ফরহাদ খান নাঈম
যেকোনো ইসলামী রাষ্ট্রের কেন্দ্রে রয়েছে মসজিদ। মসজিদের ইতিহাস স্বয়ং ইসলামের ইতিহাসের মতোই প্রাচীন। মুসলিম সম্প্রদায়ের হৃদস্পন্দন ও ধর্মবিশ্বাসের বিমূর্ত প্রতীক হচ্ছে মসজিদ।
নবীজি সা. তার জীবদ্দশায় নিজ হাতে বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। তার মধ্যে হিজরতের পর মদীনায় নির্মিত মসজিদে নববী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য; যেখান থেকে তিনি সা. সালাত আদায়সহ মুসলমানদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
বর্তমানে যদিও আমরা মসজিদকে শুধুমাত্র সালাত আদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি; কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মসজিদ মুসলমানদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ পরিচালনা করার স্থান। এখানে এসে একজন মুসলমান যেমন ইবাদাতে মশগুল হবে, আবার এখানেই কোরআন-হাদিসের জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করবে। পাশাপাশি একটি মসজিদে মুসলমানদের বিভিন্ন উৎসব-উপলক্ষ উদযাপন করার ব্যবস্থা থাকবে। বিভিন্ন ধর্মীয় দিবস ও বিয়েশাদী উপলক্ষে মুসলমানগণ এখানেই জমায়েত হবেন।
যেহেতু একটি মুসলিম সম্প্রদায় মসজিদ ছাড়া অচল, তাই প্রতিটি মুসলিম সমাজে পর্যাপ্ত মসজিদ নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। কোরআন ও হাদিসে মসজিদ নির্মাণের অনেক ফজীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের ফলে সমাজের লোকজন যেমন উপকৃত হয়, তেমনি মসজিদ নির্মাতাও আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অশেষ পুরস্কার লাভ করেন।
মসজিদ নির্মাণের পুরস্কার আসলে অসীম। এই একটি উত্তম সদকায়ে জারিয়া। নির্মাণের পর থেকে নিয়ে যতদিন পর্যন্ত মানুষ সেখানে সালাত আদায় করবে, তাদের সওয়াবের পরিমাণ অক্ষুণ্ন রেখে মসজিদ নির্মাতাও সওয়াবের একটি অংশ লাভ করতে থাকবে। সওয়াব লাভের এই ধারাবাহিকতা নির্মাতার মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকবে।
হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সদকায়ে জারিয়া, ২. এমন জ্ঞান (ইলম)- যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দোয়া করে। – সহিহ মুসলিম : ৪৩১০
মসজিদ নির্মাণ আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মসজিদ নির্মাণের ফজীলত সম্পর্কে অপর হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। বুখারি।
সুবহানাল্লাহ! পৃথিবীতে আল্লাহর বান্দাদের ইবাদাতের জন্য মসজিদ নির্মাণ করলে আল্লাহ তায়ালা নির্মাতাকে বেহেশতে বসবাসের জন্য একটি বিশাল প্রাসাদ উপহার দেবেন।
পৃথিবীতে উন্নয়নশীল অনেক মুসলিম দেশে মুসলমানগণ অর্থাভাবে নিজেদের জন্য মসজিদ নির্মাণ করতে পারছে না; কিংবা জরাজীর্ণ কোনো মসজিদ থাকলেও তা সংস্কার করতে পারছে না। মসজিদ না থাকায় তাদেরকে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বাইরে সালাত আদায় করতে হচ্ছে। কখনো কখনো নিজ এলাকায় সালাত আদায়ের সুব্যবস্থা না থাকায় বহু দূরের পথ অতিক্রম করে অন্য এলাকার মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করতে হয়।
জামায়াতের সাথে সালাত আদায় করা, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, মুসলিম শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষা এবং সামাজিক মিলনমেলা- এ সবকিছুরই কেন্দ্রবিন্দু হলো মসজিদ। তাই মসজিদ না থাকায় সংশ্লিষ্ট সমাজের লোকেরা এসব সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব এলাকায় মসজিদ নির্মাণ করলে, সালাত আদায়ের পাশাপাশি স্থানীয় মুসলমানগণ উপরোক্ত সকল সুযোগ-সুবিধা লাভ করতে পারবে। এতে মসজিদ নির্মাণের পুরস্কার লাভের সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মানবতার সেবা করার পুরস্কারও মিলবে।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। একইভাবে যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিনে তার বিপদ দূর করে দেবেন। বুখারি ও মুসলিম।
সুতরাং আসুন মসজিদ নির্মাণ করার মাধ্যমে ইসলাম ও মানবতার সেবায় নিয়োজিত হই; তাহলে আল্লাহ তায়ালাও আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন কল্যান দান করবেন।
-এটি