নুরুদ্দীন তাসলিম।।
করোনাভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রথমে ১৪ দিনের জন্য বন্ধ করা হলেও ডজনখানেক বার বাড়ানো হয়েছে এই ছুটি। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ৫০০ তম দিন। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে খুলতে পারে বলে জানানো হলেও আদৌ খুলবে কিনা তা জানা যাবে সেপ্টেম্বরেই।
এদিকে এই দীর্ঘ সময়ে বিভিন্ন বিদ্যালয় গরু-ছাগলের খামার ও মাদক সেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। দিন যতই যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা। ঝরে পড়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের যাত্রা দীর্ঘ হতে হতে এই সময়ে মোবাইল ইন্টারনেটসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার খবর আশঙ্কাজনক বলছেন শিক্ষাবিদ, মুহাদ্দিস ও জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া (যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসা) ঢাকার ইফতা বিভাগের মুশরিফ মুফতি মাহমুদুল হাসান জামশেদ।
তিনি বলছেন, চলমান পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের মানসিকতায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, যা তাদের পড়াশোনার মানসিকতাকে নষ্ট করে দিচ্ছে।
তিনি আরো বলছেন, ‘পড়াশোনা করে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে সন্তান নিজের পায়ে দাঁড়াবে, পরিবারের হাল ধরবে অনেক বাবা-মা-ই এমন আশা করে থাকেন, কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরাই যখন চরম অনিশ্চয়তায়; এক্ষেত্রে অনেক গরিব বাবা-মা হয়তোবা আগে থেকেই সন্তানকে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছেন; যেন প্রতিকূল পরিবেশের সাথে মিশে সন্তান নষ্ট হয়ে না যায়’।
তার ভাষায়, ‘অনেক বাবা-মা হয়তোবা সন্তানকে কাজে লাগাচ্ছেন সাময়িক সময়ের জন্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর আবারও ভর্তি করানোর ইচ্ছে আছে তাদের, তবে কাজে লেগে একটা পরিবেশের সাথে পরিচিত হয়ে গেলে পরবর্তীতে সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা ফিরে না আসার সম্ভবনা অমূলক নয়’।
তবে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি ও ঝরে পড়ার আশংকা থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে এই শিক্ষাবিদের পরামর্শ হলো, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ফোন কিংবা অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন সিলেবাস দেওয়া যেতে পারে, যার মাধ্যমে কিছুটা হলেও পড়াশোনার সাথে সম্পৃক্ত থাকবেন শিক্ষার্থীরা, এর কারণে বাবা-মা হয়তোবা তাদের কাজেও লাগাবেন না, কিছুটা পড়াশোনার সাথে সংযুক্ত থাকায় মানসিকভাবেও শিক্ষার্থীরা পড়াশুনার বিষয়ে একেবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন না’।
এদিকে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি হাফিজুদ্দীন বলছেন, ‘ক্লাসে ফেরায় অনিশ্চয়তার কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার আশঙ্কা প্রকট হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী যারা বাড়িতে আছেন গরীব অসহায় হওয়ার কারণে বাবা-মা তাদের কাজে লাগিয়ে দিচ্ছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু থাকলে শত দারিদ্রতায়ও বাবা-মা হয়তোবা এ কাজটা কখনো করতেন না।
তবে শুধু দারিদ্রতার কারণে যে বাবা-মা সন্তানকে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছেন এমন মনে করেন না তিনি। তার মতে, ‘প্রতিষ্ঠান বন্ধের এই যাত্রা দীর্ঘ হতে হতে শিক্ষার্থীদের নষ্ট হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থেকেই অভিভাবকরা হয়তোবা তাদের কাজে লাগিয়ে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করছেন’।
‘যারা কাজে লেগে যাচ্ছে তারা আদৌ ফিরে আসবেন কিনা তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার’।
তবে যেসব শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন বাসায় রয়েছেন তারা অসল সময় না কাটিয়ে আশপাশের নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের পরামর্শ অথবা বাড়ির আশপাশে যেসব ওলামায়ে কেরাম রয়েছেন তাদের নির্দেশনায় মুতালায় সময় কাজে লাগাতে পারেন। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে যেসব শিক্ষক ও আলেমরা বাড়িতে রয়েছেন তাদের উচিত ঝরে পড়ার আশঙ্কা থেকে রক্ষা করতে আশপাশের শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছুটা হলেও পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখা- বলছিলেন শিক্ষাবিদ মুফতি হাফিজুদ্দীন।
কেএল