নুরুদ্দীন তাসলিম।।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে এবারও হজে সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এবার শুধু সৌদি নাগরিক ও সৌদিতে থাকা মোট ৬০ হাজার হাজিকে নিয়ে হজ অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার সৌদি হজ ও উমরাহ মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা দিয়েছে।
এই ঘোষণার ফলে এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হজে অংশ না নিতে পারার বিষয়টি নিশ্চিত হলো। ফলে বাংলাদেশ থেকেও এবার হজে যেতে পারবেন না কেউ।
সৌদি কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তে প্রেক্ষিতে লাগাতার দু’বছর হজ থেকে বঞ্চিত হলেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের হাজিদের মতো বাংলাদেশের হজ প্রার্থীরাও। পরপর দু’বছর হজে যেতে না পারায় মনের গভীরের সুপ্ত বাসনা এখন বেদনা হয়ে ঝরছে হজপ্রার্থীদের।
এমনই এক হজপ্রার্থী তাসনিফ আবিদ। হজের জন্য সব কাজ সম্পন্ন করে শেষ মুহুর্তে জানতে পারলেন তিনি এবছর যেতে পারছেন না। এ নিয়ে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি প্রতিবেদককে বলছেন, সাধারণত মানুষের জীবনের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা থাকে মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ তায়ালার ঘর জিয়ারত করা, লাব্বাইক ধ্বনিতে কাবা প্রাঙ্গণ মুখরিত করা, নবীর রওজায় দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করা, নবীজির দেশে গিয়ে নিজের ব্যাকুলতা ছড়িয়ে দেওয়া; কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে সীমিত পরিসরে যে হজের ব্যবস্থা চালু করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ, দুর্ভাগ্য সে তালিকায় অন্য অনেকের মতো আমিও যুক্ত হতে পারিনি।
এটা ভেবে শান্ত্বনা পাচ্ছি যে , আল্লাহ তায়ালা যে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এতে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত। সর্বোপরি মনের মধ্যে ব্যথা থেকেই যায় -হজে যেতে পারলাম না। তবে এবার হজে যেতে না পারলেও মনের বেদনা কিছুটা লাঘব করতে কখনো কখনো আনমনে গেয়ে উঠি - ‘মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়’ গজলটি। হয়তো সে আশা পূর্ণ হবে শিগগির, তাকবীর ধ্বনিতে মুখরিত করতে পারব কাবা প্রাঙ্গণ। সে পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার কাছে হায়াত এবং তৌফিক চাই।
বেশ কয়েকবার হজে যাওয়া মাওলানা আব্দুল জলিল এবারো যেতে চেয়েছিলেন হজে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে তিনি আটকা পড়েছেন সুদূর এই বাংলাদেশে। তার মনের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রথমবারে হাজীদের মনে ব্যথা থাকে যে হজ করব। প্রথমবার হজ পালন করার পর এই ইচ্ছাটা আরোতীব্র হয়, একবারে কখনো তুপ্ত হয়না মন- আমার কাছে অন্তত তাই মনে হয়।
হাদীসেও বর্ণিত হয়েছে হজ বিষয়টা কখনো তৃপ্ত হওয়ার মত না। তাই কয়েকবার হজে গেলেও এবছর যেতে না পারায়ও বেশ কষ্ট হচ্ছে। আসলে হজে যেতে না পারার যে কষ্ট হয় তা বলে বোঝানোর মত কোন ভাষা আছে বলে আমার জানা নেই- বলছিলেন মাওলানা আব্দুল জলিল।
তবে সব পরিস্থিতি বিবেচনায় সৌদি কর্তৃপক্ষ হজের অনুমতি না দেওয়ায় আমাদের কিছুই করার থাকছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন একমাত্র উপায় আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া কান্নাকাটি করা, তিনি যেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দেন এবং আমরা আগের মতো আবারো হজে যেতে পারি।
এদিকে গত দু'বছর ধরে হজের চেষ্টা করেও হজে যেতে না পেরে নিজে আবেগের কথা জানালেন আশিকুর রহমান নামে আরও একজন। তিনি বলছেন, করোনা মহামারীর কারণে অনেক কিছু চালু হচ্ছে আবার অনেক কিছুই বন্ধ থাকছে। মহামারীর এই বিধি-নিষেধের কবলে পড়ে পরপর দু’বার হজে যেতে পারলাম না। এর আগে কখনও হজে যাননি আশিকুর রহমান, তাই অনেকটা উদগ্রীব হয়ে আছেন বলে জানালেন তিনি।
তিনি বলছেন, এক অদৃশ্য আকর্ষণ যেন আমাকে বারবার কাবার কালো গিলাফ ও মদিনার সবুজ গম্বুজের দিকে ডাকছে; তবে মাঝখানে কোন এক তারকাটা আটকে রেখেছে আমাকে। তবে সব শেষে আশায় বুক বাঁধছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, ইনশাআল্লাহ আমি নিজের চোখে দেখবো কাবার গিলাফ, সালাম নিবেদন করব নবীজির রওজায়।
এটি/কেএল