শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
জুমার খুতবার আগে ব্রেন স্ট্রোক, রাতে ইন্তেকাল তরুণ ইমামের জামিয়া গহরপুরের ফুজালা ও প্রাক্তনদের আয়োজনে ‘মাহফিলে নূর’ সম্প্রীতির বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক সকল অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে: ছাত্র জমিয়ত চিন্ময়ের মুক্তি চাওয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের উলম্ব অভিযান: রিজভী মতিঝিল থানা হেফাজতে ইসলামের কমিটি গঠন এডভোকেট হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে চাঁদপুর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ‘সংবিধানে কুরআন-সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক কোন কিছু রাখা যাবে না’ চাঁদপুর জেলা সিরাত সম্মেলন আগামীকাল, থাকছেন হেফাজত আমীর চট্টগ্রামে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে হেফাজতের বিক্ষোভ-সমাবেশে জনস্রোত মৌলভীবাজারে আইনজীবী হত্যা ও ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

সুস্থ হয়ে হাদিসের মসনদে মুফতি নূর আহমদ হাফি.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ হাবীব আনওয়ার।। সালাতুল ইশা আদায় শেষে সবেমাত্র কামরায় এসেছি। মাদ্রাসার বিভিন্ন ভবনে লাগানো মাইক থেকে এলান ভেসে এলো 'এখন মুয়াত্তা ইমাম মালেক' এর সবক হবে। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলাম শ্রেণি কক্ষে। সুবিশাল শ্রেণী কক্ষ। উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রেণী কক্ষ এটি। কানায় কানায় ভরপুর।

দারুল হাদিসের ছাত্র ব্যতীত অন্য বিভাগের ছাত্ররাও আজ দারুল হাদিসের ক্লাস রুমে ঝেকে বসেছে। সুবিশাল ক্লাস রুমে কয়েক'শ বৈদ্যুতিক বাতির ঝলমলে আলোতে উজ্জ্বল হয়ে আছে পুরো ক্লাস রুম। তবে কৃত্রিমতার ছাপ স্পষ্ট। প্রায় ৩ হাজার ছাত্রের ধরণ ক্ষমতা সম্পন্ন হল রুমে বিরাজ করছে পিনপতন নীরবতা। সবার দৃষ্টি সদর দরজার দিকে।

চৈত্রের কাঠফাটা রোদে মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে চলা কাফেলা এক পিয়ালা পানির জন্য যেমন অধির আগ্রহে তাকিয়ে থাকে তারচেয়েও দ্বিগু আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে সবাই।

অপেক্ষার অবসান হলো। সদর দরজা দিয়ে হুইল চেয়ারে করে ক্লাস রুমে প্রবেশ করলেন। সুন্নাত মোতাবেক সালাম দিলেন। শুভ্রতায় মাখা পুরো শরীর। চেহারায় উজ্জ্বলতা। নূরের আলোকরশ্মি। সবাই তাকিয়ে আছেন। ৩ হাজার জোড়া চোখ তাদের তৃষ্ণা নিবারণ করছে। কিন্তু আমি পারলাম না। আমার সেই চোখ নেই।

যে চোখে আল্লাহর মাহবুব বান্দাদের দেখা যায়। তবুও চেয়ে আছি চাতক পাখির ন্যায়। নূর না দেখতে পারলেও স্বর্গীয় অনুভূতি সমগ্রসত্তাকে গ্রাস করে ফেলেছে। হৃদয়ে আল্লাহ প্রেমের ঝড় বেয়ে যাচ্ছে। বুজুর্গদের দেখলে আল্লাহর কথা মনে পড়ে তার বাস্তবতা আজ উপলব্ধি করতে পারলাম।

শায়েখ বিসমিল্লাহ বলে দরস শুরু করলেন। সাউন্ড বক্স থেকে ভেসে আসা ভাঙা গলার অস্পষ্ট আওয়াজ আমার তনু মনে শিহরণ তৈরি করলো। দরসের শুরুতেই তিনি প্রয়াত শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফী ও শাইখুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মুফতী আযম রহিমাহুমুল্লাহ এর মাগফিরাত কামনা করেন।

এরপর অস্পষ্ট স্বরে কিছু আলোচনা করলেন। যেন প্রতিটি কথার সাথে মুক্ত ঝড়ছে। সবাই নিমগ্নচিত্তে উৎকর্ণ হয়ে শ্রবণ করছে। সবার সাথে আমি শুনছি। অস্পষ্টতা স্পষ্ট; কিন্তু কারো চেহারায় নেই কোন বিরক্তের ছাপ। কথা অস্পষ্ট হলেও অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু আমি হতভাগ্য হৃদয়ঙ্গম করতে ব্যর্থ হচ্ছি। তাঁর কথা ধারণ করার জন্য যে হৃদয়ের প্রয়োজন তা আমার নেই। গুনাহে জর্জরিত, কলুষিত, কর্দমাক্ত হৃদয়ে এত দামি কথা ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে যায়। তবুও 'লা তাহজান' এর উপর আমল করে শায়েখের দিকে তাকিয়ে আছি। কাছে যেতে না পারলেও তো এক ছাঁদের নিচে বসতে পেরেছি। এটাও একধরনের সান্নিধ্য।

বলছিলাম দারুল উলূম হাটহাজারী মাদরাসার বর্তমান বয়োজ্যেষ্ঠ মুরুব্বী। মুহিউচ্ছুন্নাহ। প্রজ্ঞাবান আলেম ও মুফতিয়ে আযম হাটহাজারী। মুফতিয়ে আযম আল্লামা ফয়জুল্লাহ রহ. এর প্রতিচ্ছবি ও খলিফা মুফতী নূর আহমদ সাহেব হাফি. এর কথা। তিনি হাটহাজারীর রত্ম। আমাদের গর্ব।

অসুস্থতার কারনে দীর্ঘদিন তিনি দরস থেকে অবসরে ছিলেন। হাটহাজারীর এই ক্রান্তিলগ্নে তিনি আবারও হাদিসের দরসে ফিরেছেন।

শাইখের হাদিস শরিফ পাঠদানের আগ্রহ দেখে সত্যিই অবাক হতে হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য অসুস্থতা ও বার্দ্ধক্যের কারণে সেই উদ্দীপনা আর পূর্ণতা পায় না।

হযরতকে সর্বপ্রথম দেখেছি ২০১৩ সালের কোন এক পড়ন্ত বিকেলে। মেখল মাদ্রাসার মেহরাবে বসে ছাত্রদের উদ্দেশ্য নসিহত পেশ করছেন। এরপর থেকে মাসে অন্তত একবার দেখা হত। কিন্তু তাঁর নূরানী চেহারা দেখা আর বরকতময় সান্নিধ্য বেশিদিন স্থায়িত্ব পেল না। হযরত বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ঘরবন্দী হয়ে গেলেন।

সেই সাথে ক্লাস কেন্দ্রীক পাঠদান থেকে অবসর নিলেন। তবে পঠন-পাঠন যাদের জীবন অবিচ্ছেদ্য অংশ তারা কি 'ওয়াবিহি হাদ্দাসার' মধুময় আওয়াজ থেকে দূরে থাকতে পারেন। কিন্তু ছাত্রদের বৃহৎ স্বার্থের দিকে তাকিয়ে তাঁকে সকল প্রকার দরস থেকে বিরত রাখা হয়! এই খবরে তিনি আরো ভেঙে পড়েন। শায়খুল হাদিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. এর মুখে শুনেছি, হযরত মুফতী সাহেব হাফি. তৎকালীন সহকারী শিক্ষা পরিচালক ও মজলিস ইলমের কাছে দরখাস্ত করেছিলেন যে, আমাকে প্রয়োজন উর্দু কায়দা হলেও পড়াতে দিন।

অন্যথায় আমি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাব। কিন্তু তার এই দরখাস্ত তখন বিভিন্ন কারণে মঞ্জুর করা হয়নি। তিনিও দমে যাননি। আল্লাহর দরবারে অনবরত দুআয় ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দুআ কবুল করেছেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও তিনি হাদিসের মসনদে সমাসীন হলেন। সেই সাথে আমার বুকে খুব যত্ন করে আগলে রাখা স্বপ্নেরও ভোর হলো।

আল্লাহ তাআলা হজরতের হায়াতে বারাকাহ দান করুন। বর্তমান হাটহাজারী মাদরাসায় সবচেয়ে প্রবীণ উস্তাদ হিসেবে একমাত্র তিনিই বাহায়াত জীবিত আছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর ছায়াকে আমাদের জন্য রহমত করুন। আমিন।

লেখক: শিক্ষার্থী, হাটহাজারী মাদরাসা চট্টগ্রাম।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ