মোস্তফা ওয়াদুদ: মাদরাসার সিলেবাসের সঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মিল রেখে নতুন শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে গাজীপুরের মাহাদু লিসানিল কুরআন। চলতি বছরের গত ৪ এপ্রিল উদ্বোধন হয় ব্যতিক্রমী এ মাদরাসা। উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত মুফাসসির মাওলানা খুরশেদ আলম কাসেমী। উদ্বোধনের পর থেকেই মাদরাসার ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ভর্তি প্রক্রিয়া চলমান থাকবে ঈদুুল ফিতরের পর পর্যন্ত। পরিস্থিতি বিবেচনা করে রমজানের পর থেকেই ক্লাস শুরুর কথা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্পূর্ণ নতুনভাবে শুরু করা এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি আবু সাঈদ মুহাম্মদ নোমান। রাজধানীর দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে শিক্ষকতাও করেছেন সেখানে। বর্তমানে একাগ্রচিত্তে শিশুদের ভবিষ্যত শিক্ষাদীক্ষায় মনোনিবেশ করেছেন তিনি। তার ভাষায়, ‘একজন শিশুর মেধা অত্যন্ত প্রখর। তাকে সহজভাবে গড়ে তুলতে পারলে আগামীর নেতৃত্ব দিতে পারবে সে। আর এর জন্য প্রয়োজন পূর্ণাঙ্গ যোগ্যতা। যোগ্যতা অর্জনের অন্যতম শর্ত ইলমি জ্ঞানের পাশাপাশি জাগতিক জ্ঞান। তাই আমরা উভয় ধারার শিক্ষা সিলেবাসকে সমন্বয় করে প্রতিষ্ঠা করেছি মাহাদু লিসানিল কুরআন বাংলাদেশ।’
এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষামান সমৃদ্ধ একটি মাদরাসা। এতে আরবী ভাষার উচ্চতর ডিপ্লোমার জন্য রয়েছে ‘আরবী আদব বিভাগ’।এছাড়া মাদানী নিসাব বিভাগ, হিফজুল কুরআন বিভাগ, নূরানী-মক্তব বিভাগ, ইবতিদায়ী নূরানী বিভাগ ও হিফজ্ রিভিশন বিভাগ রয়েছে।
এটি গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার, দক্ষিণ খাইলকুর, ৩৮ নং ওয়ার্ড, (বাদশাহ মিয়া স্কুল সংলগ্ন) উলামা ভবনে অবস্থিত।
প্রতিষ্ঠানের বিভাগসমূহের বৈশিষ্ট: মাদানী নিসাব বিভাগ: (শিক্ষাকাল : ৫ বছর)
এ বিভাগে ভর্তির যোগ্যতা হাফেজে কুরআন ও জেনারেল বিষয়ে অন্তত পঞ্চম শ্রেণী সমমান। বয়স নূন্যতম ১৪ বছর। যেহেতু হিফজ সমাপ্ত করতে গিয়ে বয়সের বেশ একটা অংশ কেটে যায়, ফলে দেখা যায় কিতাব বিভাগের প্রাথমিক স্তরের ছাত্রদের সাথে একদিকে বয়সের অসামঞ্জস্যতা, অপরদিকে মেধাগত তারতম্যের কারণে অনেক হাফেজ ছাত্র পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। বিষয়টিকে মাথায় রেখে হাফেজ ও মেধাবী ছাত্রদের জন্য উপযুক্ত পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে।
যেহেতু কুরআন, সুন্নাহ ও ইসলামী শরীয়ার মৌলিক সকল জ্ঞান আরবি ভাষায় লিপিবদ্ধ, তাই আরবী ভাষায় দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এ বিভাগে প্রথম দু’বছর আরবী ভাষার দক্ষতা তৈরীর জন্য এর পাঠ্যক্রম নির্ধারণ করা হয়েছে। অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে এ পাঠ্যক্রমে এক বছরেই ছাত্ররা যে কোন আরবি ইবারত পড়তে পারা, কথা বলা ও বক্তৃতা দেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে।
মাধ্যমিক বিভাগের সমাপনী বাংলাদেশ কওমি শিক্ষাবোর্ডের (বেফাক) অধিনে শরহে বেকায়া পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের মাধ্যমে সমাপ্ত হবে।
মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ (আদীব হুজুর) কর্তৃক প্রণীত মাদানী নিসাব ও বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পাঠ্যক্রমের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক মানে এর পাঠ্যক্রম তৈরী করা হয়েছে। বিশেষ করে আরবী ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে আরব সাহিত্যিকদের প্রণীত গ্রন্থকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে।
এছাড়া দৈনিক বাধ্যতামূলক কুরআন তেলাওয়াত ও সাপ্তাহিক শবীনার ব্যবস্থা। বাংলা, উর্দূ ও ইংরেজী ভাষায় দক্ষতা অর্জন।
বিশেষত মাদানী নিসাব বিভাগটি মাদানী নিসাবের প্রবক্তা মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ সাহেবের জামাই বিশিষ্ট আদীব মাওলানা হাবীবুর রহমান মুনীর নদভীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত।
আরবী আদব বিভাগ বা আরবি ভাষায় উচ্চতর ডিপ্লোমা (শিক্ষাকাল : ০১ (এক) বছর) বাংলাদেশিদের জন্য অন্যতম সম্ভাবনায়ময় স্থান ‘আরব বিশ্ব’। আরব বিশ্বের দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠিত হতে আরবি ভাষায় দক্ষতা লাভের বিকল্প নেই। তাই আরবি ভাষায় দক্ষতা লাভের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এ বিভাগটিতে আধুনিক আরব লেখকদের লেখা কিতাব, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের পাঠ্যক্রম, মারকাযুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশের আরবি সাহিত্য বিভাগের পাঠ্যক্রমের সমন্বয়ে এর পাঠ্যক্রম প্রণীত। বিশেষত অনারবদের আরবী লেখা না পড়িয়ে আরবদের আরবী লেখা কিতাব পড়ানো হবে এ বিভাগে। শিক্ষার্থীদের একজন দক্ষ ও যোগ্য আদীব হিসেবে গড়ে তোলা এ বিভাগের অন্যতম বৈশিষ্ট। কুরআন হাদিসের আরবির পাশাপাশি আধুনিক আরবি ভাষার অনুশীলন। মিডিয়া আরবির বিশেষ প্রশিক্ষণ। আরবি ভাষার চারটি যোগ্যতার উপর সমান গুরুত্বারোপ।
নূরানী মক্তব বিভাগ : এ বিভাগটি তেজগাঁও নূরানী মাদরাসার আদলে হিফজ ইচ্ছুক ছাত্রদের জন্য স্পেশালভাবে পাঠদান করানো হয়।
ইবতিদায়ী নূরানী বিভাগ : এ বিভাগে বেফাক বোর্ড ও স্কুল বোর্ড (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড) এর সমন্বয়ে পাঠদান করানো হয়। এ বিভাগের স্পেশাল বৈশিষ্ট হলো একজন শিক্ষার্থী মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঠদানকালীনই কুরআনুল কারীম পূর্ণ নাজেরা শেষ করে দেওয়া হবে। এরপর মেধাক্রম হিসেবে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হিফজ কমপ্লিট করারও পূর্ণ ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মাওলানা মুফতি আবু সাঈদ মুহাম্মদ নোমান রাজধানীর জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ তেরেক তাকমিল সমাপন করেন। শুরুর দিকে পড়েছেন মাদানী নিসাবের মাদরাসা বায়তুস সালামেও। এরপর তামিরুল মিল্লাত থেকে কামিল ও দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষে ২০১০ সাল ২০১৬ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন সেখানে। বাংলাদেশ শিক্ষাবোর্ডেও কর্মরত ছিলেন সচেতন এ আলেম।
মাদরাসায় যাতায়াতের ঠিকানা: দেশের যে কোনো স্থান থেকে গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার নেমে দক্ষিণ খাইলকুর, ৩৮ নং ওয়ার্ড, (বাদশাহ মিয়া স্কুল সংলগ্ন) উলামা ভবনে গেলেই মাদরাসা।
যে কোনো প্রকারের যোগাযোগের জন্য ফোন করুন: ০১৮৬৩৪০৬৮৪০, ০১৭৬১৪৮৮৫৫৬
এমডব্লিউ/