পড়ালেখার পাশাপাশি অবসর কিংবা অবকাশকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা কীভাবে সময় কাটাবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। কেউ ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন, কেউ বই পড়েন, কেউবা সোশ্যাল মিডিয়া চালিয়েই সময় কাটিয়ে দেন। গতানুগতিক উপায় বাদেও শিক্ষার্থীরা কীভাবে তাদের অবকাশকালীন সময়কে আরো বেশি অর্থবহ করে তুলতে পারেন, তা জেনে নেওয়াটা জরুরি। একটু বুদ্ধি খাটালেই নতুন নতুন পথ বের করা সম্ভব। বর্তমান করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে রয়েছে অফুরন্ত সময়, যা তারা কাজে লাগিয়ে হতে পারেন দক্ষ। অবসরকালীন সময়ে পড়ালেখার বাইরে সৃজনশীল দক্ষতা অর্জনে সহযোগী এমন পাঁচটি কাজের কথা তুলে ধরেছেন আওয়ার ইসলামের নিউজরুম এডিটর- মোস্তফা ওয়াদুদ।।
১. দক্ষতা অর্জন
মানুষ মাত্রই শৌখিন। আপনি চাইলে দক্ষতা অর্জন কিংবা বৃদ্ধির মাধ্যমে আপনার শখকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে পারেন। আপনার যদি কোনো শখ না-ও থাকে, তাহলে আপনি কোন কাজে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তা প্রথমেই খুঁজে বের করুন। তারপর কোনো পরামর্শদাতার সান্নিধ্যে থেকে কাজ শিখে সেটার উপর দক্ষতা অর্জন করুন।
কোনো শ্রেণী কিংবা গোষ্ঠীর সন্ধান করুন, যাদের সঙ্গে যুক্ত থেকে আপনি আরো বেশি উন্নতি করতে পারবেন। এটি যে কোনো কিছু হতে পারে, হতে পারে সেটা সেলাইয়ের কাজ কিংবা কোডিংয়ের মতো কঠিন কোনো বিষয়। এই দক্ষতা আপনার শিক্ষাজীবন শেষে আপনাকে আরো বেশি সজ্জিত করবে। তাছাড়া আপনি সেগুলো সিভিতেও যুক্ত করতে পারবেন, যেটি ভবিষ্যতের নিয়োগকর্তাদের ভাবতে বাধ্য করবে যে আপনি আপনার ব্যক্তিগত উন্নতিকে কতটা গুরুত্ব সহকারে নেন।
২. একটি নতুন ভাষা শিখুন
আধুনিক বিশ্বে এখন সবকিছুই সহজলভ্য। মুহূর্তেই হাতের কাছে সবকিছুর রিসোর্স খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তাহলে নতুন ভাষা শিখতে রিসোর্সগুলোর ব্যবহার কেন নয়!
আপনি যদি বিদেশে পড়ালেখার বিষয়ে ভেবে থাকেন কিংবা অন্য কোনো দেশে জীবন গোছানোর কল্পনা করে থাকেন, তবে নতুন ভাষা শেখা একটি কার্যকরী উপায়। বহুভাষিক হয়ে উঠলে আপনার জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে অনেক দুয়ার খুলে যাবে, দিগন্তগুলো হবে বিস্তৃত। আপনার আত্মবিশ্বাস যেমন বৃদ্ধি পাবে, তেমনি বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মানুষের সঙ্গে আপনার নেটওয়ার্কিং গড়ে উঠবে, ফলে নতুন কিছুর সুযোগের সন্ধান আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
৩. ভলান্টিয়ারিং
আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়নে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বেশি কার্যকরী? জি ঠিক ধরেছেন। ভলান্টিয়ারিং কিংবা স্বেচ্ছায় সেবা দেওয়া। এটি এমন একটি উপায়, যেটি আপনার পেশাগত জীবনকেও অনেক প্রভাবিত করে। শরণার্থী শিবিরে বাচ্চাদের পড়ালেখা শেখানো, পরিবেশ রক্ষায় যে কোনো কার্যক্রমে যোগদান, পশুপাখির অভয়াশ্রম রক্ষা এবং স্থানান্তরের সঙ্গে জড়িত থাকা, কিংবা কোনো ইভেন্টে সেবা দিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চার করতে পারেন।
স্বেচ্ছাসেবীরা সবার দ্বারা স্বীকৃত এবং সুপরিচিত। আপনি চাইলেই ব্যক্তিগত পরিচিতি বাড়ানোর পাশাপাশি কাজের সূত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে যেতে পারছেন, যা আপনার মাঝে জীবনবোধ এবং উদ্দেশ্য তৈরিতে সাহায্য করবে। অনেক স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন, যারা বিশ্বাস করেন এটি তাদের জীবন এবং পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে।
৪. অনলাইন ব্যবসা শুরু করুন
চলমান বৈশ্বিক মহামারিতে ই-কমার্স পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। বাড়িতে বসেই আপনি চাহিদা মাফিক পণ্য কিংবা সেবা হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছেন। সুতরাং আপনার কাছে যদি আকর্ষণীয় পণ্য বিক্রয় কিংবা সেবা দেওয়ার মতো আইডিয়া থাকে, তাহলে আপনিও কাজে নেমে পড়ুন। প্রাথমিকভাবে বন্ধু ও পরিজনদের কাছে প্রচারণার মাধ্যমে ছোট আকারে শুরু করে দিন। এতে আপনি যেমন আয় উপার্জনে সক্ষমতা অর্জন করবেন, তার সঙ্গে সেলস এবং ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে প্রাকটিক্যাল জ্ঞান শিখতে পারবেন।
আপনার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় যদি ব্যবসায় কিংবা উদ্যোক্তা হওয়ার মতো বিষয় থাকে, তাহলে আপনার জন্য এটি শুরু করার এখনই উপযুক্ত সময়। নিজ ব্যবসা ছাড়াও আপনি নিজ পারিবারিক ব্যবসায় সাহায্য করতে পারেন কিংবা স্থানীয় কোনো সংস্থায় ইন্টার্নশিপও করতে পারেন।
৫. ব্যক্তিগত আগ্রহের উপর কাজ করুন
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জীবনের অগ্রাধিকারগুলো স্বাভাবিকভাবেই পরিবর্তিত হতে থাকে। মাদরাসার শুরুর দিকের দিনগুলোতে থাকাকালীন যে ব্যাপারগুলো আপনার ভালো লাগত, শেষের দিকের পর্যায়ে এসে হয়তো সেটা একইরকম ভালো নাও লাগতে পারে। অনেকের কাছে হয়তো সে ভালো লাগাগুলো লাইফটাইম প্যাশন হয়ে যায়। অতএব অবকাশকালীন সময়ের জন্য সর্বোত্তম কাজ যা হতে পারে, তা নিজ নিজ আগ্রহ নিয়ে কাজ করা।
লিখতে ভালবাসেন? কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লেখা শুরু করে দিন। আপনি ইউটিউব এবং ফেসবুক ব্যবহার করেও পেয়ে যেতে পারেন পরিচিতি। আপনি নবীন, এনার্জেটিক এবং মোটিভেটেড। জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য এর চেয়ে ভালো সময় আর হয় না।
তাই আপনার আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার জীবনে কি কি করতে চান এবং কীভাবে করতে চান, তা খুঁজে বের করে কাজে লেগে পড়ুন।
এমডব্লিউ/