শায়েখ আহমাদুল্লাহ।।
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে কেউ কোন পোস্ট বা কমেন্ট করলে তাকে তাচ্ছিল্য ও বিদ্রুপ করার জন্য আমরা হাহা রিয়েক্ট দিয়ে থাকি। যদি শুধু মজা বা রসিকতা করে এমন রিঅ্যাক্ট দিয়ে থাকি এবং যার পোস্টে করছি তিনি নিজেও এটাকে মজার ছলে নেন তাহলে সেটা ভিন্ন কথা; কিন্তু যদি এর দ্বারা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে পোস্টদাতাকে তাচ্ছিল্য বা বিদ্রুপ করা, তাহলে এটা হারাম ও সম্পূর্ণ নাজায়েজ একটি কাজ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা হুজরাতে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন অন্য কাউকে নিয়ে বিদ্রুপ না করে, ঠাট্টা না করে’।
আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের ইজ্জত, সম্মান নষ্ট করা আমাদের জন্য হারাম করে দিয়েছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজে বলেছেন, এই জায়গা, এই মাস, এই সময়টা যেমন আল্লাহর কাছে সম্মানিত তেমনি আল্লাহ তায়ালার কাছে মানুষের ইজ্জতও সম্মানিত। কাউকে কোনভাবে তাচ্ছিল্য বা বিদ্রুপ করা ঠিক না।
আজকাল ফেসবুকে হা হা রিয়েক্ট দেওয়া বা বিদ্রুপ করা একটা নরমাল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখেন, যারা আখিরাতে বিশ্বাস রাখেন, যারা বান্দার প্রতিটি বিষয়ের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এ বিশ্বাস রাখেন, তারা বিদ্রূপাত্মকভাবে কোন পোস্টে হাহা রিয়েক্ট দিতে পারেন না।
আমরা কিন্তু এটাকে দোষণীয় মনে করি না, মনে করি- এটা ফেসবুকীয় একটি বৈধ কাজ। রুটিন ওয়ার্কও মনে করে অনেকে।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা! আল্লাহর ওয়াস্তে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, এই কাজটি থেকে ফিরে আসুন। কাউকে নিয়ে বিদ্রুপ করে কোনভাবে হাহা রিয়েক্ট দিবেন না। একজন ঈমানদারকে আপনি কষ্ট দিলেন, জবাবে তিনি হয়তো এমন কিছু বললেন যা গ্রহণযোগ্য নয়। সম্ভব হলে সুন্দর, মার্জিত, যুক্তিনির্ভর ভাষায় আপনি তার খন্ডন করুন, তাকে বোঝার চেষ্টা করুন, সেটা যদি সম্ভব না হয় আপনি এড়িয়ে যান কিন্তু তাকে নিয়ে বিদ্রুপ করে তাকে হাসির পাত্র বানিয়ে আপনি নিজে গুনাহগার হচ্ছেন।
তিনি হয়তো একটি ভুল করেছেন; কিন্তু আপনি আরেকটি ভুল করলেন যা তার ভুলের থেকেও অনেক জঘন্য অপরাধ হতে পারে, বান্দার হক নষ্ট করার মতো বিষয় হতে পারে, বান্দার হক নষ্ট হলে কেয়ামতের দিন কিন্তু আপনার আমল নামা থেকে সাওয়াব কেটে দেওয়া হবে।অতএব ফেসবুকে হাহা রিঅ্যাক্ট দেয়া থেকে বেঁচে থাকতে হবে।
নির্দিষ্ট করে কাউকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা জায়েজ আছে কিনা এর স্পষ্ট উত্তর হচ্ছে, এটি সম্পূর্ণ হারাম একটি কাজ। কোন অবস্থাতেই কাউকে নিয়ে হাসাহাসি, বিদ্রুপ করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে জায়েজ নয়।
বর্তমানে তথাকথিত অনেক ইসলামি ব্যক্তিত্বরাও এই কাজটি করছেন; আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সব ধরনের হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার; বিশেষত বান্দার হক যেটা অত্যন্ত স্পর্শ কাতর, যা আল্লাহ নিজেও মাফ করবেন না, এরকম একটি অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।
অপরাধ থেকে বাঁচার জন্য অপরাধবোধ থাকতে হয়, আমরা যে অপরাধ করছি সেই ধারণা যদি আমাদের থাকে তাহলে আমরা অপরাধ থেকে বাঁচতে পারবো। অতএব যারা হাহা রিয়েক্ট দিয়ে থাকেন আমি আবারও তাদের আল্লাহর ওয়াস্তে এই অভ্যাসটি পরিহার করার আহ্বান জানাবো। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে এটা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।
শ্রুতি লেখন জুলফিকার জাহিদ