আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজা যুদ্ধের পর হঠাৎ করেই হামাসের জনসমর্থন বেড়ে গেছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বাধীন ফাতাহ দলের সমর্থন কমেছে ব্যাপকভাবে। মঙ্গলবার প্রকাশিত এক জনমত জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অধিকাংশ মানুষ মনে করে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব ও নেতৃত্ব দেয়ার জন্য হামাসই সবচেয়ে যোগ্য। অপরদিকে খুব কম মানুষই বিশ্বাস করে যে ফাতাহ দল ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব ও নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্য।
রামাল্লাভিত্তিক ‘প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের’ এ জরিপ বলছে, ৭৭ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে যে হামাস সর্বশেষ যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছে।
৬৫ শতাংশের বেশি মানুষ বিশ্বাস করে যে ইসরায়েলে রকেট ছোড়ার মাধ্যমে হামাস তার ঘোষিত লক্ষ্য অর্জন করেছে। কারণ, ইসরায়েলে এ রকেট ছোড়ার মাধ্যমে তারা পূর্ব-জেরুসালেমের পার্শ্ববর্তী শেখ জাররাহ থেকে আরব পরিবারগুলোর উচ্ছেদের পরিকল্পনা রুখে দিতে পেরেছে। এছাড়া আল-আকসা চত্বরে মুসলমানদের প্রবেশে ইসরাইল যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল, ওই নিষেধাজ্ঞাও রদ করে দিতে পেরেছে হামাস। এখন আল-আকসার ওপর ফিলিস্তিনিদের অধিকার আরো জোরালো হয়েছে।
৯ থেকে ১২ জুন অনুষ্ঠিত এ জনমত জরিপে ১২ শ’ ফিলিস্তিনি অংশ নিয়েছিলেন।
এ জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, ৭২ শতাংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন যে জেরুসালেম ও আল-আকসা মসজিদকে রক্ষা করার জন্য হামাস ইসরায়েলের শহরগুলোতে রকেট হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মাত্র ৯ শতাংশ অংশগ্রহণকারী মনে করেন যে হামাস রকেট হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফিলিস্তিনের সাধারণ নির্বাচন বাতিল হবার প্রতিবাদে।
এ জনমত জরিপ অনুসারে যদি আজ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে হামাসের ইসমাইল হানিয়া ৫৯ শতাংশ ভোট পাবেন। অন্যদিকে ইসমাইল হানিয়ার প্রতিপক্ষ ফাতাহ দলের মাহমুদ আব্বাস পাবেন মাত্র ২৭ শতাংশ ভোট।
যদি ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হামাসের ইসমাইল হানিয়া ও ফাতাহ দলের কারাবন্দী নেতা মারওয়ান বারগুতির মধ্যে হয় তাহলে মারওয়ান বারগুতি ৫১ শতাংশ ভোট পাবেন। অন্যদিকে হামাসের ইসমাইল হানিয়া পাবেন ২৬ শতাংশ ভোট পাবেন। ফাতাহ দলের মারওয়ান বারগুতি দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইলের কারাগারে বন্দী আছেন।
অবশ্য ফিলিস্তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে হামাস বিপুল ভোটে জয়ী হবে বলে ওই জনমত জরিপের অংশগ্রহণকারীরা মন্তব্য করেছেন। ৪০ শতাংশ ফিলিস্তিনি হামাসকে ভোট দিবেন আর ৩০ শতাংশ ফিলিস্তিনি ভোটার ফাতাহকে ভোট দিবেন বলে ওই জনমত জরিপের অংশগ্রহণকারীরা মনে করছেন।
দুই-তৃতীয়াংশ ফিলিস্তিনি বিশ্বাস করেন যে মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনের পার্লামেন্টারি নির্বাচন ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন বাতিল করেছেন। কারণ তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে তিনি নির্বাচনে হারবেন। ২৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন, তার ফিলিস্তিনের নির্বাচন স্থগিত করার মূল কারণ হলো ইসরাইল পূর্ব জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ রাখেনি। ৬৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বলেছেন, তারা মাহমুদ আব্বাসের ফিলিস্তিনি নির্বাচন স্থগিত করার এমন সিদ্ধান্তের বিরোধী। মাহমুদ আব্বাস নির্বাচন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গত এপ্রিল মাসে।
ওই জনমত জরিপ অনুসারে ৫৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি দু’রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বিরোধিতা করেছেন। তাদের ৬১ শতাংশ ফিলিস্তিনি মনে করেন যে দু’রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান কোনো বাস্তবিক ও সহজসাধ্য বিষয় নয়। কারণ পশ্চিমতীরে ইসরাইলিরা ব্যাপকভাবে বসতি নির্মাণ করছে। ৬৭ শতাংশ ফিলিস্তিনি বিশ্বাস করেন না যে আগামী পাঁচ বছরে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে।
এছাড়া ওই জনমত জরিপ অনুসারে, ৬৯ শতাংশ ফিলিস্তিনি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারের মাধ্যমে কোনো ভালো সমাধান আসবে বলে মনে করছেন না।
সূত্র: দ্য জেরুসালেম পোস্ট
এনটি