শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ইসরায়েলের জেলে ফিলিস্তিনি তরুণীকে টানা ৩৩ দিন নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মায়েস আবু ঘোষ (২৪)। ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরের বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী। কালান্দিয়া শরণার্থী শিবিরের এ বাসিন্দাকে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট গ্রেফতার করে বর্বর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এর পর তাকে সাজা দেওয়ার আগে জিজ্ঞাসাবাদের নামে টানা ৩৩ দিন নির্যাতন চালানো হয়, দেওয়া হয় ধর্ষণের হুমকিও। সে নির্যাতনের বিষয় নিয়ে মায়েস কথা বলেছেন তুরস্কের গণমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির সঙ্গে।

মায়েস বলেন, আমাকে ধরে নেওয়ার পর তারা আমাকে নিয়ে ঠাট্টা শুরু করে দেয়। তারা বারবার বলছিল, জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালে আমার মৃত্যু হবে।

যখন মায়েসকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তার পিরিয়ড চলছে। ধরে নেওয়ার পর চেয়ারের সঙ্গে মায়েসের হাত এবং গোড়ালি শক্তভাবে বেঁধে রাখা হয়। কোনোভাবে যেন মায়েস ঘুমিয়ে পড়তে না পারেন, সে ব্যবস্থাও করেন তারা।

মায়েস বলেন, এর পর আমি আর হাঁটার শক্তি পাচ্ছিলাম না। পরে জেলাররা ধরাধরি করে আমার জন্য নির্ধারিত জায়গায় নিয়ে যায়।

হাতকড়ার কারণে মায়েসের হাত থেকে অনবরত রক্ত ঝরেছে। এমন সময় মায়েসকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাওয়া হলে সে অস্বীকৃত জানায়। এর পর তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন ইসরায়েলি সেনা কর্মকর্তারা।

মায়েস বলেন, তার পিরিয়ড চলাকালে তাকে কোনো ধরনের প্যাড বা অন্তর্বাস পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।

আল মাসকোবিয়া ইন্টারোগেশন সেন্টারে জিজ্ঞাসাবাদের নামে এভাবে তাকে ৩৩ দিন নির্যাতন করেন ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের বর্বর সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

এ সময় তার ওজন ১২ কেজি (২৬.৫ পাউন্ড) কমে যায়।

শরীরে ও মাথায় আঘাত করা হয়েছে মায়েসকে। অসহ্য ব্যথা কমাতে ব্যথানাশক ওষুধ চান মায়েস। কিন্তু তাকে দেওয়া হয়নি পেইন কিলার।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় মায়েসকে নির্যাতনের কারণে কারাগারে থাকা বন্দিদের চিৎকার শুনতে বাধ্য করা হতো। এ সময় তাকে বলা হতো যে, তোমার জন্য তারচেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে।

মায়েস বলেন, নির্যাতন তো করেছেই, তারা আমাকে ধর্ষণ করার হুমকিও দিয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অবৈধ সমাবেশে অংশ নেওয়ার অভিযোগে সেই সময় মায়েসকে ১৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরে ১৫ মাস কারাবাসের পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

যে বিরজেইত বিশ্ববিদ্যালয়ে মায়েস পড়েন সে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহুদিন ফিলিস্তিনি অঞ্চলে আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্র ছিল। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪১৪ শিক্ষার্থীকে ধরে নিয়ে গেছে ইসরাইল।

এ বিষয়ে মায়েস বলেন, বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে কথা বলেন। এটি অধিকার। কিন্তু আমরা এখানে বিক্ষোভ দেখালে আমাদের গ্রেফতার করা হয়। এরপর ইসরাইলের জেলে আমাদের অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে আমাকে বলা হয়, আমার কৃতকর্মের সাজা হিসেবে মৃত্যু প্রাপ্য।

তিনি জানান, আটক ফিলিস্তিনিদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় ভয় দেখানো হয় এই বলে যে, তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হবে এবং পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করা হবে।

২০১৬ সালেই মায়েসের ঘর ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এর পর ইসরাইলি বাহিনী তার ভাইকে হত্যা করে।

মায়েস বলেন, আমার ওপর চাপ বাড়াতে তারা আমার ছোট ভাইকে গ্রেফতার করে।

জেলে কোনোভাবেই মায়েসকে চুল বাঁধার সুযোগ দেওয়া হয়নি। কেননা তাকে চুল ধরেই কিলঘুষি ও মারধর করা হতো।

মায়েসকে এ ৩৩ দিন কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি। অব্যাহত নির্যাতন চালানো হয়েছে তাকে। ইন্টারোগেশন সেন্টারের সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও বহন করে চলেছেন ফিলিস্তিনি এ তরুণী।

এনটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ