আন্তর্জাতিক ডেস্ক: দিল্লি দাঙ্গার তদন্তে ভারতীয় পুলিশের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল আগে থেকেই। এবার ওই ঘটনার একটি মামলার তদন্তকে প্রহসন বলে কটাক্ষ করলেন স্থানীয় একটি আদালত। শুধু তা-ই নয়, সুষ্ঠু তদন্ত না করায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের ২৫ হাজার রুপি জরিমানাও করেছেন বিচারক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ভয়াবহ দিল্লি দাঙ্গার সময়ে গুলিতে গুরুতর জখম হন মোহম্মদ নাসির নামে এক ব্যক্তি। এই ঘটনার অভিযোগ জানানো হলে দিল্লি পুলিশকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর দায়ের করতে বলেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক এফআইআর না করে যুক্তি দেখানো হয়, নাসির যাদের নামে অভিযোগ করেছেন, তাদের কেউই দাঙ্গার সময়ে দিল্লিতে উপস্থিত ছিলেন না। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ নিয়েই সোমবার ক্ষোভপ্রকাশ করেন অতিরিক্ত দায়রা জজ বিনোদ যাদব। তিনি বলেন, দিল্লি পুলিশ নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করেনি। খুব দায়সারা এবং ঠাট্টার ছলে এই তদন্ত করা হয়েছে। এরপরই রায় ঘোষণা করেন বিচারক। তাতে পুলিশকে নাসিরের অভিযোগের ভিত্তিতে পৃথক এফআইআর দায়ের করার নির্দেশ এবং রায়ের একটি কপি দিল্লির পুলিশ কমিশনারের কাছে পাঠাতে বলা হয়।
এদিন ভুলভাল তদন্ত করায় পুলিশকে ২৫ হাজার রুপি জরিমানারও নির্দেশ দেন বিচারক। ভজনপুর পুলিশ স্টেশনে নিযুক্ত স্টেশন হাউস অফিসার এবং তিনি যার অধীনে কাজ করেন, তাদের এই জরিমানার অর্থ জমা দিতে বলা হয়েছে।
ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন গত বছর পার্লামেন্টে পাস হওয়ার পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ-সহিংসতা শুরু হয়। দিল্লির বিক্ষোভ একপর্যায়ে দাঙ্গায় রূপ নেয়। আইনটির পক্ষে এবং বিপক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাতের মাধ্যমে দ্রুত তা ধর্মীয় দাঙ্গায় পরিণত হয়। প্রায় তিন দিন ধরে চলা নারকীয় তাণ্ডবে দিল্লিতে মুসলিমদের বাড়ি-ঘর দোকানপাট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
দিল্লির ওই দাঙ্গায় প্রাণ হারান অন্তত ৫৩ জন, যাদের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের। পরে মুসলিমদের বাড়ি-ঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যাকাণ্ডে দিল্লি পুলিশ সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। দিল্লি দাঙ্গায় ‘পুলিশ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন’ করেছে বলে অভিযোগ করে সংস্থাটি।
তদন্ত প্রতিবেদনে অ্যামনেস্টি বলে, দিল্লির দাঙ্গায় হিন্দুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে দাঙ্গার মূল টার্গেট ছিল মুসলিমরা। দাঙ্গা স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়েছিল বলে মনে হয় না। কারণ এতে হতাহতের সংখ্যা হিন্দুদের তুলনায় তিনগুণ বেশি হয়েছে মুসলিমদের। এছাড়া মুসলিমদের ব্যবসা এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, বিবিসিি
এনটি