মোস্তফা ওয়াদুদ
নিউজরুম এডিটর
বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিলো সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় ইঞ্জিনিয়ার বানাবে। ডাক্তার বানাবে। অনেক বড় ব্যারিস্টার বানাবে। এজন্য প্রিয় কলিজার টুকরা সন্তানকে ভর্তি করেছিলেন বিদ্যালয়ে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত শিক্ষার আলো বিলানোর কারখানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খুলেনি। বন্ধের ফিরিস্তিও অনেক দীর্ঘ। মোট ৫০০ দিন।
গত বছরের ১৮ মার্চ বন্ধ করা হয়েছিলো দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। এরপর ধারাবাহিকভাবে বন্ধই রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মাঝে মধ্যে খোলার কথা শোনা গেলেও সবশেষে আর খোলে না। খুলবে খুলবে করে করেও পার হয়ে গেলো আজ ৫০০ দিন। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে আজ ২০২১ সালের ২৯ জুলাই।
সেদিন থেকে এই ৫০০ টি দিন খুলেনি কোনো স্কুলের দরজা। বিদ্যালয়ে যায়নি কোনো শিক্ষার্থী। বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে দেশের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কোথাও কোথাও স্কুলের ভবনে গরু-ছাগল লালন-পালন করা হচ্ছে। যেখানে থাকা দরকার ছিলো ছাত্র-শিক্ষক। সেখানে এখন বিচরণ করছে গরু-ছাগল আর রাখাল। গোয়ালঘর বানানো এসব প্রতিষ্ঠান ঠিক কবে আবার শিক্ষক-ছাত্রের আনাগোনায় মূখর হবে-তা জানে না কেউ।
বর্তমানে চলমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার নির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারেনি সরকার। তবে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে খুলতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-এমন একটি বক্তব্য গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন শিক্ষাসচিব। তবে সেটাও ঠিক থাকবে কি না এখনি জানা যাচ্ছে না।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বন্ধ থাকা দেশের স্কুল-কলেজ ৩০ মার্চ খুলে দেয়া হবে। আর সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেণীকক্ষে সরাসরি ক্লাস শুরু হবে আগামী ২৪ মে থেকে। তার এক সপ্তাহ আগে ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবাসিক হল খুলে দেয়া হবে।’
কিন্তু এপ্রিল থেকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার সেই ঘোষণা মোতাবেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভব হয়নি। দ্বিতীয় ঢেউ কিছুটা কমার পর গত ২৬ মে ফের শিক্ষামন্ত্রী জানান, পর্যায়ক্রমে ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তার এ ঘোষণার পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়ায় কয়েকটি জেলায় লকডাউন দেয়া হয়। এর মধ্যে সারাদেশে বাড়তে থাকে সংক্রমণের হার। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ জুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়।
বাংলাদেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় এ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত করা হয়। ১২ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর নোটিশ দিয়ে বলেন, এ সময়ে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ইবতেদায়ী ও কওমি মাদরাসা বন্ধ থাকবে।
তবে সরকারের সিদ্ধান্ত আছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া। সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব এমন তথ্যই জানিয়েছেন। কিন্তু কতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে দ্রুত সময়ে টিকার আওতায় আনা যাবে, এ প্রশ্ন রয়েই যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকা ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়ার জন্য তাদের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হলেও অনেক শিক্ষার্থী এখনো টিকার প্রথম ডোজই দেয়নি।
সবশেষে ৫০০ তম দিন পেরিয়ে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো ইঙ্গিতই পাওয়া যায়নি। আরও কতদিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তা সময়ই বলে দিবে। এখন শুধুই অপেক্ষা। তবে বাংলাদেশের ৩ কোটি শিক্ষার্থীর আশা, শীঘ্রই অবসান ঘটবে তাদের অপেক্ষার। আবার তারা মধু আহরণে যাবেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। আলো বিলাবেন পৃথিবীজুড়ে।
এমডব্লিউ/