মোস্তফা ওয়াদুদ: জন্মগতভাবেই পুরুষ-নারী আলাদা সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালার অপরূপ নারী পুরুষের জন্য এক মহা নেয়ামাত। ঠিক একইভাবে নারীর জন্যও পুরুষ অন্যন্য নেয়ামাত। এ নেয়ামতকে অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। পুরুষের সৃষ্টি যেমন আলাদা। তেমন নারীর সৃষ্টিও ভিন্ন। পুরুষের আমল ও নামাজের নিয়ম-কানুন আলাদা। ঠিক একইভাবে নারীদেরও নামাজের নিয়ম-কানুন আলাদা।
হাদিসে পাকে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটাই বলেছেন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অনেকদিন ধরেই মতানৈক্য চলছে। কেউ বলছেন পুরুষ ও নারীর নামাজ একই রকমের। পুরুষ আর নারীর নামাজে আলাদা কোনো পার্থক্য নেই। আবার কেউ পার্থক্য করছেন। আসল বিষয় কী? চলুন জেনে আসি।
এ বিষয়ে জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া পাকিস্তান করাচি বিননূরী টাউনের দারুল ইফতায় প্রশ্ন করেন জনৈক ব্যক্তি। তিনি প্রশ্নে উল্লেখ করেন, নারীরা যদি পুরুষের মতো করে নামাজ পড়ে, তাহলে তার হুকুম কি?
প্রশ্নের জবাবে বিননূরী টাউন থেকে বলা হয়, উল্লিখিত সুরতে যদিও নামাজ হয়ে যাবে। কিন্তু এটি সুন্নতের খেলাফ। কেননা পুরুষ ও মহিলাদের নামাজের মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। আর সেই পার্থক্যের প্রধানত হলো সতর ও পর্দা। যেমনটি সুস্পষ্টভাবেই বর্ণিত রয়েছে।
এই কারণে নারীদের নামাজের রোকনসমূহ আদায়ের ক্ষেত্রে পর্দার লক্ষ্য রাখা জরুরি। সুতরাং নারী-পুরুষের পুরো নামাজের মাঝে অনেক রকমের পার্থক্য রয়েছে। নিম্মে সেসব পার্থক্য তুলে ধরা হলো।
প্রথম পার্থক্য: তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত উঠানোর ক্ষেত্রে। যার ব্যাখ্যা হলো, পুরুষ কান পর্যন্ত হাত উঠাবে। আর মহিলারা কাঁধ পর্যন্ত হাত তুলবে।
দলীল: হজরত ওয়াইল ইবনে হাজার রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উপস্থিত হলাম। নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম আমাকে এরশাদ করলেন, যখন তুমি নামাজ পড়ো তখন নিজের হাত কান পর্যন্ত উঠাও। এবং মহিলারা নিজের হাত কাঁধ বরাবর উঠাবে।
দ্বিতীয় পার্থক্য: দাঁড়ানোর সময় হাত বাধার ক্ষেত্রে। পুরুষের জন্য নাভির নিচে হাত বাধামুস্তাহাব। যদিও ফুকাহায়ে কেরামের মধ্যে এ বিষয়ে মতানৈক্য রয়েছে। তবে নারীদের বিষয়ে সমস্ত আলেম একমত হয়েছেন যে, তারা কিয়ামের (দাঁড়ানোর) সময় সময় নিজের হাত বুকের উপর রাখবে। আর ওলামায়ে কেরামের ইজমা শরীয়তের দলিল হিসেবে গণ্য।
দলীল: মহিলারা নিজের হাত বুকের উপরে রাখার বিষয়ে উলামায়ে কেরাম একমত পোষণ করেছেন। (মুস্তাখলিছুল হাকায়েক শরহে কানযুক দাকায়েক, পৃষ্ঠা নম্বর:১৫৩)
তৃতীয় পার্থক্য: রুকু অবস্থায়। আর সেটা হলো পুরুষেরা রুকুর মধ্যে নিজের বাহুকে শরীর থেকে আলাদা রাখবে। আর মহিলারা নিজের বাহুকে শরীরের সাথে মিলিয়ে রাখবে। আলাদা করবেনা।
দলীল: হজরত আতা বলেন, মহিলারা জড়োসড়ো হয়ে রুকু করবে। নিজের হাতকে পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে। যতটা চাপানো সম্ভব ঠিক ততটাই চাপিয়ে রাখবে। (মুসান্নিফে আব্দুর রাজ্জাক, খণ্ড নং-৩, পৃষ্ঠা নং-৫০, হাদিস নং- ৫৯৮৩)
চতুর্থ পার্থক্য: সেজদা অবস্থায়। আর সেটা হলো পুরুষরা সেজদার মধ্যে বাহুকে শরীর থেকে পৃথক করে রাখবে। আর নারীরা পুরুষের মতো খুলে সেজদা করবেনা। বরং নিজের পেটকে নিজের রানের সাথে মিলিয়ে রাখবে। বাহুকে শরীরের সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং কনূইসমূহকে জমিনের উপর বিছিয়ে দিবে।
দলীল: হজরত ইয়াজিদ ইবনে উবাই হাবীব থেকে বর্ণিত, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজেরত দুইজন নারীর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন তোমরা সেজদা করবে, তখন নিজের শরীরের কিছু অংশ জমিনের সাথে মিলিয়ে দাও। কেননা মহিলারা (তাদের সেজদার হুকুম) পুরুষের মতো নয়। (আবু দাউদ শরীফের হাদিস, নামাজের অধ্যায়, পৃষ্ঠা নং-১০৩)
পঞ্চম পার্থক্য: সিজদা থেকে উঠে বৈঠকের ক্ষেত্রে। আর সেটা হলো, মহিলারা নিজের উভয় পা কে ডানপাশে বের করে এভাবে বসবে যে ডান রান-বাম রানের সাথে মিলে গেছে।
দলীল: হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন মহিলারা নামাজের মধ্যে বসবে, তখন এক রান অন্য রানের উপর রাখবে। যখন সিজদা করবে, তখন পেটকে রানের সাথে মিলিয়ে রাখবে। যা নারীর জন্য পর্দা হবে। আল্লাহ তাআলা তার দিকে দেখছেন। আর বলছেন হে আমার ফেরেশতারা, তোমরা সাক্ষী থাকো! আমি এই মহিলাকে ক্ষমা করে দিলাম।
বি.দ্র. মূল মাসআলায় অনেক বেশি দলীল ছিলো। সংক্ষপে বর্ণনার জন্য একটি করে দলীল উল্লেখ করা হয়েছে।
বিননূরী টাউনের ফতোয়ার লিঙ্ক:
এমডব্লিউ/