আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, রাজ্যের অভিবাসী মুসলিমদের সঠিকভাবে পরিবার পরিকল্পনা করতে হবে। এ বিষয়ে তার সরকার সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। বিজেপির এ মুখ্যমন্ত্রীর এমন সাম্প্রদায়িক মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেক রাজনৈতিক দলের নেতাই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী এভাবে কোনো ধর্মকে টার্গেট করে কথা বলতে পারেন না।
রাজ্যের রাজধানী গৌহাটিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বশর্মা ওই মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য করেন। কথিত অবৈধ জবরদখলের বিরুদ্ধে সরকারি নানা পদক্ষেপের বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আসামের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলের বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসী মনে করে হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি। সেখানকার কট্টরপন্থিরা মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক বাসিন্দা আসামে ঢুকে ভোট প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন এবং রাজ্যের জনতাত্ত্বিক চিত্র বদলে দিচ্ছেন। ‘অভিবাসী মুসলিমদের এই আধিপত্য’ থেকে ‘স্থানীয়দের সুরক্ষা’ দিতে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে বিজেপি।
এরই অংশ হিসেবে ২০১৮ সালে সেখানে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি তৈরি করে সরকার। রাজ্যের তিন কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দার মধ্যে দুই কোটি ৯০ লাখ মানুষের জায়গা হয় ওই নাগরিকপঞ্জিতে। বাদ পড়েন প্রায় ৪০ লাখ বাসিন্দা, এদের মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাভাষী।
সেই নাগরিকপঞ্জি বাস্তবায়নে এবং অভিবাসী মুসলিমবিরোধী নানা কার্যক্রম চালিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আসামের নির্বাচনে সরকার গঠন করে বিজেপি। সেই সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার এক মাস বৃহস্পতিবারই (১০ জুন) পার করেছেন বিশ্বশর্মা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘রাজ্যের অভিবাসী মুসলিমদের সঠিকভাবে পরিবার পরিকল্পনা করতেই হবে। এ বিষয়ে সরকার সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। মুসলিমরা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করলে (আসামের বিখ্যাত) কামাখ্যা মন্দিরের জমিও জবরদখল হয়ে যেতে পারে।’
বিশ্বশর্মা আরও বলেন, ‘জনসংখ্যার বিস্ফোরণ রুখতে আমরা সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিয়ে কাজ করতে চাই। দারিদ্র্য, জবরদখলের মতো সামাজিক সমস্যার মূলে এই জনসংখ্যা। অভিবাসী মুসলিমরা যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সঠিক পরিবার পরিকল্পনা করেন, তাহলে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারি। এটা তাদের প্রতি আমার অনুরোধ।’
মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যে সমালোচনার ঝড় বইছে ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার এমন সাম্প্রদায়িক বক্তব্যে প্রবল আপত্তি জানিয়েছে আসামের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক দল সর্বভারতীয় গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্ট ও সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু ছাত্র ইউনিয়ন।
গণতান্ত্রিক যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও বিধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তারা যখন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি নিলেন, আমরা সেটার বিরোধিতা করিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুখ্যমন্ত্রী জনসংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ না খুঁজে অভিবাসী মুসলিমদের প্রসঙ্গ টানছেন। এটা (জনসংখ্যা বৃদ্ধি) মোটাদাগে হচ্ছে দারিদ্র্য ও নিরক্ষতার কারণে, কিন্তু তিনি দারিদ্র্য ও শিক্ষার দিক থেকে এ সংক্রান্ত কোনো পরিকল্পনার কথাই বলছেন না।’
এনটি