আবদুল্লাহ তামিম।।
যখন জীবনের একটি বৎসর অতিবাহিত হয়ে যায় তখন মানুষ জন্ম বার্ষিকী, জন্মদিন বা বার্থ-ডে পালন করে। এতে সীমাহীন আনন্দ-উল্লাস করে। মােম বাতি জ্বালায়। বিশাল আকারের কেক কাটে। আরাে কত কী! তা আল্লাহই ভাল জানেন।
এই জন্মোৎসব সম্পর্কে প্রখ্যাত কবি আকবর ইলাহাবাদী কবিতার একটি পংক্তি খুবই তত্বমূলক, সেখানে তিনি বলেছেন,
به همان اور گره لیے ایل پرس جاتا
جب سالگره هری تو عقیده یه که
যার মর্মার্থ হল- আল্লাহ তায়ালা জীবনে যতগুলাে বছর দান করেছেন তার একটি বৎসর হাতছাড়া হয়ে গেল! তাই এটা আনন্দের বিষয় না ক্রন্দনের?
বস্তুত এটা তাে ছিল আফসােস ও আক্ষেপের বিষয় যে, জীবনের একটি বৎসর আমার থেকে বিদায় নিয়ে গেল। আমার পিতা হযরত মুফতি শফী রহ. তার তেইশ বৎসর বয়স থেকে নিয়ে বাকী জীবনে জন্ম দিবসকে শােক দিবস হিসেবে কাটিয়েছেন। যখন তার জীবনের একটি বৎসর অতিবাহিত হত তখন তিনি মরসিয়া পাঠ করতেন। (সাধারণত মানুষের মৃত্যুর পর তার উপর মরসিয়া ক্রন্দন করা হয়।) যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক জ্ঞান দান করেন তাহলে আমরা নিশ্চয় বুঝতে সক্ষম হব, বাস্তবিক পক্ষেই যে সময়টুকু অতিবাহিত হয়ে গেছে তা আর কখনাে ফিরে আসার মত নয়। তাই তার উপর আনন্দ-উল্লাস করার কোনই যৌক্তিকতা নেই। বরং আমরা লক্ষ্য করলে দেখব, এটি আমাদের আগামী দিনের চিন্তার উৎস এবং অনাগত দিনগুলােকে কাজে লাগানাের মাইলফলক! আল্লাহ আমাদের কে বােধোদয় দান করুন।
আমাদের জানতে হবে কাজ তিন প্রকার!
হযরত ইমাম গাজ্জালী রহ. বলেন, দুনিয়াতে যত কাজই হচ্ছে বা মানুষ মাত্র কাজই করছে তা তিন ভাগে বিভক্ত।
প্রথমত: কাজটা হবে কল্যাণকর ও মঙ্গলজনক। চাই সে কল্যাণ দীনি হােক বা দুনিয়াবী ।
দ্বিতীয়ত: কাজটা হবে ক্ষতিকর বা ধ্বংসাত্মক। সে ক্ষতি চাই দ্বীনি হােক আর দুনিয়াবী ।।
তৃতীয়ত: কাজটা এক দিকে যেমন মঙ্গল ও কল্যাণহীন অন্য দিকে তেমনি তাতে কোন ক্ষতিকর দিকও নেই। না পার্থিব না পরত্রিক।
উক্ত তিন প্রকারের তৃতীয় প্রকার হল অহেতুক কাজ। তাই এটি বর্জনীয়। এছাড়াও দ্বিতীয় প্রকার তাে দ্বিধাহীন চিত্রেই ছেড়ে দেয়া অত্যাবশকীয়। কারণ তা ক্ষতিকর। উপরক্ত কথাগুলো যদি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে তৃতীয় প্রকারও (যাতে উপকার বা ক্ষতি কোনটিই নেই) ক্ষতিকর হিসেবেই বিবেচিত হবে। কারণ, যখন মানুষ এ ধরণের কাজে লিপ্ত হয়ে নিজের মূল্যবান সময় ব্যয় করতে শুরু করে তখন সময় নষ্ট হওয়ার বিচারে প্রকারান্তরে এটাও ক্ষতিরই শামিল।
সুতরাং, তর্তীয় প্রকারের কাজে লিপ্ত হয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করা আদৌ সঙ্গত হবেনা। দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলা যেতে পারে যে, এক ব্যক্তি একটি দ্বীপে প্রবেশ করল। যেখানে স্বর্ণের একটি স্তুপ রয়েছে। কুপের মালিক প্রবেশকারী কে বলল, এখানে তােমার যতক্ষণ থাকার অনুমতি রয়েছে ততক্ষণ তােমার যাচ্ছে স্বর্ণ নিতে পার। কিন্তু জেনে রেখাে, আমি হঠাৎ যে কোন মুহুর্তে তােমার এখানকায় অবস্থানাধিকার বাতিল করে দেব। আর এ-ও জেনাে যে, বাতিলের পর তুমি আর এক বিন্দু স্বর্ণও উঠাতে পারবে না।
আর আমি কখন তােমার অবস্থানাধিকার বাতিল করবো তাও তােমাকে জানাচ্ছিনা, আর বাতিলের পর তােমাকে দ্বীপ থেকে জোর পূর্বক বের করে দেয়া হবে ।
সুধী ! একটু ভেবে দেখুন, উক্ত পরিস্থিতিতে প্রবেশকারী ব্যক্তি কি একটি মুহুর্তও অযথা বিনষ্ট করবে? সে কি এটা ভাববে যে, এখনও হাতে যথেষ্ট সময় রয়েছে, একটু বিশ্রাম করে নেই, পরে স্বর্ণ সংগ্রহ করবাে? নিশ্চয় নয়। বরং সে সর্বক্ষণ আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবে, কীভাবে কত বেশী নেয়া যায়। কারণ, সে যা কুড়িয়ে নিবে তাই তার। এখানে অন্য কেউ অংশীদার হবে না। ঠিক এভাবেই আমাদের কেও স্বল্প পরিসরের এ মূল্যবান সময় নেকী অর্জনে ব্রতী হতে হবে। সূত্র: জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ
-এটি