মুযযাম্মিল হক উমায়ের হযরতওয়ালা হারদুঈ আল্লামা আবরারুল হক হক্কী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা বলেন, প্রকৃত মুসলমান, সৎ চরিত্রবান মুসলমান কাউকে কষ্ট দেয় না৷ মানুষকে কষ্ট দেয়া তো দূরের কথা তাঁরা আল্লাহ তাআলার সৃষ্ট কোন মাখলুকাতকেই কষ্ট দেন না৷ তাঁদের দ্বারা কেউ যেনো কষ্ট না পায় সেইদিকে সর্বদাই সজাগ-সচেতন থাকতেন৷ অন্যদের সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশের প্রতি তাঁরা ছিলেন অতন্দ্র প্রহরী৷ তাঁদের মহৎ এই গুণটির দুটি ঘটনা নিচে ধরে তুলা হলো,
সাইয়েদ আহমদ কবীর রিফায়ী রাহিমাহুল্লাহু তাআলা নামে একজন বুযুর্গ ছিলেন৷ তাঁর জীবনীতে পাওয়া যায়, তাঁর প্রতিদিনের আমল ছিলো, আযান হওয়ার সাথে সাথেই তিনি মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেন৷ আযান তো সাধারণত মাগরিবের নামায ব্যতিত অন্যান্য নামাযের পনেরো মিনিট বা আধাঘন্টা আগে দেয়া হয়৷ একদিন ঘটনা, তিনি লেখাপড়া বিষয়ে কিছু কাজ করতেছিলেন৷ গায়ে এ্যারাবিয়ান জুব্বা ছিলো৷ জুব্বাটি বেশ বড় ছিলো৷ জুব্বার আঁচল একদিকে মাটিতে বিছিয়ে ছিলো৷ সেই আঁচলে বিড়াল এসে ঘুমিয়ে পড়ে৷ বিড়াল সাধারণত অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানুষপ্রীয়৷ এই সময়ে আযান হয়ে যায়৷
এখন কী করবেন চিন্তায় পড়ে যান৷ বিড়ালের আরামের দিকে তাকালে সারা জীবনের নিয়মিত আমল আযানের সাথে সাথে মসজিদে যাওয়া ছুটে যায়৷ অন্যদিকে মসজিদে চলে গেলে বিড়ালের ঘুম ভেঙে যাওয়ার কারণে বিড়ালটি কষ্ট পায়৷ উভয়দিকই তাঁর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং করণীয় কাজ৷ কিন্তু সমাধান কী তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান৷ অবশেষে উভয়টি করণীয় কাজ পালন করার প্রিয় ইচ্ছেকে জিইয়ে রাখতে এবং বিড়ালকে কষ্ট না দিয়ে আরাম পৌঁছানোর লক্ষ্যে একটি পদ্ধতি বের করলেন৷
তিনি ঘর থেকে কাঁচি আনালেন৷ এবং জামার যে দিকে বিড়াল শুয়ে আছে সেটিকে কেঁচি দ্বারা কেটে দিলেন৷ এতেকরে কেটে পেলা জুব্বার অংশটিতে বিড়াল স্বাচ্ছন্দে আরামে ঘুমিয়ে আছে৷ আর তিনি কাটা জামা নিয়েই প্রতিদিন আযানের সাথে সাথে মসজিদে যাওয়ার আমল বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে পথ ধরলেন৷ নামায পড়ে এসে দেখেন, বিড়াল ঘুম পেড়ে চলে গেছে৷ তিনি জামার কাটা অংশটি নিয়ে জামার সাথে সেলাই করে নিলেন৷
হযরত বলেন, এরচেয়েও আরেকটি আশ্চর্য ঘটনা বলি৷ এক বুযুর্গ চিনি কেনার জন্যেদোকানে গেলেন৷ চিনি কিনে বাড়ি চলে আসেন৷ বাজার থেকে বাড়ি এক মাইল বা আধা মাইলের দূরত্ব ছিলো৷ বাড়িতে গিয়ে যখন চিনির পোটলা খুললেন, দেখেন চিনির সাথে তিন চারটি পিঁপড়াও চলে গেছে৷ পিঁপড়া দেখে তার মনে হলো, এরা তো নিজেদের বংশ, এবং পরিবার ছেড়ে চলে এসেছে৷ এরা একাকী হয়ে যাওয়ার কারণে তো এদের কষ্ট হচ্ছে৷ এই ভেবে তিনি সাথে সাথেই পোটলা নিয়ে দোকানের দিকে রওয়ানা হলেন৷
দোকানদার ক্রেতার দ্রুত যাওয়া দেখে ভয় পেয়ে গেলেন৷ এবং বললেন, ভাই! ওজনে কী কম হয়েছে? না আপনার অন্য কোন অভিযোগ আছে? উত্তরে বুযুর্গ বললেন, আপনার উপর কোন অভিযোগ নেই৷ আমি আসছি তার কারণ হলো, এই চিনির সাথে তিন চারটি পিঁপড়া চলে গেছে৷ তাই ভাবলাম তাদের পরিবার ছেড়ে চলে যাওয়াতে এদের কষ্ট হবে৷ তাদেরকে পৌঁছে দেয়ার জন্যে আপনার দোকানে নিয়ে আসলাম৷ যেনো তারা তাদের পরিবারের সাথেই থাকতে পারে৷ একাকীত্বের কারণে তাদের কষ্ট হোক সেটি আমি চাই না৷
হযরত বলেন, এখন বলুন, যারা পিঁপড়া এবং বিড়ালকেও কষ্ট দেন না৷ তাদের হকের প্রতি এতো লক্ষ্য রাখেন৷ তাহলে তাঁরা কি মানুষকে কষ্ট দিতে পারেন? এই ছিলো বুযুর্গদের আসল পরিচয়৷ বর্তমানে আমাদের অবস্থা কেমন হয়ে গেলো?
(এসব তো দূরের কথা, বর্তমানের অবস্থা তো হলো, মানুষকে মানুষ মনে করা হয় না৷ মানুষকে মেরে ফেলা সেসব থেকে সহজ হয়ে গেছে৷ আর মানুষকে কষ্ট দেয়া তো কোন ব্যাপারই না৷ অন্যের হক নষ্ট করা তো নিত্যদিনের রুটিন৷ মহান রাব্বে কারীম আমাদেরকে মাফ করুন৷ আমাদের মধ্যে প্রকৃত মুসলমান হওয়ার বৈশিষ্ট দান করুন৷ আমীন৷
-এটি