মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর
বিগত দেড় বছর ধরে নতুন পৃথিবীর সঙ্গে বিশ্ববাসীর পরিচয়। এই পরিচিতি আর যাত্রাপথ স্বস্তির নয়। আতঙ্ক আর উদ্বেগের। করোনা মহামারি সারা পৃথিবীকেই নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে যুক্ত করেছে। মানুষের যাপিত জীবনে এনেছে পরিবর্তন। কোয়ারেন্টিন, হোমকোয়ারেন্টিন, লকডাউন, শাটডাউন নানা শব্দের সঙ্গে পরিচিত করিয়েছে। আমরা সামাজিক নৈকট্য আর মেলবন্ধনে বিশ্বাসী জাতি। অথচ আমাদের পরিচিত করিয়েছে ‘সামাজিক দূরত্ব’ নামে একটি নতুন ধারণার সঙ্গে। আর সবকিছুর মধ্যে জড়িয়ে ভয়ংকর অদৃশ্য শত্রু করোনা ছড়িয়ে যাচ্ছে মৃত্যুভীতি। মৃত্যু আর সংক্রমিত হওয়ার মিছিল বড় করছে। বাংলাদেশের ধর্মপ্রবণ ও উৎসবপ্রিয় মানুষের চিরচেনা দিনগুলোকেও এলোমেলো করে দিয়েছে।
এমন এক অগ্রগতির ধারায় করোনাকাল বড় রকম ছন্দপতন ঘটিয়েছে। স্থবির করে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি বা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির লাশ মানুষের মনে ভয় তৈরি করছে। স্বজনেরাও ভয় পাচ্ছেন। কেউ কারো লাশের পাশে যেতে রাজি নয়। করোনাকালে মানুষ চিনে গেছে। বিপদে কাছের মানুষ কাছের থাকে না। আবার দূরের মানুষ যে কোনোদিন চিনেও না সে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে।
দেশের এমন কঠিনময় সময়ে জনতার পাশে ছিলো অন্যতম ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। করোনায় মৃতদের দাফন করে সারাদেশে ব্যাপক প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন তারা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১০৬৭ মরদেহ গোসল, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করেছে। দলের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নির্দেশনায় দলের নেতাকর্মীরা নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। তাদের সেবার মধ্যে আছে দাফন-কাফন, ফ্রি অক্সিজেন বিতরণ, মাস্ক বিতরণ, রক্তসেবা, খাদ্য বিতরণ ইত্যাদি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সহযোগী সংগঠন ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের জয়েন্ট সেক্রেটারি মাওলানা শহিদুল ইসলাম কবির জানান, ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাবেসীরা দেশের প্রায় ২০ টি জেলায় ১০৬৭ জন মৃত দেহের লাশ দাফন করেছেন।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঠাকুরগাঁও জেলায় ২৫৫ জনকে গোসল ও দাফন-কাফন করেছে। চাঁদপুর জেলা ২১৩ জনের লাশ গোসল ও দাফন কাফন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
বরিশালে চরমোনাই ভলান্টিয়ার সার্ভিস ২৫০ জনের মতো মানুষকে ফ্রি অক্সিজেন বিতরণ করেছে। গোসল ও দাফন-কাফন ১৭৯ জন সম্পন্ন করা হয়েছে। ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস এর ব্যবস্থাও করেছে সেখানের দায়িত্বরত ভলান্টিয়াররা।
খুলনা মহানগরে গোসল, দাফন-কাফন করেছে ৯০ জন। অক্সিজেন দিয়েছে তিন শতাধিক লোককে, রক্ত সেবা চালু রেখে ৫০ জন ব্যক্তিকে রক্তও দেয়া হয়েছে সেখানে। ৬ শতাধিক কর্মক্ষম অসহায় মানুষকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন খুলনার ইসলামী আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকরা।
ঢাকা জেলা দক্ষিণ এর আওতাধীন দোহার থানায় এখন পর্যন্ত ৩৮ জনকে গোসল ও দাফন-কাফন করা হয়েছে। বাগেরহাটের ১০ জনের গোসল ও দাফন-কাফন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের গোসল ও দাফন-কাফন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। কুমিল্লা জেলা দক্ষিণে গোসল ও দাফন-কাফন করেছে ৬৭ জনকে।
যশোর জেলায় গোসল ও দাফন-কাফন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ২৫ জনের। অক্সিজেন সেবা প্রদান করা হয়েছে ১০ জনকে। সিলেট জেলায় ১৪ জনকে গোসল ও দাফন-কাফন করা হয়েছে।
পটুয়াখালী জেলায় ২১ জনকে গোসল ও দাফন-কাফন করা হয়েছে। বগুড়া জেলায় গোসল ও দাফন-কাফন করা হয়েছে ৪ জনের।
পিরোজপুর জেলায় ১ জনকে দাফন-কাফন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয় ১১ জনকে গোসল দাফন কাফন করেছে ইসলামী আন্দোলন। সিরাজগঞ্জে ৮ জনকে গোসল দাফন কাফন করেছে সংগঠনটি।
গোপালগঞ্জে ৪৫ জনকে ও ঝিনাইদহে ১ জনকে গোসল দাফন কাফন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় ৮ জনকে গোসল দাফন কাফন করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ায় গোসল দাফন কাফন করা হয়েছে ১৫ জনকে। ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলা শাখার গোসল ও দাফন কাফন এখন পর্যন্ত ৫ জনের খবর পাওয়া গেছে। তবে এ জেলার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম মহানগরে গোসল ও দাফন কাফন করা হয়েছে ২৩ জনকে।
এমডব্লিউ/