অবশেষে খুলছে মাদরাসা। শেষ হচ্ছে অপেক্ষার প্রহর। আবারও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পদভারে মুখরিত হতে যাচ্ছে প্রিয়প্রাঙ্গন। শিক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে এক ধরণের আমেজ। সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় সিলেবাস। সংক্ষিপ্ত করে এগিয়ে নেওয়া হবে নাকি ভিন্ন কোন পদ্ধতিতে চালিয়ে নেওয়া যেতে পারে শিক্ষা কার্যক্রম? এ বিষয়ে দেশের শীর্ষ ৩ মাদরাসার নাজেমে তালিমাতের সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিম।
শুরুতেই সিলেবাস সীমিতকরণের চিন্তাভাবনা না করাই শ্রেয়, যতটুকু সম্ভব এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া:
মুফতি আশরাফুজ্জামান: নাজেমে তালিমাত,জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া।
জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়ার শিক্ষাসচিব মুফতি আশরাফুজ্জামান বলছেন, শুরুতেই সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করার দিকে না গিয়ে যে সময়টুকু আছে এরমধ্যেই বিভিন্ন ছুটি পরীক্ষা কমিয়ে সিলেবাস শেষ করা যায় কিনা তা দেখার চেষ্টা করা।
তার মতে, ‘একবার সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণের বিষয়টি চালু হয়ে গেলে ধারাবাহিকভাবে এটা চলতে থাকবে, সহজে আর বন্ধ করা যাবে না, তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যদিবসগুলো ঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় কিনা তা ভেবে দেখা দরকার’।
তিনি বলছেন, ‘পরীক্ষার আগে খেয়ার, পরীক্ষা এবং ছুটি মিলিয়ে প্রায় মাসখানেক সময় চলে যায়, এখান থেকে সময় বাঁচানো যায় কিনা এবং ছুটিগুলো কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের শুরু থেকেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করানো গেলে সিলেবাস সুশৃংখলভাবে শেষ করা সম্ভব হতে পারে’।
‘শুরু থেকেই নিসাব কমানোর বিষয়টি চিন্তাভাবনা না করাই শ্রেয় মনে করেন মুফতি আশরাফুজ্জামান। তার মতে, ‘যতটুকু সম্ভব সিলেবাস এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। এর পাশাপাশি পরিস্থিতির সাথে সবকিছু কুলিয়ে উঠতে না পারলে সার্বিক দিক বিবেচনায় সিলেবাস-এর বিষয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে বিশেষ গাইডলাইন দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি’।
সিলেবাসকে সুশৃংখলভাবে এগিয়ে নিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি ক্লাসে শিক্ষকদের উপস্থিত থাকা জরুরি:
মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী: নাজেমে তালিমাত,জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা।
রাজধানীর জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার শিক্ষা সচিব মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিলেবাসকে সুশৃংখলভাবে এগিয়ে নিতে প্রাথমিকভাবে আমার পরামর্শ হল কোন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া শিক্ষকদের প্রতিটি ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত থাকা জরুরী ও সময়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। তার মতে, ‘সিলেবাস সুশৃংখলভাবে এগিয়ে নিতে এটি হতে পারে একটি কার্যকরী উপায়’।
তিনি আরো বলছেন, যেহেতু দীর্ঘ একটা গ্যাপের পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলছে তাই অন্যান্য সময়ে সাধারণত যেভাবে প্রথম সাময়িক, দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা নেওয়া হয়, এবার পরীক্ষাগুলো কমিয়ে দিয়ে একটা পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে, এতে কম করে হলেও তিন সপ্তাহ সময় বেঁচে যাবে যা শিক্ষা-সিলেবাস এগিয়ে নিয়ে কাজে লাগানো যাবে’।
‘যেহেতু শিক্ষাবর্ষের মোটামুটি একটা সময় চলে গিয়েছে তাই, বোর্ডের অধীনে যেসব ক্লাস রয়েছে সেই ক্লাস গুলোর জন্য বোর্ডের পক্ষ থেকে সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণে বিশেষ গাইডলাইন দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া অন্যান্য ক্লাসের সিলেবাস-এর ক্ষেত্রে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ নিজে অথবা বোর্ডের পক্ষ থেকেও কোন গাইডলাইন দেওয়া যেতে পারে, এতে করে সবগুলো মাদরাসা এক ধারাবাহিকতায় সিলেবাস শেষ করতে পারবে, বলছিলেন শিক্ষাবিদ মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী।
বেফাক এবং হাইয়ার পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলছেন, এ ক্ষেত্রে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বেফাকের পরীক্ষাগুলো শবে বরাতের পরে রমজানের আগ মুহূর্তে শেষ করতে পারেন। হাইয়াতুল উলিয়ার পরীক্ষাগুলো রমজানের ঈদের পরে নেওয়া যেতে পারে এবং রমজানের যে সময়টা আছে এই সময়ে পরীক্ষার খেয়ার দেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলছেন,‘যেহেতু দাওরা হাদিসের সিলেবাস অনেক বড়, তাই রমজানের আগ পর্যন্ত ক্লাস চালু থাকলে সিলেবাস সুশৃংখলভাবে শেষ করা সম্ভব হতে পারে’।
সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণে বোর্ডের গাইডলাইনের বিষয়ে মুফতি মকবুল হোসাইনের বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার শুরু শুরুর দিকেই এ বিষয়টিতে নজর দেওয়া যেতে পারে, এক্ষেত্রে সিলেবাস বেশি হলেও টার্গেট নিয়ে পড়ালে এতে বরকত হতে পারে।
তিনি বলছেন, গত বছর একেবারে শেষের দিকে সিলেবাস নিয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে গাইডলাইন এসেছিল, তখন দেখা গেছে বোর্ডের পক্ষ থেকে যেসব সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে; তা ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষক পড়িয়েও ফেলেছেন, তাই বিষয়টি আগে থেকে বিবেচনা করলে শিক্ষকদের বাড়তি কষ্ট করতে হবে না-বলছিলেন মুফতি মকবুল হোসাইন কাসেমী।
বোর্ডের পক্ষ থেকে সিলেবাস সংক্ষিপ্তকরণে বিশেষ গাইডলাইন দেওয়া যেতে পারে:
মুফতী হেমায়েতুল্লাহ: নাজেমে তালিমাত,জামিয়া কারিমিয়া রামপুরা।
এদিকে রাজধানীর জামিয়া কারিমিয়া রামপুরার শিক্ষাসচিব মুফতী হেমায়েতুল্লাহও মনে করেন; বোর্ডের অধীনে যেসব ক্লাস রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার শুরুর দিক থেকেই এই ক্লাস গুলোর সিলেবাসের বিষয়ে বোর্ডের পক্ষ থেকে বিশেষ গাইডলাইন দেওয়া প্রয়োজন, এতে করে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়া সহজ, শিক্ষকরাও স্বস্তির সাথে পড়াতে পারবেন- বলছিলেন তিনি।
তিনি আরো বলছেন, শুরু থেকেই গাইড লাইন দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, গতবছর শেষের দিকে যখন অনেকেই সিলেবাসের অনেক অংশ পড়িয়ে ফেলেছিলেন এমন সময় বোর্ড থেকে সিলেবাস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল- এতে করে ভোগান্তি বাড়ে- বলছিলেন শিক্ষাবিদ মুফতী হেমায়েতুল্লাহ।
এএ