শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কুরআন-সুন্নাহর আইন ছাড়া দেশে শান্তি আসবে না : মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী শীত ও শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসবে, সতর্ক থাকতে হবে: গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা ‘কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা জামায়াতের নেই’ শরীরে রক্ত বাড়াতে যেভাবে পালং শাক খাবেন ‘প্রকৃতপক্ষে ভুল হলে ক্ষমা চাইতে প্রস্তুত আ.লীগ’ সিইসিসহ নবনিযুক্ত নির্বাচন কমিশনাররা শপথ নেবেন রোববার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য হলেন মুন্সিগঞ্জের নিরব ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু বাজারে এলো ইনফিনিক্সের সবচেয়ে স্লিম স্মার্টফোন

শুধু সাটিফিকেটের জন্য ইফতা পড়া কাম্য নয়: শীর্ষ ২ মুফতি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

কুরআন-সুন্নাহ, ইজমা কেয়াসের ভিত্তিতে মানুষের দৈনন্দিন পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে থাকেন ফকিহ বা মুফতি সাহেবগণ। একজন যোগ্য মুফতি গড়ে তুলতে দেশের প্রচলিত ফতোয়া বিভাগগুলোতে বিভিন্ন বিষয়কে মাথায় রেখে কোথাও এক বছর কোথাও দুই বছরের কোর্স নির্ধারণ করা হয়েছে। ইদানীংকালে বেশকিছু জায়গায় সাপ্তাহিক-অনলাইন ভিত্তিক ইফতা বিভাগের কথাও শোনা যাচ্ছে। ইফতা বিভাগে পড়ার ক্ষেত্রে বছর-সময়, মেধার মানদন্ডসহ নানান বিষয়ে দেশের অন্যতম দুই মুফতি সাহেবের সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের প্রতিবেদক নুরুদ্দীন তাসলিম


 

জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া (যাত্রাবাড়ী বড় মাদ্রাসা) ঢাকার ইফতা বিভাগের মুশরিফ মুফতি মাহমুদুল হাসান জামশেদ বলেন, আমাদের দেশে প্রচলিত ফতোয়া বিভাগগুলোতে দু'বছর অথবা এক বছরের ইফতা কোর্স রয়েছে। তবে ইফতার ক্ষেত্রে মূল বিষয় হলো, অভিজ্ঞ মুফতি সাহেবের কাছে দীর্ঘদিন থেকে বারবার তামরীনের মাধ্যমে বিভিন্ন উসুলের ভিত্তিতে ফতোয়া বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করা। এক্ষেত্রে যত বেশি সময় দেওয়া যায় সেটাই একজন ফিকহের গবেষকের জন্য ভালো, তবে অনেক বেশি সময় দেওয়া সম্ভব না হলে কমপক্ষে দুই বছর সময় লাগিয়ে ফেকাহ শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করলে কিছুটা উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব বলে মত দিয়েছেন তিনি।

ইফতা বিভাগের সিলেবাস নির্ধারণের ক্ষেত্রে মুফতি মাহমুদুল হাসান জামশেদের মতামত হল, একজন মুফতি সাহেবের কাছে সমাজের মানুষ নানান বিষয় ও জটিলতা নিয়ে প্রশ্ন করতে আসেন, তাই সবধরণের সমস্যা সমাধানে হাদিস, তাফসিরের প্রাথমিক বিষয়গুলোর সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে ইফতা বিভাগের সিলেবাস। যেহেতু ইলমের এক অপরিসীম ভান্ডার উলুমে ফিকহা; তাই একজন মুফতি সাহেবের হাদিস, তাফসিরের বিষয়েও জ্ঞান থাকা অপরিহার্য। ইতোমধ্যে দেশের অনেক ফতোয়া বিভাগে এসবের সমন্বয়ে সিলেবাস গঠিত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া মুফতি মাহমুদুল হাসান জামশেদের মতে, ইফতার সিলেবাস নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভারত, পাকিস্তান, কোন এক দেশের ইফতা বিভাগকে বিশেষভাবে অনুসরণ না করে তাদের সিলেবাসগুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে নিজেদের পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে সিলেবাস নির্ধারণ করা যেতে পারে।

তিনি বলেছেন, প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব ভিত্তি ও মতাদর্শের উপর সিলেবাস প্রণয়ন করে থাকে, যেমন কোন কোন ইফতা বিভাগে হয়তো অর্থনীতির বিষয়টাকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়, কোনোটাতে অন্য কিছু। তাই, একেবারে নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানকে অনুসরণ করে ধরা-বাঁধা সিলেবাসের বাইরে সমন্বিত সিলেবাস নির্ধারণ করা যেতে পারে বলছিলেন তিনি।

ফতোয়া বিভাগের শিক্ষার্থীদের মেধার মানদন্ড যাচাইয়ের ক্ষেত্রে দেশের প্রবীণ এই মুফতির মতামত হল, বর্তমান শিক্ষা বোর্ড বেফাক এবং হাইয়ার বেধে দেওয়া মুমতাজ, জায়্যিদ জিদ্যান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্যই ইফতা নিয়ে পড়াশোনা বেশি উপযোগী। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেন, জায়্যিদ জিদ্যানের নিচের রেজাল্টের শিক্ষার্থীরা ফিকাহ শাস্ত্র থেকে খুব একটা ইস্তেফাদা অর্জন করতে পারেন না- অভিজ্ঞতায় অন্তত তা দেখা গেছে।

ফতোয়া বিভাগের শিক্ষার্ধীর মেধার মানদন্ড নির্ধারণে মুমতাজ, জায়্যিদ জিদ্যানকে প্রাধান্য দিলেও তিনি বলছেন, বিভিন্ন কারণে অনেক সময় মেধাবী শিক্ষার্থীরা বোর্ডের পরীক্ষায় কাঙ্খিত ফলাফল করতে পারেন না, এমন শিক্ষার্থীদের ইফতার প্রতি আগ্রহ থাকলে পরিস্থিতি বিবেচনায় অবশ্যই তাদের ফতোয়া বিভাগে পড়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে এর বাইরে শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য অবশ্যই ইফতা পড়া কাম্য নয় বলেছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, ‘একজন কওমি শিক্ষার্থীর জন্য সার্টিফিকেট অর্জনকে জীবনের উদ্দেশ্য বানিয়ে নেওয়া আদৌ উচিত নয়। এছাড়া এমন সার্টিফিকেট-ভাবনা পুরাপুরিই আকাবিরদের চিন্তা-চেতনা বিরোধী’।

দেশের একটি স্বনাধন্য মাদরাসার ফতোয়া বিভাগের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততার সূত্রে ফতোয়া বিভাগের দায়িত্বশীল একজন ওস্তাদের মাঝে কি কি গুণালরী থাকা অবশ্যক বলে মনে করেন আপনি?

এক্ষেত্রে মুফতি মাহমুদুল হাসান জামশেদ বলেছেন, একজন ইফতা বিভাগের শিক্ষককে অবশ্যই দীর্ঘদিন অভিজ্ঞ কোন মুফতির সংস্পর্শ থাকতে হবে, এছাড়া আধুনিক-সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে তার সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক, অন্যথায় বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন ও সমস্যার সঠিক সমাধানে বর্থ্য হবেন তিনি এবং শিক্ষার্থীরাও তার কাছ থেকে ইস্তফাদা অর্জন করতে পারবেন না।

এদিকে জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগের সিনিয়র মুহাদ্দিস মুফতি হাফিজুদ্দীনের কাছেও একই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেছেন, আমাদের দেশে কিতাবখানাগুলোর একেবারে শুরু থেকে তালিমুল ইসলাম-এর মাধ্যমে ফিকহা বিষয়ক পড়াশোনা শুরু হয়। এরমাঝে বিভিন্ন জামাতেও ফিকহার কিতাব পড়ানো হয়। দাওরায়ে হাদিসেও মাসয়ালার আলোকেই হাদীস পড়ানো হয়।

পরবর্তীতে আলাদা করে ইফতা পড়ার উদ্দেশ্য হলো, মাসয়ালাগুলোকে বর্তমান পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি শেখা। এক্ষেত্রে মেধাবী শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞ ও চিন্তাশীল ওস্তাদের কাছে থেকে এক বছর ইফতা নিয়ে পড়াশোনা করলেও ফতোয়া বিভাগের উদ্দেশ্য অর্জন সম্ভব বলে মত দিয়েছেন তিনি।

তিনি বলছেন, দারুল উলুম দেওবন্দ, শাহী মুরাদাবাদসহ ভারতের প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও এক বছরে ইফতা পড়ানো হয়। তবে ইফতা পড়ার ক্ষেত্রে এক বছর, দুই বছর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভালো করে পড়া, দীর্ঘদিন অভিজ্ঞ ওস্তাদের সংস্পর্শ গ্রহণ করা।

No description available.

ইফতা বিভাগের সিলেবাস কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘আমরা যেহেতু সবকিছুর ক্ষেত্রে দেওবন্দকে অনুসরণের চেষ্টা করি, তাই নিজস্ব পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে মিল রেখে ইফতা বিভাগগুলোতে দারুল উলুম দেওবন্দের সিলেবাসকে অনুসরণ করা যেতে পারে’।

ফতোয়া বিভাগে পড়ার ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর মেধার মানদন্ড কেমন হওয়া উচিত জানতে চাইলে তিনিও বলেন, শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া মুমতাজ, জায়্যিদ জিদ্দান ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীরাই এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেতে পারেন, এর নিচের মেধা তালিকার শিক্ষার্থীরা খুব একটা ভালো ফলাফল করতে পারেন না। তাই মুমতাজ, জায়্যিদ জিদ্দানকে ফতোয়া বিভাগের শিক্ষার্থীর মেধার মানদন্ড হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে,বলছিলেন মুফতি হাফিজুদ্দীন।

 

আরো পড়ুন: অনলাইনে ইফতা কোর্স: হুমকির মুখে ফতোয়া বিভাগ

-কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ