ পৃ. ২১১)

হাদীসের ইমামগণের মধ্যে ইমাম বুখারী রহ. এ বিষয়ে অগ্রগণ্য। ছাহিবে হিদায়াও সম্ভবত করে থাকেন। কিন্তু তাঁর রেওয়ায়াতকৃত যে হাদীসগুলোতে ‘রিওয়ায়েত বিল মা’না’ বিদ্যমান রয়েছে, অপরিহার্য নয় যে, সবক্ষেত্রে তিনিই তা করেছেন; বরং অনেক ক্ষেত্রে এমনও হয় যে, ছাহিবে হিদায়া যে ‘মাসাদির’ থেকে হাদীসগুলো গ্রহণ করেছেন সেখানে তা এভাবেই রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো শিক্ষা ‘বিল মা’না’ সংরক্ষিত হলে তাতেও উদ্দেশ্যে হাসিল হয়ে যায়। আর ‘জাওয়ামিউল কালিম’ ছাড়া অন্যান্য হাদীসের উদ্দেশ্যেই হচ্ছে বিষয়বস্ত্তর নির্দেশনা প্রদান। অন্যথায় কুরআনের মতো হাদীসও ‘শব্দ’ ও ‘মর্মে’র সমষ্টির নাম হত। বলাবাহুল্য, বিষয়টি এমন নয়।

এরপর ‘যায়লায়ী’ ও ‘ইবনে হাজার’-এর মতো দুই ইমামের অনেক ‘লাম আজিদ’ (পেলাম না) এক ‘ইবনে কুতলুবুগা’ই যখন ‘ওয়াজাদতুহু’ (পেয়েছি) বানিয়ে দিয়েছেন তখন শুধু কারো না-পাওয়ার ভিত্তিতে আপনি কীভাবে বলতে পারেন যে, উক্ত হাদীসটি সংরক্ষিত থাকেনি। হাদীসের সংরক্ষণ-পদ্ধতি তো কুরআনের সংরক্ষণ-পদ্ধতির মতো নয় যে, মকতব-হিফযখানার প্রত্যেক তালিবে ইলম এবং সকল মাদরাসার সকল ছাত্র-শিক্ষকেরই তা জানা থাকবে। এটা তো কুরআনের বৈশিষ্ট্য।- মাসিক আলকাউসার থেকে সংগৃহিত।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ