মূল: মুফতি তাকি উসমানী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ নোমান
মুহাম্মদ যাকি কাইফি রহ. নামে আমার একজন বড় ভাই ছিলেন। আল্লাহ তার মর্যাদা উন্নীত করুন, আমিন। ইদারায়ে ইসলামিয়াত নামে লাহোরে তার দ্বীনি বইয়ের একটি দোকান ছিল। এখনো দোকানটি রয়েছে। তিনি একবার কথা প্রসঙ্গে বলেন, আল্লাহ তায়ালা ব্যবসার মাঝে তার নিজ অনুগ্রহ ও কুদরতের অলৌকিক কারিশমা দেখিয়ে থাকেন। তারপর তিনি নিজের সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, একদিন ভোরে জেগে দেখলাম মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে।
বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কয়েক ইঞ্চি পানি জমে গিয়েছে। আমি মনে মনে ভাবলাম, আজ বৃষ্টির দিন। মানুষ বাড়ি থেকে বের হতেই ভয় পাচ্ছে। রাস্তায় পানি জমেছে। এমন দুঃসময়ে বই কিনতে কে আসবে! আর আমার দোকানের বইগুলো তো কোনো দুনিয়াবি কোর্স বা সিলেবাসের বই নয়। বরং এগুলো দ্বীনি বই। যেগুলোর সাথে আমাদের আচরণ হলো,
দুনিয়াবি সব কাজ শেষ হলে কোনো দ্বীনি বই পড়া যায়। দ্বীনি বই দিয়ে তো ক্ষুধা-পিপাসাও মেটেনা আবার দুনিয়াবি কাজেও লাগেনা। তাই বাড়তি সময় পেলে তখন দ্বীনি বই পড়া যাবে। আর এমন মুষলধারে বৃষ্টির দিনে কে বই কিনতে আসবে! তারচেয়ে ভালো আজ দোকানে না গিয়ে ছুটি কাটাবো (যেহেতু তিনি বুযুর্গদের সংশ্রবপ্রাপ্ত ছিলেন।
বিশেষ করে হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ. এর সংশ্রবপ্রাপ্ত ছিলেন)। তিনি বলেন, সাথে সাথে আরেকটা ভাবনা আমার মাথায় এলো, ঠিক আছে আজ হয়তো কেউ বই কিনতে আসবেনা। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এই পেশাকে আমার রিজিকের মাধ্যম বানিয়েছেন। তাই আমার কাজ হবে বাজারে গিয়ে দোকান খুলে বসা। ক্রেতা পাঠানো আমার কাজ নয় তা অন্য কারো কাজ। আমার নিজের কাজের ব্যাপারে অলসতা করা উচিত হবেনা। যতই বৃষ্টি পড়ুক আর বন্যায় ভেসে যাক আমার কাজ হলো দোকান খুলে বসা। এসব ভাবতে ভাবতে আমি ছাতা মাথায় পানি ঠেলে দোকান খুলে বসলাম। ভাবতে লাগলাম, ক্রেতা যেহেতু আজ আসবেনা তাহলে কুরআন পড়তে শুরু করি।
কুরআন খুলে পড়া শুরু করতেই দেখতে পেলাম মানুষ বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছাতা মাথায় বই কিনতে আসছে। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম এ লোকগুলোর এমন কী দরকার পড়লো যে তারা এই ঝড়বৃষ্টির দিনে আমার কাছে বই কিনতে ছুটে আসছে। যার কোনো তাৎক্ষণিক প্রয়োজনও নেই।
তারপরও মানুষ আসতে থাকলো এবং অন্যান্য দিন যেমন বিক্রি হয়ে থাকে সেদিনও তেমন হলো। তখন মনে মনে ভাবলাম, এই ক্রেতারা নিজ থেকে আসেনি বরং কেউ তাদেরকে পাঠিয়েছেন। আর তিনি এজন্য পাঠাইয়েছেন কারণ এই ক্রেতাদের মাধ্যমে তিনি আমার রিজিকের বন্দোবস্ত করেছেন।
-এটি