আওয়ার ইসলাম: উগান্ডা আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় স্থলবেষ্টিত একটি দেশ। দেশটির পূর্বে কেনিয়া, উত্তরে দক্ষিণ সুদান ও পশ্চিমে কঙ্গো, দক্ষিণ-পশ্চিমে রুয়ান্ডা ও দক্ষিণে তানজানিয়া অবস্থিত। কাম্পালা উগান্ডার রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ভিক্টোরিয়া হ্রদের তীর ঘেঁষে দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল ভূমি কেনিয়া ও তানজানিয়ার সীমান্ত হিসেবে চিহ্নিত। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে উইনস্টন চার্চিল এটিকে ‘আফ্রিকার মুক্তা’ বলে অভিহিত করেন।
উগান্ডার মোট জনসংখ্যার পরিমাণ ১২০ মিলিয়ন। এর মধ্যে মুসলমানের সংখ্যা ১২ মিলিয়ন। দিন ও রাত এক সমান হওয়ায় উগান্ডার মুসলমানরা রমজানের রোজা ১২ ঘণ্টা পালন করে। উগান্ডায় রমজানের রোজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটি। রমজান মাসকে কেন্দ্র করে উগান্ডার মুসলমানদের রয়েছে নিজস্ব রমজান সংস্কৃতি।
উগান্ডার পশ্চিমাঞ্চলীয় বাওকি এলাকার মুসলমানদের বিচারক সাদাত মোস্তফা জানান, রমজান মাসকে ঘিরে আমাদের মধ্যে কিছু প্রাচীন সংস্কৃতি আছে। এ মাস এলে সবার মধ্যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস বিরাজ করে। কলা দিয়ে তৈরি করা মাটোক (Matoke) ইফতারের প্রধান খাবার হিসেবে প্রচলিত। রমজান ছাড়া নাশতা হিসেবেও এর ব্যবহার আছে। পাশাপাশি রুটির বদলে নাশতায় ‘শাবাতি’ খাওয়া হয়। রমজান মাসে কয়েক বাড়ির মানুষ একটি বাড়িতে মিলিত হয়ে ইফতার করে। রমজান মাসে উগান্ডার গ্রামাঞ্চলের সম্মিলিত ইফতার সবার মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। ইফতারের জন্য প্রতিদিন একটি করে ঘর নির্ধারণ করা হয়।
রমজান মাস উপলক্ষে বহু সংস্থা ও সংগঠনের পক্ষ থেকে মুসলমানদের খাদ্যের ঝুড়ি দেওয়া হয়। উগান্ডার দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় অসহায়দের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিরতণের ব্যবস্থা করা হয়। ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে রমজান মাসে উগান্ডার মসজিদের জন্য ইফতার তৈরি করেন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ইউসুফ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, উগান্ডায় রমজান মাসে বিত্তবান মুসলমানরা মসজিদে ইফতারির ব্যবস্থাপনা করেন। সানকা মসজিদে পুরো রমজান মাসের ইফতারির ব্যয় সংগ্রহ হয়েছে। এ মসজিদে প্রতিদিন তিন শর বেশি মুসল্লির ইফতারির ব্যবস্থা করা হয়।
উগান্ডার ম্যাকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক শায়খ হারুন জামবাহ আবদুল হামিদ বলেন, উগান্ডায় মুসলমানদের আগমনের পর থেকে রমজান মাসের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিরাজমান। এখানকার মুসলমানরা রমজানের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। গ্রামাঞ্চলে ঢোল পিটিয়ে সাহরির সময় রোজাদারদের জাগিয়ে তোলা হয়। তা ছাড়া ইফতারের সময় পরিবারের সবাই একত্র হয়ে মৃতদের জন্য দোয়া করে থাকে।
তিনি আরো জানান, উগান্ডার মুসলমানদের সংস্কৃতি আফ্রিকার অন্যান্য দেশের প্রায় কাছাকাছি। তবে উগান্ডার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এখানকার মুসলমানরা ১২ ঘণ্টা রোজা রাখে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাহরি ও ইফতারের সময় পরিবর্তন হয় না। ভৌগোলিকভাবে দেশটি বিষুবরেখা বরাবর অবস্থিত হওয়ায় এখানকার দিন ও রাত পুরো বছরই প্রায় সমান সমান হয়।
রাজধানী কাম্পালায় অবস্থিত গাদ্দাফি ন্যাশনাল মসজিদ দেশটির জাতীয় ও অন্যতম বৃহত্তর মসজিদ হিসেবে পরিচিত। মসজিদের তত্ত্বাবধানে একটি উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এতে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিও আছে, যেখানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক ও জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তিরা এসে ভিড় জমান। উগান্ডার মুসলমানদের জন্য একটি টিভি ও রেডিও চ্যানেল চালু আছে। বেলাল রেডিও ও আস সালাম টিভি নামের চ্যানেলে ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় ইসলামী বিষয়াবলি সম্প্রচারিত হয়। সূত্র: আল-জাজিরা
-এটি