রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

শিক্ষক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

।।দিলাওয়ার হুসাইন।।

প্রতিটি হ্নদমাজারে সম্মানের বেদিখানা অলংকৃত করেন শিক্ষক। তাঁর বুনে দেয়া স্বপ্নই ছাত্রের কোমল হ্নদয়ে প্রেথিত হয়। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকের তৈরী কল্পনাজগতে স্বাধীন পাখির মতো ডানা ঝাপটে উড়তে থাকে প্রতিটি ছাত্র। নিজ অজান্তেই নিজেকে কল্পনা করতে থাকে সাফল্যমণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের কাতারে। দৃঢ় প্রত্যয়ে আবদ্ধ হয় সে, আমাকেও কিছু একটা হতে হবে।

সমাজের উন্নয়ন চালিকা শক্তিই হলো শিক্ষক। তাঁরাই প্রস্তুত করে দেশের উন্নত ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত মানব প্রজন্ম। আর প্রতিটি শিক্ষকের মাঝে যে সমস্ত গুণাবলীর সমারোহ অতীব প্রয়োজন তন্মধ্যে উল্লেখ্য দু'টি গুন হলো : প্রীতি আর প্রিয়তা। প্রীতি অর্থ হলো: শিক্ষকের নিঃস্বার্থ সজীব ভালোবাসা, যা তার ছাত্রদের দিকে অবারিত ধারায় বয়ে যায়।

আর এটা আবশ্যকীয় অন্যথায় তিনি ছাত্রদের হ্নদমাজারে সজীবভাবে গৃহীত হবেন না। আর প্রিয়তা মানে হলো শিক্ষক কে ছাত্রদের কাছে প্রিয়, ঈস্পিত বা আনন্দময় হয়ে উঠতে হবে এবং এটি তার পাঠদানের অনবদ্য লাবণ্য ও ব্যবহারিক মাধূর্য দিয়েই অর্জন করতে হবে। এছাড়া তিনি যদি ভিন্ন পন্থায় নিজ প্রিয়তা অর্জনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন তবে নিজ ভারিক্কি ও সুম্মিত মর্যাদাটুকু হারাবেন।

শিক্ষকের জন্য পাঠদানের ক্ষেত্রে বাগ্মী হওয়া, মার্জিত ভাষা ও সুন্দর উপস্থাপন আবশ্যক। যেন কথা লুফে নেয়ার তাড়নায় শিক্ষার্থীর চোখ দীপ্তময় হয়ে উঠে। অন্তর প্রশান্তির অনাবিল কাননের সুখ অনুভব করে। অন্যথায় ছাত্ররা তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠবে। ছাত্রদের মনে তার জন্য লালিত শ্রদ্ধাবোধটুকু হারিয়ে যাবে। অনিচ্ছাসত্ত্বে ও তিনি পৌঁছে যাবেন বিরক্তির আস্তাকুড়ে।

বইভিত্তিক জ্ঞান বিতরনের সময় শিক্ষকের জন্য তুলনামূলক দূর্বল ছাত্রদের বিবেচনা করা। সে যদি বুঝতে সক্ষম হয় বাকী সবাই বুঝতে পারবে এটাই সাধারণ অনুমেয়। তাছাড়া একই বিভাগে বা শ্রেণীতে নিজ আচরণ বা কার্যকলাপের মাধ্যমে ছাত্রদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করা শিক্ষকের জন্য অনুচিত। এতে তিনি মুষ্টিময় কিছু ছাত্র ব্যতিরেকে সকলের কাছেই অপ্রিয় হয়ে উঠবেন। হারাবেন আপন প্রিয়তা ও সম্মানের খানিকটা। নিক্ষিপ্ত হবেন ইজ্জতের বাতিঘর থেকে ঘৃনার তল্লাটে।

বিভিন্নসময় বিভিন্ন ছাত্রঘটিত অন্যায়ের দরুন শিক্ষকগন রাগান্বিত অবস্থায় শাস্তি দিয়ে থাকেন। যদিও তা তাদের সংশোধনের নেপথ্যে হয়ে থাকে।কিন্তু রাগান্বিত অবস্থায় প্রদত্ত শাস্তি বেশিরভাগ নিজ সীমা পেরিয়ে দূর- বহুদূর গিয়ে পৌঁছে। যা অনেক ক্ষেত্রে ছাত্রদের জন্য হীতের বিপরীত বলে বাস্তবায়িত হয়। লাইনচ্যুত হয় সে। একগুঁয়েমী তার ঘাড়ে সিন্দাবাদের ভূতের ন্যায় চেপে বসে। দিগ্বিদিকহীন হয় তার অন্তর। সে ভুলে যায় তার দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা। তবে শিক্ষকমন্ডলী যদি স্থীরচিত্তে শাস্তির বিষয়টা সমাধা করেন ও উৎসাহমূলক কথাবার্তার মাধ্যমে তার অস্তিত্ব ও মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলেন তবে হয়তো অনেক ফুল মুকুলেই ঝড়ে যাবেনা। এ জাতি আরো অনেক মহাপুরুষের সাক্ষাৎ লাভ করবে।

আজ ছাত্র শিক্ষক সবাই শুধু ভালো ফলাফলের জন্য একযোগে হাল বেয়ে চলছে। অথচ লেখাপড়াটা শুধু ফলাফল কেন্দ্রিক হলে তার মাঝে একগুঁয়েমী বা নিরঙ্কুশ বিষণ্ণতা। হারিয়ে যাবে সত্তাগত প্রেথিত প্রতিভাপূর্ণ বহু ছাত্রের প্রতিভা। আবার এই লেখাপড়াটাই যদি নতুন কিছু শেখার আনন্দ ঘিরে থাকে তবে তা বিরক্তির কারণ হবেনা। তা হবে হ্নদয় প্রশান্তির অন্যতম খোরাক। শিক্ষক সমাজে কুর্ণিশ ঠুকে আবদার জানাবো, ফলাফলের উপর নয় বরং শিক্ষার উপর যদি বিষদ দৃষ্টি দেন তবে সু-শিক্ষার ফলে ছাত্ররা শিক্ষার মশাল এমনভাবে দীপ্ত করবে ভালো ফলাফল এদের আহ্বান করতে করতে পিছু নিবে।

একালের শিক্ষকদের দুর্দশা নিয়ে বহু ছাত্র ও শিক্ষককে আক্ষেপ করতে দেখেছি। তাদের বক্তব্য হলো; বর্তমানে শিক্ষকদের পূর্বসম্মান বলবৎ নেই।কিন্তু আমি নিজেকে কখনো এ দলে শামিল করতে পারিনি। কেননা আমি, আজব্দি দায়িত্ববোধসম্পন্ন, সম্মানের যোগ্য, সহ্নদয়বান, সুহ্নদসম্পন্ন শিক্ষককে অবহেলা আর অসম্মানের যাতাকলে পিষ্ট হতে দেখিনি। আদর্শবান, মমতাপূর্ণ, ছাত্রদরদে ব্যথিত কোন শিক্ষককে কুর্ণিশবিহীন নিজ রস্তা অতিক্রম করেছে আমার নজরে পড়েনি। তবে যারা আত্মসত্তাকে রজতলিপ্সা অর্জনে নিয়োজিত করেছেন, বিভোর হয়েছেন পার্থিব আকাঙ্খায়, তারাই সম্মানের দামে অনিহা আর অমর্যাদা ক্র‍য় করেছে।

রব্বে কারীমের অনুগ্রহে কিছু মনোকথা প্রকাশ করলাম। সব কথাই প্রকাশ করতে হবে এটা জীবন পথচলার জন্য কোন শর্ত নয়। অব্যক্ত কিছু কথা মনকুঠিরেই জমে থাকুক। তাতে ক্ষতি কি!

লেখক- শিক্ষার্থী, উচ্চতর হাদিস গবেষণা বিভাগ (২য় বর্ষ), শাইখ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ