মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন।।
জ্ঞান অর্জনের জন্য অধ্যয়নের নিয়ত জাগ্রত হওয়ার পর সর্বপ্রথম নির্বাচন করা চাই প্রথমে কোন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তারপর কোন বিষয়ে, তারপর কোন বিষয়ে ... । জ্ঞান অর্জনের বিষয়াদিতে এমন একটা ধারাবাহিকতার ব্যাপার রয়েছে। এমনটা নয় যে, একটা বিষয়ে আমার পড়াশোনা করতে মনে চাইল আর অমনি সে বিষয়ে পড়াশোনা ও চর্চা আরম্ভ করে দিলাম, অথচ তার চেয়ে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবাই হল না।
স্পষ্ট কথা যে, ফরয পর্যায়ের বিদ্যা বাদ দিয়ে নফল পর্যায়ের বিদ্যায় মশগুল হওয়া না শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থিত না যুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে। কিন্তু আমাদের অনেককে এমনটাই করতে দেখা যায়। ঠিক যেন সতর ঢাকা হল কি না সে চিন্তা বাদ দিয়ে পাগড়ির চিন্তায় মশগুল হওয়া।
ইসলামে গুরুত্বের বিচারে সর্বাগ্রে স্থান হল ঈমান-আকীদা বিষয়ক জ্ঞানের, তারপর ইবাদত ও ইবাদত সংশ্লিষ্ট মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কিত জ্ঞানের, তারপর ইসলামী মুআমালা তথা লেনদেন ও কায়কারবার সম্পর্কিত জ্ঞানের, তারপর মুআশারা তথা পারস্পরিক আচার-ব্যবহার ও মানবাধিকার সংক্রান্ত জ্ঞানের এবং এসবের সাথে সাথে আখলাক-চরিত্র ও আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি বিষয়ক জ্ঞানের । কিন্তু অনেককে দেখা যায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঈমান বিষয়ক জ্ঞানের খবর নেই, ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাযের অন্তত ফরয কয়টা তার পর্যন্ত খবর খবর নেই অথচ তিনি কুরআন-হাদীছে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্বন্ধে কি কি বলা হয়েছে তা নিয়ে চর্চা-গবেষণায় বিভোর। মতবিরোধপূর্ণ মাসায়েলের দলীল-প্রমাণ ঘাঁটাঘাঁটিতে ব্যস্ত। এটা হল ফরয বাদ দিয়ে নফল নিয়ে টানাটানির মত।
কেউ জ্ঞান-বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে চান করুন, ইসলামের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করতে চান করুন, ইসলামের রাজনীতি ও খেলাফত বিষয়ে পড়াশোনা করতে চান করুন, ইসলামের সমাজ-ব্যবস্থা ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করতে চান করুন, কুরআন হাদীছের তরজমা তাফসীর পড়তে চান পড়ুন, কিন্তু আপনার জন্য এগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কী রয়েছে এবং সে বিষয়ে মোটামুটি জ্ঞান অর্জন সম্পন্ন হয়েছে কি না তা ভেবে দেখা উচিত। সেগুলোর জ্ঞান অর্জন করাকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
প্রাথমিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সম্বন্ধে মোটামুটি জ্ঞান অর্জন সম্পন্ন হওয়ার পর ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে উপরের দিকে যাওয়াই স্বভাবসম্মত নীতি। মনে রাখতে হবে প্রাথমিক পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি যা মানুষের জন্য প্রয়োজনীয়, যেগুলোর সঙ্গে তার জীবনের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক, সেগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করা ফরযে আইন।
طلب العلم فريضة على كل مسلم "প্রত্যেক মুসলমানের উপর বিদ্যা শিক্ষা ফরয"- এ প্রসিদ্ধ হাদীছে এই ফরযে আইন পর্যায়ের বিদ্যার কথাই বলা হয়েছে। আর ফরযে আইন পর্যায়ের বিদ্যা উপেক্ষা করে নফল পর্যায়ের বিদ্যা চর্চায় মাশগুল হওয়া নীতিসম্মত নয়। এর অর্থ এই নয় যে, ফরযে আইন পর্যায়ের বিদ্যা অর্জন সম্পন্ন করার পূর্বে অন্য বিদ্যাতে মোটেই টাচ করা যাবে না। বরং বোঝানো হচ্ছে ফরযে আইন পর্যায়ের বিদ্যা অর্জনকে অগ্রাধিকার দেয়া চাই।
আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বুঝ ও সঠিক আমলের তাওফীক দান করুন। আমীন!
-এএ