।।আরিফ রুহানী ৷।
শুনেছিলাম মানবতার গল্প ৷ প্রত্যহ ১৮/২০ ঘন্টা কলুর বলদের মত খাঁটতে হত ৷ জামা-কাপড় ধোয়ার সময় ছিল না ৷ আস্তিন অর্ধেক নোংরা হয়ে গেলে গুটিয়ে রাখত, পুরোটা ময়লা হয়ে গেলে কাঁধ পর্যন্ত কেটে দিত ৷ কয়েকদিন পর শার্ট টা ফেলে দিত ৷ উপায় নেই, কে ধুয়ে দিবে? ব্যস্ত সবাই ৷ ছিল না কোন ছুটির দিন ৷ খাবার-দাবারের কথা তো আরেক সংকটময় পরিস্থিতি ৷ কিন্তু মাস শেষে মাইনে আসত গুটি কয়েক মুদ্রা ৷ এই ছিল সে সময়কার করুণ ইতিহাস ৷ শুরু হল আন্দোলন, মালিক সমিতি ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর প্রতিরোধে ভেস্তে গেল, অসংখ্য প্রাণ ধূলোয় ধূসরিত হল ৷
আজ সেই ১ লা মে ৷ কিন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজ সেই দিবসটি এলে আমরা চরম আনন্দিত হই একটা সরকারী ছুটি পাবো বলে ৷ নেই কোন অনুভূতি, নেই বিষাদময় স্মৃতি ৷ আপনার একটি টাকা বেশি বাড়িয়ে দেয়া একজন শ্রমিকের ঈদ আনন্দ ৷
এখন আসি সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের শ্রমনীতি নিয়ে সর্বোচ্চ অধিকার সিঞ্চিত কথায় ৷ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , ‘ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের মজুরি দাও৷’
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো ইরশাদ করেছেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীন করেছেন সে যেন তাকে তাই খাওয়ায় যা সে খায়, সে কাপড় পরিধান করায়, যা সে পরিধান করে। তাকে সামর্থ্যের অধিক কোনো কাজের দায়িত্ব দেবে না। যদি এমনটা করতেই হয়, তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬১৭)
পবিত্র মাহে রমাদ্বান মাস শ্রমিকদের প্রতি আরো উদার হতে আহবান করে ৷ হাদিসে পাকে ইরশাদ হচ্ছে , ‘রমাদ্বান মাসে শ্রমিকদের কাজের বোঝা হাল্কা করে দাও ৷’ প্রকৃতপক্ষে আমরা সবাই শ্রমিক , কিন্তু শ্রেণীপার্থক্যে কাজের ধরণ আলাদা ৷ ইসলাম কখনই শ্রমজীবি মানুষ ও মালিক পক্ষকে আলাদা করে দেখেনি ৷ এমনকি নবীগণ শ্রম দিতেন ৷ অথচ মানব সভ্যতায় তারাই ছিল সর্বোৎকৃষ্ট মানব ৷ সুতরাং ইসলামী শ্রমনীতিই কেবল বিশ্বমজদুরকে একটি আপাত নয় প্রকৃত প্লাটফর্ম দিতে পারে ৷
আসুন তাদের প্রতি সদয় হই ৷ যারা শ্রমিকদের কে ব্যবহার করে, তাদের নিয়ে রাজনীতি করে সেই মুখোশধারীদের কে রুখে দেই ৷ সময় এসেছে বদলাবার ৷ তথাকথিতদের স্লোগানে নয়, বরং ইসলামী ভাবধারায় ৷ যাতে করে আরেকটা ১ লা মে কিংবা আরেকটা বাশখালী তৈরী না হয় ৷ জয় হোক মানবতার একটি আদর্শিক মূলনীতিতে ৷
-কেএল