মুফতি আব্দুর রহিম: এলমে হাদীসের নামকরণের কারণ বা অন্য শব্দে আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থের মাঝে সম্পর্ক কি? এ বিষয়ে কয়েকটি মতামত রয়েছে।
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. فتح الباري কিতাবে লেখেছেন, حديث হচ্ছে قديم এর বিপরিত শব্দ। যেহেতু আল্লাহর কালাম قديم। তাই হুজূর সা. এর কালামকে حديث বলা হয়েছে।
আল্লামা শাব্বির আহমদ ওসমানী রহ. فتح الملهم কিতাবের মুকাদ্দামায় লেখেছেন, حديث শব্দটি وَأَمَّا بِنِعمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّث হতে গৃহিত। মূলত আল্লাহ তায়া‘লা এই সূরাতে হুজূর সা. এর উপর তিনটি নেয়া‘মতের বর্ণনা দিয়েছেন। এবং প্রত্যেক নেয়া‘মতের উপর শুকরিয়া আদায় করার একেকটি পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন।
أَلَم يَجِدكَ يَتِيمًا فَآوَىٰ এই নেয়া‘মতের শুকরিয়ায় আল্লাহ তায়া‘লা হুকুম দিয়েছেন فَأَمَّا اليَتِيمَ فَلَا تَقهَر
وَوَجَدَكَ عَائِلًا فَأَغنَىٰ এই নেয়া‘মতের শুকরিয়ায় আল্লাহ তায়া‘লা হুকুম দিয়েছেন وَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنهَر
وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدَىٰ এই নেয়া‘মতের শুকরিয়ায় আল্লাহ তায়া‘লা হুকুম দিয়েছেন وَأَمَّا بِنِعمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّث
এখানে নেয়া‘মত দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে শরীয়‘তের জ্ঞান। মর্ম হচ্ছে, আল্লাহ তায়া‘লা হুজূর সা. কে যে শরীয়‘তের শিক্ষা দান করেছেন, সেগুলো যেন হুজূর সা. অন্যদের নিকট পৌঁছিয়ে দেন। এবং নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে এইসব আহকামের উপর আমল করেন। আর হুজূর সা. এর কথা ও কাজকেই হাদীস বলা হয়েছে।
সবচাইতে উত্তম ও নির্ভেজাল উক্তি হচ্ছে, হুজূর সা. এর কথা ও কাজের জন্য হাদীস শব্দ বিশেষায়িত করা হয়েছে। যা استعارة العام للخاص এর প্রকার। এই استعارة নেয়া হয়েছে স্বয়ং হুজূর সা. এর কিছু কথা থেকে, যাতে হুজূর সা. নিজেই নিজের কথা ও কাজের জন্য হাদীস শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেমন বর্ণিত আছে, صحيح مسلم ৪ / ২২৯৮: وَحَدِّثُوا عَنِّي، وَلَا حَرَجَ এমনিভাবে আরো একটি হাদীসে বর্ণিত আছে مشكاة المصابيح ১ / ৮৬ : من حَفِظَ عَلَى أُمَّتِي أَربَعِينَ حَدِيثًا فِي أَمرِ دِينِهَا بَعَثَهُ الله فَقِيهًا وَكُنتُ لَهُ يَومَ القِيَامَة شَافِعاً وشَهِيداً এ জাতীয় আরো অনেক বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে হুজূর সা. এর কথা ও কাজের জন্য হাদীস শব্দের ব্যবহার স্বয়ং হুজূর সা. হতেই প্রমাণিত।
علم الحديث এর موضوع বা বিষয়বস্তু
কোন কোন আলেমের মতে হুজূর সা. এর কথা, কাজ ও অবস্থা হচ্ছে علم الحديث এর موضوع। আবার কারো কারো মতে হাদীসের সনদ ও মতন علم الحديث এর موضوع। আল্লামা কিরমানি রহ. এর মতে হুজূর সা. এর সত্তাই হচ্ছে علم الحديث এর موضوع।
আল্লামা সুয়ূতী রহ تدريب الرأوي কিতাবে লেখেছেন, আমার উস্তাদ আল্লামা মুহী উদ্দিন কাফেজী রহ. আল্লামা কিরমানী রহ. এর আপত্তি করতেন যে, হুজূর সা. জাত বা সত্তা কি করে علم الحديث এর موضوع হয়। এটি তো علم الطب এর موضوع হতে পারে, علم الحديث এর নয়। কিন্তু আল্লামা সুয়ূতী রহ. বলেন, আমার উস্তাদের উপর আমার আশ্চর্য হয়! কারণ, আল্লামা কিরমানী রহ. তো হুজূর সা. এর জাত বা সত্তাকে একজন মানুষ হিসেবে علم الحديث এর موضوع বলেননি। হুজূর সা. একজন রাসূল হিসেবে علم الحديث এর موضوع বলেছেন, রাসূল হিসেবে হুজূর সা. এর সত্তা علم الطب এর موضوع নয়।
সার কথা হচ্ছে, রাসূল সা. এর সত্তা রাসূল হিসেবে علم الحديث এর موضوع। আর হুজূর সা. এর কাজ, কথা ও অবস্থা علم رواية الحديث এর موضوع। হাদীসের সনদ ও মতন علم دراية الحديث এর موضوع।
علم الحديث এর غرض وغاية বা উদ্দেশ্য
দুনিয়াতে হুজূর সা. এর দ্বীনের উপর চলতে পারা, আখেরাতে জান্নাত লাভ করা, মোট কথা উভয় জাহানের সফলতা علم الحديث এর উদ্দেশ্য।
লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া জহিরুদ্দিন আহমদ মাদরাসা মানিকনগর, ঢাকা।