খাদিজা ইসলাম।।
আরিফ আজাদের জনপ্রিয় বহুল আলোচিত একটি বই প্রত্যাবর্তন। সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া তরুণ তরুণীর পথ হারানোর গল্প সাজিয়েছেন গল্পে গল্পে। অতপর যেভাবে নীড়ে ফিরেছেন তারা। আলোর সন্ধান পেয়েছেন, অন্তরাত্মা জাগ্রত হওয়ার গল্প। দ্বীনে ফেরার অনুভূতি কেমন হয় তার বাস্তব চিত্র সাহিত্যের মোড়কে গল্পে গল্পে উঠে এসেছে প্রত্যাবর্তনে।
দুনিয়ার মিছে মায়ায় নিজেকে ডুবিয়ে, পাপে জড়িয়ে পড়ে যুবকরা। ছিটকে পড়ে জীবনের আসল গন্তব্য থেকে। ভুলে যায় তার কি করা উচিত। কেনইবা পৃথিবীতে রব্বে কারীম তাকে পাঠিয়েছে। সব কিছু ভুলে প্রতিনিয়ত ছুটে চলে নফসের পায়রবি করে। ভুল পথে চলতে চলতে হঠাৎ যখন আলোর সন্ধান পায়, খুঁজে পায় আপন ঠিকানা ঠিক তখনি বাধা আসে চারদিক থেকে। মজা করে সবাই বলে কিরে হুজুর হয়ে গেছিস? এসব প্রশ্ন আর হাসি তামাশা রীতিমতো তাদের ভাবিয়ে তুলে। আলোর সে ঝলক চোখে পড়তে না পড়তেই কোথায় যেন হারিয়ে যায়। মনের অলিগলিতে অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়।
কেন্দ্রের বাইরে জন্ম নেওয়া মানব যখন আপন আলয়ে ফিরে, কেউ যেন সেটা মেনে নিতে পারে না। অসম্ভব! দাড়ি টুপি মাদ্রসার ছেলেরা পরবে তুমি কেন? সবকিছুকে টপকিয়ে তারা যখন সত্যিকার অর্থেই নীড়ে ফিরে। শয়তান যেন তখন তাকে গাফেল করতে উঠেপড়ে লেগে যায় । তবুও নীড়ে ফেরা পাখিরা, নিজে কেন্দ্রের বাইরে আসে না। কেননা তাদের অন্তর আজ পরিপূর্ণ।
প্রত্যাবর্তন বইটিতে শুধু নাম মাত্র মুসলিম ঘরে জন্ম নেওয়া মানব নয়; বেদ্বীন থেকে যারা দ্বীনে ফিরেছে তাদের জীবনের উত্থান পতনও লেখক গল্পে গল্পে তুলে ধরেছেন। কিভাবে হেদায়েত পেয়েছেন অন্ধকার জগতের মানুষ গুলো।
আধো আধো ধর্ম পালন করা মানবীর গল্পও রয়েছে বইটিতে। মূলত প্রত্যাবর্তন বইটি আপন ঠিকানার সন্ধান। অন্ধকার পথের যাত্রীরা যেভাবে আলোর পথে এসেছেন তারই কথামালার প্রবাহে নির্মিত এই বইটি। সবশেষে লেখক শান্তির ধর্মের জয়গান গেয়েছেন দ্বীনে ফেরা মানুষের জীবন কে আবর্ত করে।
বইটির কিছু প্রিয় বাক্য
১. সিগারেটের ধোয়া সবাই দেখে, অন্তর পোড়া ধোয়া দেখা যায় না।
২. ফোটাঁ ফোটা পড়তে পড়তে শেষ ফোটায় জীবন পরিবর্তন রাস্তা পরিবর্তন।
৩. দিনশেষে তবুও যদি ঘাটে ফেরার মতো কিছু গোছাতে পারি।
৪. মিছে একটি রঈীন চশমা লাগিয়ে জগৎ দেখতে ব্যস্ত আমরা।
৫. টাকা, সম্মান, খ্যাতি, গাড়ি বাড়ি, নারী প্রভৃতিকে সুখের ঠিকানা হিসেবে শিক্ষা দেওয়া হয়।
৬. কুরআন এসেছিল আমাদের পড়ার জন্য। আলমারির উপরে তুলে রেখে, সংশয়বাদীদের অতি দূর্বল যুক্তিতে নেতিয়ে পড়ার জন্য নয়।
৭. হারাম সম্পর্ক শেষ না হলে হালাল সম্পর্ক শুরু হয়না।
৮. জীবনের গল্প আকঁতে গেলে বারবার মুছে ঠিক করতে হয়।
৯. আল্লাহর পথ সুদীর্ঘ। আমরা সেখানে কচ্ছপের ন্যায় পরিভ্রমণ করছি। পথের শেষ সীমায় পৌছাতে হবে এটা আমাদের লক্ষ্য নয়;বরং মৃত্যু অবধি পথের উপর টিকে থাকায় আমাদের লক্ষ্য।
১০. সত্য বুঝার চেষ্টা না করলে মানুষ আর দুপেয় প্রাণীর মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কি?
১১. ইহজীবনে হয় তো কাঁটা গুলোকে দলাই মোচড়ায় করে পার হওয়া যাবে, পর জীবনে পাই পাই করে হিসেব দিতে হবে।
১২. শেকড় ধরে লোকে যদি টানাটানি করে, ইজ্জত বাঁচাতে শেষ মেশ স্যূট তো বহু দূর কী বাত;লুঙ্গীটাও থাকবেনা, দাদা।
বইটি পড়ে আমার চোখের কোণে কোথাও যেন জলবিন্দু জমেছে। মনে হয়েছিলো আমাদের মতো তরুণ তরুণীদের জন্যই এই বইটি। আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে কেউ এই বই পড়লে তার ইচ্ছে হবে একবার দেখি আলোর সেই পথ। বোধোদয় হবে, আপন ঘরে ফেরার।
এক নজরে প্রত্যাবর্তন
নাম: প্রত্যাবর্তন
লেখক: আরিফ আাজাদ
মোট পৃষ্ঠা: ২২১
প্রকাশনি: সমকাল
মূল্য: ৩০০ টাকা
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।
এনটি