আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এবার বিশ্বব্যাপী ইসলাম বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে গেমের মাধ্যমে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক করে বিবৃতি দিয়েছে মিশরের আল আজহার।
শিশু-কিশোর ও তরুণদের মধ্যে অনলাইন গেমের আসক্তি ক্রমাগত বাড়ছে। তাছাড়া করোনাকালে শিশু-কিশোরদের গেমের প্রতি আসক্তি বেড়েছে বহু গুণ। এসব ভিডিও গেমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক প্রেক্ষাপট। বিশেষত এসবের মাধ্যমে মুসলিম তরুণ-কিশোরদের অন্তর থেকে হারিয়ে যাচ্ছে ইসলামী শিষ্টাচার, শালীনতা ও শ্রদ্ধাবোধ।
সম্প্রতি অনলাইন ভিত্তিক ফ্রন্টনাইট (Fortnite) গেমস নিয়ে মুসলিম শিশু-কিশোরদের সতর্ক করেছে মিসরের অনলাইন ফতোয়া বিভাগ। মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় স্থাপনা পবিত্র কাবা ঘরের আকৃতিতে একটি ঘর নিয়ে ভাঙার দৃশ্য গেমে প্রকাশ করা হয়। পবিত্র হজের সময় এ ধরনের গেম মুসলিমদের জন্য অবমাননাকর বলে মনে করছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা।
গত মঙ্গলবার (২৯ জুন) আল আজহার ফতোয়া গ্লোবাল সেন্টার-এর নিজস্ব ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, অনলাইন ভিত্তিক এ ধরনের গেমসের মাধ্যমে ঘৃণা, সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড এমনকি আত্মহত্যার মতো ঘটনাও সংঘটিত হয়েছে। তাই এসব গেমস সম্পর্কে ফতোয়া সেন্টার ইতিপূর্বে অনেক বার সতর্ক করেছিল।
সম্প্রতি ফ্রন্টনাইট গেমসে পবিত্র কাবা গৃহের আকৃতি ভাঙার দৃশ্য ও তা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণ শিশুদের অন্তরে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করবে। নতুন প্রজন্মের অন্তরে ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও এর পবিত্র স্থাপনাগুলোর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধা কমে আসবে।
ইসলামী শরিআহ, আকিদা ও ধর্মীয় শিষ্টাচারের প্রতি মানুষের অন্তরে বিদ্রূপাত্মক ও ধর্মহীন মনোভাব তৈরি করে এ ধরনের ভিডিও গেমস নিষিদ্ধে দাবী জানিয়েছে আল আজহারের ফতোয়া বিভাগ। তাছাড়া অনেক গেমস মানুষের মধ্যে ঘৃণা, হিংসা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা সংঘটিত করে যা পরিহার করা সবার কর্তব্য।
এ ধরনের অনলাইন গেমস সম্পর্কে দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও পরিবারের বা-মাকে সচেতন হওয়ার জানিয়েছে আল আজহার ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইলেক্ট্রোনিক ফতোয়া। এসব গেমসের ব্যাপারে সতর্কতার আহ্বান জানিয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ফতোয়া বিভাগ। আর তা হলো:
সন্তানদের প্রতি সব সময় সজাগ দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করা। সন্তানদের কাছে দীর্ঘ সময় মোবাইল ও ইলেট্রনিক্স ডিভাইস না রেখে সময়ে সময়ে তাতে চোখ রাখা। অবসর সময়ে সন্তানদের বিভিন্ন পারিবারিক ও জ্ঞানভিত্তিক কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত করা এবং নির্ধারিত সময়ে ব্যয়াম ও শরীর চর্চার মাধ্যমে সন্তানদের কর্মব্যবস্ত রাখা।
তরুণ বয়সীদেরকে সময় সম্পর্কে সচেতন করা। সন্তানদেরকে জীবনমুখী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা ও উত্তম আদর্শ উপস্থাপনের মাধ্যমে তাদেরকে সমাজের কল্যাণকর সদস্যে পরিণত করা। সন্তানদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশের ব্যবস্থা করা ও বিভিন্ন কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত করা।
আপাত দৃষ্টিতে বাবা-মায়ের কাছে সাধারণ বিষয় হলেও তরুণ সন্তানদেরকে ইতিবাচক কাজে উৎসাহ দেওয়া।
সন্তানদেরকে নিজেদের যাচাই-বাছাই ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সুযোগ দেওয়া। সন্তানদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের ব্যাপারে সচেতন করা। পারিবারিক ও সামাজিক বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণের মাধ্যমে তাদেরকে বাস্তব জীবনের সঙ্গে পরিচিত করা।
পড়াশোনার সময় শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া এবং বন্ধু-বান্ধব ও যাদের সঙ্গে মেলামেশা করে তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা।
বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসে উপকারিতা ও অপকারিতা সন্তানদের সামনে সুন্দরভাবে তুলে ধরা। এসবের ব্যবহার সবার মধ্যে ব্যাপক প্রভাব তৈরি করে। তাছাড়া অন্যরা যেন তার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করা। সূত্র: আল জাজিরা নেট
-এটি