।।মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী।।
কম দিন হয়নি পৃথিবীতে আছি।
নিষ্ঠুর সুন্দর ধোকা ও মায়ার পৃথিবীতে।
কম দিন তো হয়নি,
অনিশ্চয়তায় ভরা
পরীক্ষা কেন্দ্র
এই পৃথিবীতে আছি।
থাকবো না বলে আরাম করে বসাও হয়নি এখানে।
চলে যাওয়ার অপেক্ষায় কাটছে প্রতিটি প্রহর,
কসম আল্লাহর, এক পলকের জন্যও বুকের ধুকপুক বন্ধ হয়নি।
পরম প্রাপ্তি ও প্রিয়মিলনের অস্থিরতায় কেটেছে রাত্রদিন।
ডাক আসবে বলে সারাটি জীবন প্রবল প্রশান্তি মনে
অধীর আগ্রহে হাতিফে মালাকূতে কান পেতে রই।
জানতাম, যে কোনো সময় ডাক এসে যাবে ওপারের,
লাহূত, জাবারূত, আরওয়াহের রহস্যলোকে,
দু'দিন আগে আর পরে।
হারিয়ে যাওয়া শিশুর মতো বাড়ি ফিরে পাওয়ার আশায়,
কেঁদে কেঁদে পাড়ি দিই পৃথিবীর পথ।
আমায় পেয়েছ যারা, দেখেছ আমার হাসি; মোটেও পাওনি আমায়,
দেখোনি ভেতরের দুঃখ, সীমাহীন বিরহব্যথা নিদারুন পেরেশানি।
মালিকের শপথ।
যাওয়ার বেলা জানিনা কী হয়?
খারাপ ছাত্র ছিলাম। উদাস, অলস।
প্রস্তুতি বলতেই নেই।
যদি বলা হয়, কী নিয়ে যাচ্ছ সেথায়?
জবাব, তাঁর সামনে পেশ করার মতো তেমন কিছুই না।
নোংরা কালিমাখা বিবর্ণ উত্তরপত্র। ভুলেভরা জীবনের খাতা।
আশা। ক্ষমা ও রহমতের আশা,
এসব ছাড়া সত্যি বলতে আর কিছুই না।
আশার সুতোয় ভর করে চলে যেতে চাই,
ডাক এসে গেলে আর ভয়ের ভনিতা করে কোনো লাভ নাই,
দয়ার ভরসা করেই চলে যেতে চাই তাঁর সকাশে।
যিনি ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন,
আমিও ক্ষমার কাঙাল, ক্ষমাই ভরসা কেবল,
ক্ষমা পাবো বলে দৃঢ় আশাবাদী,
বাজে কথা বলে তো লাভ নেই, মূলত ক্ষমাই চাই।
যখন আসবে ডাক হাসিমুখে চলে যাব,
নির্লজ্জ বেহায়ার মতো বান্দা গুনাহগার, হয়ে ক্ষমার ভিখারি।
বদ্ধ পৃথিবী ছেড়ে আত্মা আমার মেলবে মুক্তডানা,
ক্ষমার ঘোষণা পেয়ে রবের পরম দয়ার নম্র আদরে,
রূহের সাময়িক নিবাস ইল্লিয়্যিনে,
যেথা পরম করুণাময়ের অপার করুণা।
গুনাহে বিধ্বস্ত পাখায় মাগফিরাতের বিচ্ছুরিত আলো দেখে,
ঈমান ও আশার পাখায় সামান্য ভর করে,
আল্লাহর রহমতের সিড়িতে পূর্ণ ভরসা রেখে
দ্রুততার সাথে প্রাণ আমার পাড়ি দেবে নি:সীম আকাশ।
দীর্ঘ কঠিন সফর অপার্থিব জগতে একেবারে নতুন আমি,
মালিকের রহমতই যেথা বিকল্পহীন একমাত্র অবকাশ।
১ জিলহজ্জ ১৪৪২|| কবিতার মতো কথা।
[লেখকের ফেসবুক থেকে নেয়া]
-কেএল