মুফতি আব্দুর রহিম: হাদীস কাকে বলে ও কত প্রকার। তার পরিভাষাসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আজ আলোচনা করা হবে الحديث المردود বা অগ্রহণযোগ্য হাদীস নিয়ে।
الحديث المردود বা হাদীস গ্রহণযোগ্য না হওয়ার কারণ দুটি। এক. سقط من الإسناد অর্থাৎ সনদ থেকে রাবী বাদ পড়ে যাওয়ার কারণে।
২. طعن في راوٍ অর্থাৎ রাবীর ব্যাপারে অভিযোগ থাকার কারণে।
سقط من الإسناد দুই প্রকার: ১. سقط واضح অর্থাৎ সনদ হতে রাবী বাদ পড়ার বিষয়টি স্পষ্ট। যে কেউ তা বুঝতে পারে। যেমন রাবীর যার থেকে হাদীস বর্ণনা করছেন তার মৃত্যু রাবীর জন্মেরও অনেক পূর্বের।
২. سقط خفي অর্থাৎ সনদ থেকে রাবী বাদ পড়ার বিষয়টি অভিজ্ঞ কোন মুহাদ্দিস ছাড়া বুঝা যায় না।
سقط ظاهر হিসেবে الحديث المردود চার প্রকার।
১. الحديث المعلَّق: هو ما حذف من مبدأ إسناده راوٍ فأكثرمع التوالى
অর্থ : হাদীসসূত্রের শুরুর দিকের এক বা একাধিক বর্ণনাকারী লাাগাতার বাদ পড়ে গেলে সে বর্ণনাকে الحديث المعلَّق বলে।
২. الحديث المرسل: هو ما سقط من آخر الإسناد مَن بعد التابعى
অর্থ : হাদীসসূত্রের শেষাংশ থেকে সাহাবী বা রাসূল সা. এর নাম বাদ পড়লে সে বর্ণনাকে الحديث المرسل বলে।
المرسل দুই প্রকার : ১. مرسل التابعي অর্থাৎ কোন তাবেয়ী সাহাবীর নাম বাদ দিয়ে হুজুর সা. এর বরাতে হাদীস বর্ণনা করা।
২. مرسل الصحابي অর্থাৎ কোন সাহাবী হুজুর সা. এর নাম বাদ দিয়ে হাদীস বর্ণনা করা।
৩. الحديث المعضل: هو سقط من الإسناد إثنين فصاعدا مع التوالى
অর্থ : হাদীসসূত্রের মাঝখান থেকে লাগাতার একাধিক বর্ণনাকারীর নাম বাদ পড়ে গেলে সে বর্ণনাকে الحديث المعضل বলে।
৪. الحديث المنقط: هو ما لم يتصل إسناده على أي وجه كان انقطاعه.
অর্থ : যে হাদীসের সনদ মুত্তাসিল নয়, চাই তা যে কোন ভাবেই হউক না কেন সে বর্ণনাকে الحديث المنقطع।
سقط خفي হিসেবে الحديث المردود দুই প্রকার।
১. الحديث المدلس: هو ما رواه راوٍممن لم يتحدث به وقدعرف لقائه اياه بلفظ يوهم السماع منه وقد سقط راوٍ من بينهما من السند
অর্থ : যে বর্ণনাকারী এবং তার উস্তাদের মাঝে সাক্ষাৎ হয়েছে তা মুহাদ্দিসগণের নিকট সুবিদিত এবং রাবী এমন শব্দে (যেমন : عَنْ শব্দে) হাদীসটি রেওয়ায়েত করেন যে, মনে হয় তা তার ওস্তাদ থেকে শুনেছেন, কিন্তু বাস্তবে তিনি হাদীসটি শনেননি- মাঝে একজন রাবী বাদ দিয়েছেন। এমন বর্ণনাকে الحديث المدلس বলে। অন্য শব্দে বলা যা, যে বর্ণনায় রাবীর নাম গোপনে বাদ দেয়া হয় তাকে الحديث المدلس বলে।
التدليس তিন প্রকার: ক. تدليس الإسناد : وهو أن يروي الراوي عمن قدسمع منه مالم يسمع منه من غير أن يذكر أنه سمعه منه.
অর্থাৎ, রাবী নিজের উস্তাদকে বাদ দিয়ে উপরের রাবীর জন্য এমনভাবে শব্দ প্রয়োগ করেন যেমন নাকি তিনি مروي عنه থেকে হাদীসটি শুনেছেন। যেমন عن فلان বা قال فلان ইত্যাদির প্রয়োগ। এমন তাদলীস না জায়েয ও নিন্দনীয়।
খ. تدليس الشيوخ : وهو أن يروي الراوي عن شيخ حديثا سمعه منه فيسميه أو يكنيه أو يصفه بما لا يعرف به كي لا يعرف.
অর্থাৎ, রাবী তার উস্তাদের পরিচিত নাম বাদ দিয়ে অপরিচিত নাম, গুণ ও কুনিয়্যাত উল্লেখ করা। যদিও এমন তাদলীস করা জায়েয তবে না করা ভালো।
গ. تدليس التسوية : وهو رواية الراوي عن شيخه ثم إسقاط راوٍ ضعيف بين ثقتين لقي أحدهما الآخر.
অর্থাৎ মুহাদ্দিস তার উস্তাদকে বাদ দেয় না, কিন্তু হাদীসকে ভালো বানাতে উপরের কোন দুর্বল বা নিম্নমানের বর্ণনাকারীকে বাদ দিয়ে সেখানে এমন শব্দ ব্যবহার করেন যেন তিনি مروي عنه থেকে হাদীসটি শুনেছেন ।
উল্লেখ যে, التدليس শব্দটির প্রয়োগ تدليس الإسناد এর উপর হয়ে থাকে।
দুই. المرسل الخفي: المرسل الخفي : هو ما رواه راوٍ ثبت المعصرة بينه وبين من روى عنه ولم يعرف أنه لقيه أم لا وليس له منه إجازة ولا وجادة بلفظ يوهم السماع منه وقد سقط راوٍ بينهما من الإسناد
অর্থাৎ যে হাদীসের রাবী ও যার থেকে বর্ণনা করেছে তিনি একই যুগের, কিন্তু উভয়ের মাঝে জীবনে কখনো সাক্ষাৎ হয়েছে কি না- তা মুহাদ্দিসগণের নিকট সুবিদিত নয়। এবং রাবী যার থেকে বর্ণনা করেছেন তার থেকে إجازة বা وجادة কোনটি লাভ করেননি; কিন্তু রাবী এমন শব্দে হাদীস বর্ণনা করেছেন যেন তিনি مروي عنه থেকে হাদীসটি শুনেছেন অথচ তিনি বাস্তবে শুনেননি; বরং মাঝে একজন রাবীকে ফেলে দিয়েছেন।
লেখক: সিনিয়র মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া জহিরুদ্দিন আহমদ মাদরাসা মানিকনগর, ঢাকা।
-এএ