মুফতি আব্দুর রহিম: আজ আলোচনা করা হবে হাদীস গ্রন্থসমূহের শ্রেণী বিন্যাস করা নিয়ে। হাদীসগ্রন্থ প্রনয়নের বিভিন্ন ধরন ও পদ্ধতি রয়েছে। এসব গ্রন্থের নামও বিভিন্ন ধরনের। নিম্নে এর কতিপয় প্রসিদ্ধ পদ্ধতি উল্লেখ করা হল:
১. الجامع: যে সব হাদীসগ্রন্থে (১) আকীদা-বিশ্বাস (২) আহকাম (শরিয়াতের আদেশ-নিষেধ (৩) আখলাক ও আদব (৪) তাফসীর (৫) সীরাত ও ইতিহাস (৬) ফিতান ও আশরাত অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা ও কিয়ামতের আলামত (৭) আত্মশুদ্ধি (৮) মানাকিব ইত্যাদি সকল প্রকারের হাদীস বিভিন্ন অধ্যায়ে সন্নিবেশিত হয়, এমন গ্রন্থকে الجامع বলে। এই স্তরের কিতাব দুই টি।
ক. সাহীহ বুখারী
খ. জামি‘ তিরমিযী এর অন্তর্ভুক্ত।
সহীহ মুসলিমে যেহেতু তাফসীর ও কিরাআত সংক্রান্ত হাদীস খুবই কম, তাই কোন কোন হাদীস বিশারদের মতে তা الجامع শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত নয়।
২. السنن: যেসব হাদীসগ্রন্থে কেবল মাত্র শরী’আতের হুকুম-আহকাম ও ইসলামীক জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় নিয়ম-নীতি ও আদেশ-নিষেধমূলক হাদীস একত্রিত করা হয় এবং ফিকাহগ্রন্থের ন্যায় বিভিন্ন অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ সজ্জিত হয় এমন গ্রন্থকে السنن বলে। যেমন- সুনানে আবী দাঊদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ ইত্যাদি। তিরমিযী শরীফও এই হিসেবে সুনানগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
৩. المسند: যে সব হাদীসগ্রন্থে সাহাবীগণের বর্ণিত হাদীসসমূহ তাঁদের নামের আর্ধাক্ষর অনুযায়ী অথবা তাঁদের মর্যাদা অনুযায়ী সংকলিত হয়, ফিকহের পদ্ধতিতে সংকলিত হয় না এমন গ্রন্থকে المسند বলে। যেমন- হযরত আয়শা রহ. কর্তৃক বর্ণিত সমস্ত হাদীস তাঁর নামের শিরোনামের অধীনে। ইমাম আহমদ রহ.-এর মুসনাদগ্রন্থ, মুসনাদে আবী দাঊদ তায়ালিসী রহ. ইত্যাদি এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
৪. المعجم: যে হাদীসগ্রন্থে মুসনাদ গ্রন্থের পদ্ধতিতে এক একজন উস্তাদের নিকট থেকে প্রাপ্ত হাদীসসমূহের পর্যায়ক্রমে সন্নিবেশ করা হয় এমন গ্রন্থকে المعجم বলে। যেমন- ইমাম ত্বাবরানী রহ. সংকলিত আল- মু’জামুল কাবীর।
৫. التراجم: বিশেষ কোন সূত্রে বর্ণিত হাদীস নিয়ে যে কিতাব সংকলন করা হয়।
৬. الوحدان: সুনির্দিষ্ট একজর রাবী হতে বর্ণিত হাদীস যে কিতাবে সংকলন করা হয়।
৭. التخارج: যে কিতাবে সূত্র-বিহীন উল্লেখকৃত হাদীসগুলোকে সূত্রসহ সংকলন করা হয়।
৮. الجزء: সুনির্দিষ্ট মাসআলার সাথে সম্পৃক্ত অনেকগুলো হাদীস এর সংকলনকে الجزء বলে।
৯. المفرد: সুনির্দিষ্ট এক ব্যক্তি থেকে বর্ণিত হাদীস যে কিতাবে সংকলন করা হয়।
১০. الغريب: যে কিতাবে কোন মুহাদ্দিসের অনেক শিষ্যের মধ্য থেকে এক জনের تفردات অর্থাৎ ব্যতিক্রম বর্ণনাগুলোকে সংকলন করা হয় যা উক্ত মুহাদ্দিসের অন্য কোন শিষ্য থেকে বর্ণিত হয়নি।
১১. المستدرك: যেসব হাদীস বিশেষ কোন হাদীসগ্রন্থে শামিল করা হয়নি অথচ তা সংশ্লিষ্ট গ্রন্থকারের শর্তে পূর্ণমাত্রায় উত্তীর্ণ হয়, সে সব হাদীস যে গ্রন্থে সন্নিবেশ করা হয় তাঁকে المستدرك বলা হয়। যেমন- ইমাম হাকিম নিশাপুরী রহ.-এর المستدرك গ্রন্থ।
১২. الرسالة: যে ক্ষুদ্র কিতাবে মাত্র এক বিষয়ের অথবা এক রাবীর হাদীসসমূহ একত্র করা হয়েছে।
১৩. الصحاح الستة: বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ- এই ছয়টি গ্রন্থকে একত্রে সিহাহ সিত্তাহ বলে। কিন্তু কতিপয় বিশিষ্ট আলেম ইবনে মাজাহ এর পরিবর্তে ইমাম মালিক রহ.-এর মুয়াত্তাকে, আবার কিছু সংখ্যক আলেম সুনানে-দারামীকে সিহাহ সিত্তার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। শায়েখ আবুল হাসান সিন্ধী রহ. ইমাম ত্বাহাবী রহ. সংকলিত شرح معانى الاثار (ত্বাহাবী শরীফ) গ্রন্থকে সিহাহ সিত্তার অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এমনকি ইবনে হাযাম ও আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. ত্বাহাবী শরীফকে নাসায়ী ও আবূ দাঊদ শরীফের স্তরে গণ্য করেছেন।
১৪. صحيحان: সাহীহ বুখারী ও সাহীহ মুসলিমকে একত্রে صحيحان বলা হয়।
১৫. سنن أربعة: সিহাহ সিত্তার অপর চারটি গ্রন্থ আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ এবং ইবনে মাজাহকে একত্রে سنن أربعة বলা হয়।
১৬. العلل: যে কিতাবে প্রত্যেক হাদসি কিংবা প্রত্যেক বাবের طرق الحديث রাবীদের ইখতেলাফসহ বর্ণনা করা হয়।
১৭. الأطراف: যে কিতাবে হাদীসের মতনের অংশ বিশেষ উল্লেখ করা হয়, আার হাদীসের সনদগুলো পূর্ণ উল্লেখ করা হয় অথবা বিশেষ কিতাবের দিকে নিসবত করা হয়।
১৮. الأربعينات : যে কিতাবে কোন বিষয়ের চল্লিশ হাদীস উল্লেখ করা হয়।
লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া জহিরুদ্দিন আহমদ মাদরাসা মানিকনগর, ঢাকা।