রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


‘বিকল্প যেসব পেশায় যুক্ত হতে পারেন তরুণ আলেমরা’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কওমি তরুণদের দরস-তাদরিসের বাইরেও বিকল্প পেশায় যুক্ত হওয়ার জোর দাবি উঠছে। তবে একজন কওমি পড়ুয়া তরুণ আলেম তালিম-তরবিয়তের বাইরে গিয়ে কি ধরনের পেশায় জড়াবেন এ নিয়ে থেকে যায় অনেক বড় প্রশ্ন। এমন সব প্রশ্নের উত্তর ও নবীন আলেমদের বিকল্প পেশার দিকগুলো নিয়ে আওয়ার ইসলামের সাথে খোলামেলা আলাপ করেছেন দারুর রাশাদ মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব মাওলানা লিয়াকত আলী। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ আলেমের কাছ থেকে সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন নুরুদ্দীন তাসলিম। পাঠকের জন্য তিন পর্বের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারটির ২য় পর্ব তুলে ধরা হল আজ।


বিকল্প কি ধরনের পেশায় যুক্ত হতে পারেন কওমি পড়ুয়া তরুণ আলেমরা, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার বিশেষ কোনো পরামর্শ?

পরামর্শ এবং বিকল্প কোন কোন পেশায় যুক্ত হতে পারে কওমি তরুণরা এ বিষয়টি আমি একটু বিস্তারিতভাবে বলতে চাই।

প্রথমত মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা দ্বীনের খেদমতের উদ্দেশ্যেই মাদ্রাসায় পড়ে থাকেন। মাদ্রাসায় পড়াশোনাকে তারা জীবিকা নির্বাহের প্রধান উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করেন না। মাদ্রাসা থেকে ফারেগ হয়ে তাই তারা দ্বীনের প্রচার-প্রসারের কাজে লেগে যান।

দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে: নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«طَلَبُ كَسْبِ الْحَلَالِ فَرِيضَةٌ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ» . رَوَاهُ الْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان

অর্থ: অন্যান্য ফরয কাজ আদায়ের সাথে হালাল রুযী-রোজগারের ব্যবস্থা গ্রহণ করাও একটি ফরয।

পৃথিবীর বাস্তবতা হল পৃথিবীতে জীবিকা উপার্জনের জন্য কোন একটা পেশা বেছে নিতে হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও ইবাদত-বন্দেগির পরে হালাল উপার্জনকে দ্বিতীয় কর্তব্য বলে সাব্যস্ত করেছেন। এখন কথা হচ্ছে কি ধরনের পেশা বেছে নেবেন আলেমরা?

দুনিয়ার নিয়ম ও ইসলামের সামাজিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে প্রধান পেশা কয়েকটি। এর মধ্যে অন্যতম হলো ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পকর্ম। এছাড়াও রয়েছে চাকরি। আলেমরা সবাই চাকরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিলে তো আর হবে না।

এদিকে কৃষি ও শিল্পকর্মের বিস্তৃত ময়দান পড়ে আছে। বর্তমানে পুরা বিশ্বে এমনকি আমাদের দেশেও সরকারি চাকুরি খুব বেশি মানুষ করেন না। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান; কল কারখানাতে  চাকুরি করা মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাই তালিমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে কৃষিকাজ  ও শিল্পে মনোযোগী হলে ওলামায়ে কেরামের কর্মসংস্থানের উন্নয়ন ঘটবে।

কৃষি একটি হালাল পেশা। এছাড়াও -এর বিভিন্ন দিক আছে যেগুলো সম্মান ও লাভজনক, দেশের জন্যও উপকারী।

এর বাইরেও নানান শিল্প আছে যাতে সম্মানজনক জীবনযাপন করা যায় ও  নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানো যায়। এতে জনগণের বিস্তর খেদমতের পাশাপাশি নিজের সম্মানজনক জীবিকাও সহজেই নির্বাহ করা যায়।

জীবিকা ও পেশার ক্ষেত্রে আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। ব্যবসার জন্য পুঁজি থাকা অন্যতম শর্ত। তবে পুঁজি না থাকলেও মেধাকে কাজে লাগিয়ে পরিশ্রমের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ব্যবসা দিয়ে শুরু করেও ভালো কিছু করা সম্ভব।  তরুণ আলেমরা এদিকটাতেও মনোযোগ দিতে পারেন।

বিকল্প পেশার দিকগুলোর ছাড়াও  ওলামায়ে কেরামের প্রধান পেশা দরস তাদরিসেরই বিস্তৃত ক্ষেত্র এখনো শূন্য রয়ে গেছে, যে ক্ষেত্রগুলোতে ওলামায়ে কেরাম এখনো খেদমতের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছেন।

তাহলো: আমরা মাদ্রাসায় সেসব শিক্ষার্থীদেরই পড়াই যারা মাদ্রাসায় পড়তে আসে। এর বাইরে প্রায়  ৯৮ ভাগ মানুষ আছেন যারা দ্বীনি এলেম শিক্ষা করতে মাদ্রাসায় আসেন না। এই ৯৮ ভাগ মানুষের দ্বীনি তালিমের ব্যবস্থা কিন্তু এখনো গড়ে উঠেনি আমাদের দেশে। ওলামায়ে  কেরাম চাইলে এদিকটাতেও মনোযোগ দিতে পারেন।

এক্ষেত্রে প্রথমত বয়স্ক শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে পারেন ওলামায়ে কেরাম। এতে করে ওলামায়ে কেরামের পেশার পরিধি বিস্তৃত হবে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কলেজ ভার্সিটিতে পড়া যেসব যুবক দ্বীনি এলেম শিক্ষা করতে পারছেন না তাদের জন্য বিকল্প দ্বীনি শিক্ষার ধারা চালু করা। এর মাধ্যমে দ্বীনের বিস্তর খেদমতের সুযোগ পাবেন তরুণ আলেমরা।
তালিমের এই বিস্তৃত ক্ষেত্রটি এখনো শূন্যই পড়ে আছে।

এছাড়া তাবলীগ জামাতের মাধ্যমে বর্তমানে অনেকের মাঝেই দিনের বুঝ আসছে; কিন্তু তাদের তালিমের কোন ব্যবস্থা নেই । তাদের পক্ষে কলেজ ভার্সিটি ছেড়ে মাদ্রাসায়  ভর্তি হয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পড়াশোনা করাও সম্ভব হয় না। ওলামায়ে কেরাম এদিকে খেয়াল করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া এসব যুবক ও বয়স্কদের জন্য বিকল্প দ্বীনি শিক্ষা ব্যবস্থা ও ভিন্ন বিস্তৃত পেশা চালু করতে পারেন।

তরুণ আলেমদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরিতে বেফাক-হাইয়ার বিশেষ কোন ভুমিকা রাখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন কি?

কওমি তরুণদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে বেফাক-হাইয়ার দৃষ্টি দেওয়া আবশ্যকীয় বলে আমি মনে করি।

বেফাক- হাইয়া নিছক কোন শিক্ষাবোর্ড নয়; বরং একে আমাদের ওলামায়ে কেরামের অভিভাবক পরিষদ বলা যেতে পারে। সরকারি শিক্ষা বোর্ড-এর মত এই বোর্ডের দায়িত্ব শুধু শিক্ষা কারিকুলাম ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা নয়। ওলামায়ে কেরামের সার্বিক দেখাশোনা ও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করাও বোর্ড কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। এজন্যই বর্তমানে তরুণ আলেমদের কর্মসংস্থানের যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে এটা নিয়ে বেফাকের ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। ...

-চলবে

গত পর্বের লেখাটি পড়ুন দরস-তাদরিসের বাইরেও তরুণ আলেমদের বিকল্প পেশায় যুক্ত হওয়া সময়ের দাবি’

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ