আপনি কোন একটা বিষয়ে পড়াশোনা করতে চান, সেই বিষয়ে অনেক লেখকের লেখা বইপত্র রয়েছে। বাজারে এখন বইপত্রের অভাব নেই। একই বিষয়ে অনেক লেখকের বই রয়েছে। এখন আপনি কার লেখা বই পাঠ করার জন্য নির্বাচন করবেন? এ ব্যাপারে অবশ্যই আপনার কিছু সাবধানতা অবলম্বন করার রয়েছে। এ পর্যায়ে যেগুলো গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতি নয় সেগুলো থেকে বিরত থাকুন। যেগুলো গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতি সেগুলো অবলম্বন করুন।
যেগুলো গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতি নয়-
১. শুধু আকর্ষণীয় প্রচারে মুগ্ধ হয়েই কোন গ্রন্থ পাঠের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়া। এটা গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতি নয়।
২. কোন গ্রন্থের আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ দেখেই সেটা সংগ্রহ করা ও পাঠ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়া। এটাও গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতি নয়।
৩. কোন দোকানীকে জিজ্ঞাসা করা হল অমুক বিষয়ে কোন গ্রন্থ পাঠ করা যায়, আর দোকানী কোন একটা গ্রন্থ ধরিয়ে দিল, ব্যস সেটাই পাঠ করার জন্য নির্বাচন করা হল। এটাও গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতি নয়। মনে রাখতে হবে সাধারণত প্রত্যেক দোকানী সেই বইটিই ধরিয়ে দেয় যাতে তার ব্যবসায়িক স্বার্থ থাকে। তা হোক না সে বইটি অনির্ভরযোগ্য বা অসুন্দর।
৪. অনেক সময় ব্যবসায়ী তার ব্যবসার স্বার্থে নিজের থেকেই কোন বইয়ের গুনগান করে সেটা ক্রেতাকে ধরিয়ে দেয়। এটাকে বলে পুশিং সেল। এ পদ্ধতিতে ক্রেতার হাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের নির্ভরযোগ্য ও সুন্দর বই নাও আসতে পারে। তাই এটাও গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতি নয়।
৫. সম্প্রতি অনেকে একটা বিষয়ে জানার আগ্রহ জন্মালে সে বিষয়ে কোন বই পাঠ করা যায় তা জানার জন্য ফেসবুকে আবেদন জানিয়ে একটা পোস্ট দেয় যে, অমুক বিষয়ে কোন কোন বই-কিতাব পাঠ করা যায়? তখন দেখা যায় একেকজন নিজ নিজ পছন্দের, নিজ নিজ মতবাদের অনুকূলের বইপত্রের সাজেস্ট করতে থাকে (যদিও সে মতবাদ ভ্রান্ত), পাবলিশাররা ব্যবসায়িক স্বার্থে তাদের প্রকাশিত বইপত্রেরই সাজেস্ট করতে থাকে (যদিও তাদের প্রকাশিত সে বইপত্র গ্রহণযোগ্য নয় বা সুন্দর নয়)।
এভাবে হয়তো সে সম্বন্ধে প্রকৃতপক্ষে যে বই ভাল তার নাম উঠে আসে না, বরং যেটা ভাল নয় বা ক্ষতিকর এমন কোন বইয়ের নাম উঠে আসে আর আবেদনকারী সে বই সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা প্রতারিত হয় বা বিভ্রান্ত হওয়ার যোগাড় করে। বাস্তবেও আমরা এভাবে বহু লোককে ভ্রান্তির শিকার হতে দেখছি। বিশেষ করে ফেসবুকে কেউ কোন বিষয়ে বইয়ের সাজেস্ট চাইলে দেখা যায় এলোপাতাড়ি সাজেস্ট পড়তে থাকে। যার মধ্যে অনেকটাই বিভ্রান্তিমূলক সাজেস্ট। এ ব্যাপারে কোন লেখক বিশেষের বা গ্রন্থ বিশেষের নাম উল্লেখ করে অন্তহীন ঝগড়ার দ্বার অবারিত করতে চাই না।
বস্তুত একটা বিষয়ে কি কি বই লেখা হয়েছে, তার মধ্যে কোন কোনটি বিশুদ্ধ ও ভাল বা কোনটি সবচেয়ে ভাল সে সম্বন্ধে জ্ঞান দেয়া যার তার কাজ নয়। এর জন্য যথেষ্ট জ্ঞান, যথেষ্ট লেখাপড়া ও যথেষ্ট খোঁজ-খবর থাকা চাই। তদুপরি পরামর্শ দেয়ার মত বিশ্বস্ততা ও আমানতদারীও থাকা চাই। হাদীছে এসেছে- المستشار مؤتمن. অর্থাৎ, যার কাছে পরামর্শ চাওয়া হয় তার উপর আমানতদারী এসে যায়। (তিরিমযী) সুতরাং ফেসবুকে এভাবে আবেদন জানিয়ে যার তার থেকে বইপত্রের ব্যাপারে পরামর্শ নেয়ার পথ পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। এটাও গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতি নয়।
সারকথা- আকর্ষণীয় প্রচারে মুগ্ধ হয়ে গ্রন্থ নির্বাচন, আকর্ষনীয় প্রচ্ছদ দেখে গ্রন্থ নির্বাচন, দোকানীকে জিজ্ঞাসা করে গ্রন্থ নির্বাচন, দোকানীর পুশিং সেল-এর শিকার হয়ে গ্রন্থ নির্বাচন, ফেসবুকে পোস্ট ছেড়ে যার তার থেকে পরামর্শ নিয়ে বা এমনিতেই যার তার থেকে পরামর্শ নিয়ে সে মোতাবেক গ্রন্থ নির্বাচন- এগুলো গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতি নয়।
গ্রন্থ নির্বাচনের সঠিক পদ্ধতির পর্যায়ে যে কয়টি কাজ করণীয়-
১. কোন দ্বীন-ধর্ম বিষয়ক গ্রন্থ নির্বাচন করতে হলে সর্বাগ্রে যাচাই করে নিতে হয় গ্রন্থটির লেখক হকপন্থী লোক কি না, তিনি যোগ্য আলেম কি না, ইলম অনুযায়ী তার আমল আছে কি না, তিনি আদর্শবান ব্যক্তি কি না, তিনি নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি কি না, আলেম না হলে কোন নির্ভরযোগ্য আলেম বা নির্ভরযোগ্য কিতাবের বরাতে সবকিছু লিখেছেন কি না ইত্যাদি। এসব বিষয় যাচাই না করে যার তার লেখা গ্রন্থ পাঠ করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি সেরূপ গ্রন্থ থেকে কোন তথ্য প্রচার করাও ঠিক নয়। তাতে হেদায়েতের পরিবর্তে গোমরাহী এসে যেতে পারে, হেদায়েত প্রচারের পরিবর্তে গোমরাহী প্রচার হয়ে যেতে পারে।
বস্তুত দ্বীনী শিক্ষার বিষয়টি খুবই নাজুক, এ ক্ষেত্রে সাবধানী না হলে, কার থেকে দ্বীনী শিক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে তা বিবেচনায় না রাখলে দ্বীন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে। এজন্যই প্রসিদ্ধ তাবিয়ী হযরত ইবনে সিরীন রহ. বলেছেন, إن هذا العلم دين فانظروا عمن تأخذون دينكم. অর্থাৎ, ইলম হচ্ছে একটি দ্বীনী বিষয়। অতএব লক্ষ্য রেখো কার থেকে তোমরা তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করছো। (মুকাদ্দামায়ে মুসলিম)
উল্লেখ্য, কেউ বলতে পারেন, আমরা কোন গ্রন্থ পাঠ করে তার ভালটি গ্রহণ করব আর মন্দটা গ্রহণ করব না তাহলেই তো চলে? এ ক্ষেত্রে কথা হল আপনি যদি ভাল-মন্দ যাচাই-বাছাই করার পূর্ণ যোগ্যতা রাখেন, তাহলে তো সেটা ঠিক আছে। নতুবা অনুরূপ যোগ্যতার অভাব থাকায় আপনি মন্দটাকেই ভাল বুঝে গ্রহণ করে নিতে পারেন। তাহলে আপনি বিভ্রান্তির শিকার হবেন। এ কারণেই সাধারণ লোকদের জন্য নীতি হল তারা কোন গ্রন্থ নির্বাচন করতে চাইলে সর্বাগ্রে তার লেখক সম্বন্ধে যাচাই করে নিবেন।
২. সাধারণ লোক (অর্থাৎ যারা ধর্মীয় বিষয়ে বিজ্ঞ নন তারা) কোন বাতিলপন্থী লোকের বই বা তাওরাত, ইঞ্জীল, বেদ, উপনিষদ, পূরাণ, ত্রিপিটক প্রভৃতি বিধর্মীদের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা থেকে বিরত থাকবেন। তাদের পক্ষে এরূপ গ্রন্থ পাঠ বিভ্রান্তির আশংকা থেকে মুক্ত নয়। এ ক্ষেত্রেও পূর্বের ন্যায় কথা হল আপনি যদি ভাল-মন্দ যাচাই বাছাই করার পূর্ণ যোগ্যতা রাখেন, তাহলে তো আপনি এ ধরনের গ্রন্থ পাঠ করতে পারেন। নতুবা অনুরূপ যোগ্যতার অভাব থাকায় মন্দটাকেই ভাল বুঝে গ্রহণ করে নিলে আপনি নির্ঘাত বিভ্রান্তির শিকার হবেন। এ কারণেই সাধারণ লোকদের জন্য নীতি হল তারা কোন বাতিলপন্থীর লেখা গ্রন্থ বা ভিন্ন ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা থেকে বিরত থাকবেন।
৩. ফিকহী মাসআলা-মাসায়েল বিষয়ক কিতাবপত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে নীতি হল- যারা নিজেদের মাযহাবের মাসায়েল ও তার দালায়েল (দলীল-প্রমাণ) সম্বন্ধে পূর্ণ ওয়াকেফহাল নন তারা ভিন্ন মাযহাবের লোকদের লেখা মাসআলা-মাসায়েল বিষয়ক কিতাবপত্র পাঠ করা থেকে বিরত থাকবেন। (অন্য মাযহাবের লোকদের থেকে মাসায়েলও শুনবে না।) অন্যথায় নিজেদের মাযহাবের মাসআলার দলীল-প্রমাণ জানা না থাকার কারণে ভিন্ন মাযহাবের মাসআলাই সহীহ এবং নিজেদের মাযহাবের মাসআলা গলত মনে হওয়ায় বিভ্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
অনেককে এরূপ বিভ্রান্ত হয়ে কোন কোন মাসআলায় ভিন্ন মাযহাব অনুসরণ করতেও দেখা যায়। মনে রাখতে হবে চার মাযহাবের প্রত্যেকটিই সঠিক কিন্তু একেক মাসআলায় একেক মাযহাবের অনুসরণ কোন শ্রেণীর আলেমের নিকটই সঠিক নয়। মাযহাব অনুসরণের ক্ষেত্রে যেকোন একটিরই সর্বতোভাবে অনুসরণ হতে হবে। একই কারণে কোন গ্রন্থের কোন মাসআলা বা কোন বর্ণনা যদি নিজেদের মাযহাবের খেলাফ মনে হয় তাহলে সে অনুযায়ী আমল করা যাবে না, আমল করতে হবে নিজেদের মাযহাব অনুযায়ী। প্রয়োজন বোধ হলে নিজেদের মাযহাবের বিস্তারিত সবকিছু বিজ্ঞ আলেমদের থেকে জেনে নিতে হবে।
-এএ