নুরুদ্দীন তাসলিম।।
আসন্ন ৪৫তম কেন্দ্রীয় পরীক্ষা উপলক্ষে ইবতেদায়ী, মুতাওয়াসসিতাহ, সানাবিয়া উলয়া ও ফজিলতের নেসাব সংক্ষিপ্ত করেছে দেশের কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ।
আজ শনিবার (৯ অক্টোবর) বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মাওলানা যুবায়ের আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশিত সানাবিয়া উলয়া জামাতের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস হলো-
বেফাকের ঘোষিত সানাবিয়া উলয়া জামাতের নেসাবটি কীভাবে দেখছেন মাদরাসার দায়িত্বশীলগণ। এ বিষয়ে যোগাযোগ করেছিলাম রাজধানীর জামিয়া কারিমিয়া রামপুরার নাজেমে তালিমাত মুফতী হেমায়েতুল্লাহর সাথে। তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু মাদরাসাগুলো একটা শিক্ষাবর্ষের পুরো সময় পাইনি তাই কেন্দ্রীয় বোর্ড হিসেবে বেফাকের পক্ষ থেকে সিলেবাস বিষয়ে এমন সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া যুক্তিযুক্ত।
তার ভাষায়, ‘বিশাল সিলেবাসের কারণে শিক্ষক- শিক্ষার্থীরা যেন আতঙ্কিত না হয়ে পড়েন তাই সংক্ষিপ্তকরণের বিষয়টা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য; তবে তিনি মনে করেন; বেফাকের প্রজ্ঞাপনে একথাও যুক্ত করে দেওয়া উচিত, মাদরাসাগুলোর জন্য নিজস্বভাবে যতটুকু সম্ভব এই পরীক্ষা সিলেবাসের বাইরে গিয়েও সিলেবাস এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।
আরো পড়ুন: কেন্দ্রীয় পরীক্ষা উপলক্ষে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করলো বেফাক
তিনি মনে করেন, ‘বেফাকের পক্ষ থেকে সরাসরি এমন ঘোষণা না দেওয়া হলে অনেকের মধ্যেই হয়তোবা গাছাড়া ভাব দেখা দিবে। এছাড়া আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে হয়তোবা কখনো এসব কিতাব মুতালার আর সুযোগ পাবেন না। তাই সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের ঘোষণার সাথে এই বিষয়টাও যুক্ত করা প্রয়োজন’ বলে মনে করেন জামিয়া কারিমিয়া রামপুরার নাজেমে তালিমাত মুফতী হেমায়েতুল্লাহ।
এদিকে একই বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত জামিয়া ইসলামিয়া ওয়াহীদিয়ার নাজেমে তা'লীমাত মাওলানা নূরুদ্দীনের কাছে।
তিনি প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘যেহেতু করোনার কারণে শিক্ষাবর্ষের লম্বা একটা সময় আমরা পাইনি, তাই স্বভাবতই কেন্দ্রীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে সিলেবাস বিষয়ে এমন একটি গাইড লাইন প্রয়োজন ছিল এবং বোর্ড এমন প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করে উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ বলে মত দিয়েছেন তিনি।
তিনি গত বছরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এর আগের বছর পরীক্ষার ঠিক আগ মুহূর্তে বেফাকের পক্ষ থেকে সিলেবাস বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এতে বেশ বিপাকে পড়তে হয়েছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এ বছর আগে থেকেই বেফাকের এমন সিদ্ধান্ত সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য’।
আরো পড়ুন: বেফাকের মুতাওয়াসসিতাহ জামাতের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস: দুজন শিক্ষকের মতামত
তার মতে, ‘বেফাকের পরীক্ষা কেন্দ্রিক এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই স্বস্তিতে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন’।
সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের মাধ্যমে ছাত্রদের যোগ্যতায় কোন ধরনের ঘাটতি আসতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে মাওলানা নুরুদ্দিন বলেছেন, করোনাকালীন বিপর্যয়ের কারণে এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শুধু এ বছরের জন্য। তাই এর প্রভাব পুরো শিক্ষা সিলেবাসে পড়বে না বলেই আশাবাদী তিনি।
বিষয়টিকে তিনি সহজে বোঝানোর জন্য একটি উদাহরণ দিয়েছেন।
তার ভাষায় সেই উদাহরণ হল, ‘স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষ দিনে তিন বেলা খেতে পারেন, কিন্তু এই মানুষটাকেই যখন দশ দিনের খাবার একসাথে দেওয়া হবে তখন তিনি তা খেতে পারবেন না উল্টো এটা তার বদহজম ও নানা মাত্রিক অসুস্থতার কারণ হিসেবে দেখা দিতে পারে’।
আরো পড়ুন: বেফাকের ইবতেদায়ী জামাতের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস: দুজন শিক্ষকের মতামত
উদাহরণ শেষে তিনি বলেন, ‘ঠিক তেমনি পুরো সিলেবাস শেষ করতে হবে এমন ভাবনা থেকে যদি তাড়াহুড়ো করে শিক্ষকরা পড়াতে শুরু করেন; এতে শিক্ষার্থীরা কিতাবের মূল বিষয় বুঝতে অক্ষম হবেন। তাই শিক্ষকদের জন্য সিলেবাস শেষ করার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ছাত্রদের বুঝিয়ে বুঝিয়ে প্রত্যেকটি মাসয়ালা ও সাবজেক্ট হল করানোর চেষ্টা করা।
আরো পড়ুন: সিলেবাস সীমিতকরণ নিয়ে কী ভাবছে বেফাক?
‘এমন সামগ্রিক দিক সামনে রেখেই বেফাকের পক্ষ থেকে সিলেবাস বিষয়ে এমন গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে এবং বেফাকের এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ইতিবাচক বলেই উল্লেখ করেন রাজধানীর জামিয়া ইসলামিয়া ওয়াহীদিয়ার নাজেমে তা'লীমাত মাওলানা নূরুদ্দীন।
আরো পড়ুন: খুলছে মাদরাসা: সিলেবাস সীমিতকরণে ৩ নাজেমে তালিমাতের ভাবনা
এটি/কেএল