কাওসার আইয়ুব।।
‘সিল্ক’ ইংরেজি শব্দ, বাংলায় রেশম। আরবিতে হাড়ির, দীবাজসহ আরো কিছু শব্দ ব্যবহারিত হয়। যেমন রাসূল সা. হাদিসে বলেন, أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: ’لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ يَسْتَحِلُّونَ الْخَزَّ وَالْحَرِيرَ‘ -وَذَكَرَ كَلاَمًا قَالَ ” يُمْسَخُ مِنْهُمْ آخَرُونَ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
এখানে রাসূল সা. হাঁড়ির শব্দ ব্যবহার করেছেন। রেশম পোকা দিয়ে তৈরি সুতার কাপড়কে সিল্কের কাপড় বা রেশম কাপড় বলা হয়। কখনো কখনো রেশম পোকা ব্যতীত অন্য পোকা দ্বারাও রেশমের কাপড় তৈরি করা হয়।
বস্ত্রশিল্পে সিল্ক বা রেশম কাপড়ের একটি ঐতিহ্য এবং মান রয়েছে। বিশ্বে প্রচলিত হরেক রকমের রেশম কাপড়ের অস্তিত্ব বিদ্যমান আছে। সেগুলোর রয়েছে নামের বৈচিত্র। আর তার সাথে রয়েছে রঙের বৈচিত্রও। এর কিছু আছে আঞ্চলিকভাবে পরিচিত। আর কিছু আছে বিশ্বময় সমাদৃত।
যেমন ধরা যাক-১. তুঁত সিল্ক, তুঁত সিল্ক বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক সাধারণ এবং বহুল ব্যবহৃত রেশম। ২.তসর সিল্ক, তসর বা তুষাহ সিল্ক হল এক প্রকার বুনো রেশম; যা তুঁতকৃমি ব্যতীত শুঁয়োপোকা দ্বারা উত্পাদিত হয়। ৩. এরি সিল্ক, এন্ডি বা এরান্দি সিল্ক নামেও পরিচিত। এটি ক্রিমযুক্ত সাদা রঙের সিল্ক। ৪. মুগা সিল্ক, মুগা রেশম সোনালি হলুদ বর্ণের। মুগা রেশমকৃমিও তাসর সিল্কওয়ার্মার মতো একই বংশের অন্তর্ভুক্ত। ৫. স্পাইডার সিল্ক, স্পাইডার সিল্ক একটি নন-পোকামাকড় রেশম জাত যা টেক্সচারে নরম এবং সূক্ষ্ম। মাকড়শা রেশম পোকার মতো জন্মাতে পারে না এবং রেশম পোকার মতো সূতাও উত্পাদন করে না বলে এটি উত্পাদন করা সবচেয়ে কঠিন রেশম।
৬. ঝিনুক সিল্ক, অ্যাড্রিয়াটিকের ইটালিয়া এবং ডালমাটিয়ার তীরে অগভীর জলে পাওয়া বিভালভ থেকে ঝিনুকের রেশম পাওয়া যায়। এটি সমুদ্রতীরে পাওয়া ঝিনুক দ্বারা উত্পাদিত হওয়ায় এটি প্রায়শই ‘সমুদ্র সিল্ক’ নামে অভিহিত হয়। ৭. আনফে সিল্ক, অনাফ সিল্ক সাধারণত দক্ষিণ এবং মধ্য আফ্রিকার দেশগুলিতে উত্পাদিত হয়। ৮. কোয়ান সিল্ক, কোচ সিল্ক পাচিপাসা অ্যাটাসের লার্ভা থেকে উত্পাদিত হয় যা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ইটালি, গ্রিস এবং তুরস্ক জুড়ে প্রচলিত। এছাড়াও বিশ্বে প্রচলিত রেশম কাপড়ের আরো বিভিন্ন নাম রয়েছে।
আমাদের সমাজের মধ্যে প্রচলিত দুই ধরনের সিল্কের কাপড় রয়েছ। একটি প্রকৃত রেশম পোকা দিয়ে তৈরি। আরেকটি মেশিন দ্বারা তৈরি। যা দেখতে একেবারে রেশমের মতোই। এটাকেও সিল্কের কাপড় বলে মার্কেটে বাজারজাত করা হয়।
কিন্তু প্রকৃত রেশম কাপড়ের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুমে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মেশিনের সাহায্যে উৎপাদিত নকল রেশম বা কৃত্রিম সিল্কের কাপড় পরিধানের ব্যাপারে শরীয়তে কোন বাধা নিষেধ করেনি।
আর পূর্বে উল্লেখিত আট প্রকার রেশম কাপড়ের সবগুলোই প্রকৃত রেশমের অন্তর্ভুক্ত। নামের ভিন্নতা থাকলেও হুকুমের দিক দিয়ে এগুলো এক ও অভিন্ন। তাই এসব সিল্ক বা রেশম কাপড়ের হুকুম হচ্ছে,
‘সিল্কের তৈরি কাপড় কিংবা যে কাপড়ে প্রস্থের সুতা (যাকে আমরা তানা বলে থাকি) সিল্ক হলে, তা পুরুষের জন্য ব্যবহার করা বৈধ নয়।’
এ ব্যাপারে হজরত আলি রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. কে দেখেছি, তিনি ডান হাতে রেশম ধরলেন এবং বাম হাতে স্বর্ণ, এরপর বললেন, ‘আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য এ দুটি বস্তু হারাম।’ (আবু দাউদ: ৪০৫৭, নাসায়ি: ৫১৪৪,ইবনু মাজাহ: ৩৫৯৫, ফতুয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫,৩৮৩, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ২৭, ৪২১)
তবে প্রকৃত রেশম কাপড়ের তিন চার আঙুল পরিমাণ হাবাকাবা, শিরওয়ানী, অথবা জামার চারপাশে ব্যবহার করার অনুমতি আছে।
আর রেশম কাপড় মহিলাদের ব্যবহারের জন্য ইসলামে কোনো বাধা-নিষেধ নেই ।
এ ব্যাপারে হজরত আলি রা. বলেন, নবিজী সা. আমাকে একজোড়া রেশমি কাপড় দিলেন। আমি তা পরিধান করলাম। এতে নবিজীর মুখমণ্ডলে গোস্বার ভাব ফুটে উঠল। ফলে আমি তা মহিলাদের মাঝে ভাগ করে দিয়ে দিলাম। (সহিহ বুখারি: ২৬১৪, মুসনাদে আহমদ: ১১৭১)
শেষ জামানার পাপের দিকে ইঙ্গিত করে রাসুলুল্লাহ সা. আরও বলেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক আসবে, যারা ব্যভিচার, রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল সাব্যস্ত করবে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৫৯০) আল্লাহ তায়ালা এ লানত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আমিন।
এমডব্লিউ/