নুুরুদ্দীন তাসলিম।।
একজন শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানুষরূপে গড়ে ওঠার পেছনে বাবা মার থেকেও শিক্ষকের অবদান বেশি। বলা হয়ে থাকে শিক্ষকরা জাতির প্রধান চালিকাশক্তি। এ কারণেই শিক্ষকের মর্যাদা সবসময় সবার উপরে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বলেছেন, আমি শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।
প্রতিনিয়তই শিক্ষকরা নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তোলেন আদর্শ ছাত্র এবং সমাজ। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে নিজের প্রিয় শিক্ষকদের স্মৃতিচারণ ও অনুভূতি জানিয়েছেন দেশের দুই প্রবীণ শিক্ষাবিদ আলেম। যারা প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিয়োজিত আছেন শিক্ষকতা পেশায়।
মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন
লেখক ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা আলেম মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন। ব্যক্তিজীবনে তিনজন শিক্ষককে বিশেষভাবে স্মরণ করেন।
তাদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রথমেই গহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মাওলানা আশরাফ আলী রহ.-এর নাম উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি বলেন, জীবনে এই ওস্তাদের অবদান অনেক বেশি। উস্তাদ মাওলানা আশরাফ আলী রহ. আমার বাবারও শিক্ষক ছিলেন, তার কাছে বাবা যেই গুলিস্তা কিতাব পড়েছিলেন, আমি বাবার সেই কিতাব নিয়েই মাওলানা আশরাফ আলী রহ.- এর কাছে গুলিস্তা পড়েছিলাম।
‘ছোটবেলায় ছোট মানুষি থেকে যে খুনসুটি দুষ্টুমিগুলো করতাম তা তিনি শুধরিয়ে দিতেন, সামনে আর না করার জন্য বলে দিতেন’।
প্রিয় শিক্ষক মাওলানা আশরাফ আলী রহ.-এর সাথে মাওলানা হেমায়েত উদ্দীনের হৃদত্যা ও আত্মার সম্পর্কটা ছিল বেশ গভীর। তিনি জানান, ‘আশরাফ আলী রহ.-এর ইন্তেকালের পর তার কবর সংক্রান্ত বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়, সেটা তিনি আমাকে স্বপ্নে জানান এবং কিভাবে এর সমাধান করতে হবে তাও স্বপ্নে বলে দেন আমাকে’।
‘এছাড়াও জীবনে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.- এর অবদান উল্লেখযোগ্য। শিক্ষকতা জীবনে যা কিছু তার সিংহভাগ আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.-এর কাছ থেকেই শেখা’ বলেন তিনি।
নিজের শিক্ষকতা জীবনে আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরী রহ.-এর প্রতিচ্ছবি দেখতে চাইতেন মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন।
‘আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরীর ভেতরে কঠিন বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপন এবং দীর্ঘ কথাকে সংক্ষেপে পরিবেশেনের যে যোগ্যতা তা সব সময় কাছে টানতো এবং একেই ফলো করেই বর্তমান শিক্ষক জীবনে দরস প্রদানের চেষ্টা করেন’ বলে জানিয়েছেন লেখক ওগবেষক আলেম মাওলানা হেমায়েত উদ্দীন
মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন
দেশ-বিদেশে পড়াশোনার সুবাদে প্রিয় শিক্ষকের তালিকাটা বেশ ভারী স্বপ্নচারী লেখক ও সাহিত্যিক মাওলানা যাইনুল আবেদীনের। ঢাকায় যাদের কাছে পড়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিক্ষকের তালিকাও বেশ লম্বা। তবে একেবারে নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রহ.-এর নামটিই উপরের সারিতে থাকবে বলে জানালেন তিনি।
এছাড়াও ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় পড়াশোনা কালীন সময়ে মাওলানা যাইনুল আবেদীনের প্রিয় শিক্ষকদের তালিকায় ছিলেন মাওলানা বশির উদ্দিন আহমদ, ফরিদাবাদ মাদ্রাসার বর্তমান সময়ের মহাপরিচালক ও তৎকালীন সময়ের নাজেমে তা'লীমাত মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, এছাড়াও আছেন মাওলানা মতিউর রহমান ও মুফতি আবু সাঈদ।
তিনি বলেন, এই শিক্ষকরা ছিলেন ছাত্র গড়ার কারিগর, তাদের কাছে অনায়েসেই ছাত্ররা গিয়ে মনের আকুতি পেশ করতে পারত, সহজেই পেয়ে যেত সব বিষয়ের সমাধান।
মাওলানা যাইনুল আবিদীন বলেছেন, বর্তমানে আমাকে যে লেখক পরিচয়ে মানুষ সহজেই চেনেন; এই পরিচয় গড়ার পেছনে বিশেষ অবদান রয়েছে ফরিদাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা বশির উদ্দিন সাহেবের। বর্তমানে যিনি নরসিংদী দত্তবাড়ি মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস।
বিশেষ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ শরহে জামী শেষে যখন শরহে বেকায়ায় উঠবো তার আগের রমজানে মাওলানা বশির উদ্দিন সাহেব আমাকে মাদ্রাসায় রেখে তার তত্ত্বাবধায়নে লেখালেখি ও সাহিত্যচর্চা করিয়েছিলেন’।
নিজের ব্যক্তি জীবনে কোন শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি দেখতে চাইতেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে কোন একজনকে বলা কঠিন। দেওবন্দ পড়াকালীন সময়ে তখনকার সব শাইখুল হাদিস আমার প্রিয় ছিলেন। তবে দেওবন্দের আদব বিভাগের আল্লামা নুর আলম খলিল আমিনীর প্রতিচ্ছবি নিজের শিক্ষক জীবনে দেখতে চাইতেন বলে জানান স্বপ্নচারী লেখক মাওলানা যাইনুল আবিদীন।
এটি