আওয়ার ইসলাম ডেস্ক: দেশে একদিনে করোনায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ভেঙে আবারো নতুন রেকর্ড হলো। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৮২২ জন। এর মাত্র একদিন আগে অর্থাৎ ২৮ জুন দেশে ৮ হাজার ৩৬৪ জন শনাক্তের তথ্য দিয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা ধরা পড়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এটাই ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগী শনাক্তের রেকর্ড। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরো ১১৫ জনের। এসময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১৩।
এ নিয়ে টানা চারদিন একশোর উপরে মৃত্যু এবং এক সপ্তাহের মধ্যে দুবার শনাক্তের রেকর্ড ভাঙা দেখলো দেশ। কঠোর লকডাউনে যাওয়া কত জরুরি ছিলো, তা শনাক্ত ও মৃত্যু এই পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আরো জানানো হয়, করোনায় মোট মৃত্যের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫০৩ জন এবং মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৯ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮ জন। এ আগে মঙ্গলবার করোনায় শনাক্ত হয়েছিলো ৭ হাজার ৬৬৬ জন এবং মারা যায় আরো ১১২ জন। এর আগে গত ২৭ জুন দেশে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ছিল ১১৯ জনের।
গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৫৫০ জন। যা নিয়ে মোট সুস্থ ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৫০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৩৫ হাজার ১০৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ১৩।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) মানদণ্ড অনুযায়ী, কোনো দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা বোঝার একটি নির্দেশক হলো রোগী শনাক্তের হার। কোনো দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। সেখানে কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশে রোগী শনাক্ত ২০ শতাংশের বেশি হচ্ছে।
বর্তমানে দেশের অধিকাংশ জেলা করোনার ভয়াবহতার ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৪ থেকে ২০ জুন নমুনা পরীক্ষা ও রোগী শনাক্তের হার বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্তাহিক রোগতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ৪০টিই সংক্রমণের অতি উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত বছর ৮ মার্চ; প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রথম মৃত্যুর আড়াই মাস পর গত বছরের ১০ জুন মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ছাড়ায়। এরপর ৫ জুলাই ২ হাজার, ২৮ জুলাই ৩ হাজার, ২৫ অগাস্ট ৪ হাজার, ২২ সেপ্টেম্বর ৫ হাজার ছাড়ায় মৃতের সংখ্যা।
এরপর কমে আসে দৈনিক মৃত্যু। ৪ নভেম্বর ৬ হাজার, ১২ ডিসেম্বর ৭ হাজারের ঘর ছাড়ায় মৃত্যুর সংখ্যা। এ বছরের ২৩ জানুয়ারি ৮ হাজার এবং ৩১ মার্চ মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়ায়।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর ১৫ দিনেই এক হাজার কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু ঘটলে গত ১৫ এপ্রিল মৃতের মোট সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর পরের এক হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটাতে মাত্র দশ দিন সময় নেয় করোনাভাইরাস; মোট মৃতের সংখ্যা ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায় ২৫ এপ্রিল।
তার ১৬ দিন পর ১১ মে করোনাভাইরাসে মৃত্যু ১২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার এক মাস পর ১১ জুন তা ১৩ হাজার ছাড়িয়েছিল।
দিনে মৃত্যুর রেকর্ডও হয়েছে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে। ১৯ এপ্রিল ১১২ জনের মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে সময় টানা চার দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল একশর ওপরে।
শুক্রবার আবার দৈনিক মৃত্যু শত ছাড়িয়ে ১০৮ এ গিয়ে পৌঁছায়। শনিবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭৭ জনের। এদিকে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় আগামী ১ জুলাই থেকে সারা দেশে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
-এটি