আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী।।
মাহে রমযানুল মুবারক আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অফুরন্ত রহমত নিয়ে আমাদের কাছে আসে, শ্রাবণের বৃষ্টি ধারার মত বর্ষিত হতে থাকে সেই রহমত। আল্লাহর মকবুল বান্দারা সারা মাস ব্যাপী সেই বৃষ্টি ধারায় স্নাত হতে থাকে। এই মুবারক মাসে মানুষ নিজের পাশবিকতা দমন, নফ্সের কামনা-বাসনা ত্যাগের শক্তি সঞ্চয় করতে পারে, আর এটিই হল তাক্বওয়ার ভিত্তি। এই মাসের উচ্চ মর্যাদা এ একটি কথা থেকেও প্রতিভাত হয় যে, আল্লাহ্ তাআলা এই মাসটির নামকরণ করেছেন নিজের একটি নামের সাথে সম্পৃক্ত করে। (তাজুল আরূস)।
রোযার ইতিহাস সুদীর্ঘ। আগেকার উম্মতগণও যে রোযা রেখেছেন এবং তাদের উপরও যে রোযা ফরয ছিল কুরআন মাজীদের নিুোক্ত আয়াত হতে বুঝা যায়। আল্লাহ্ তাআলা বলেন “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর (রমযানের) রোযা ফরয করা হল, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর, যাতে তোমরা পরহেযগার হতে পার।” রূহুল মাআনী, আল্ বিদায়া ওয়ান্ নিহায়া এবং আইনী প্রভৃতি তাফ্সীর ও হাদীসের ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহে বলা হয় যে, কুরআনের বাক্য “তোমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর” বলে বুঝানো হচ্ছে- হযরত আদম (আ.) থেকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সকল যুগের মানুষ অর্থাৎ- সকল নবীর শরীয়তে রোযা পালনের বাধ্যবাধকতা ছিল নামাযের মতই। হযরত আদম (আ.)এর যুগে প্রতি মাসে তিনটি রোযার হুকুম ছিল, হযরত মূসা (আ.)এর শরীয়তে মুহাররামের দশ তারিখে রোযা রাখার আদেশ ছিল, হযরত দাঊদ (আ.) একদিন পর একদিন রোযা রাখতেন।
হযরত মরিয়াম (আ.) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তিনি বলেন- “আমি আল্লাহ্র জন্য রোযার নিয়্যাত করেছি।” (সূরা মরিয়ামঃ ২৬)। তাফ্সীরে হক্কানীতে তাওরাত শরীফ অর্থাৎ বাইবেলের পুরাতন নিয়মের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় যে, ইহুদীগণের উপর সপ্তম মাসের দশ তারিখে কাফ্ফারার রোযা রাখা ওয়াজিব ছিল। প্রাচীন খ্রীস্টানেরাও সেই রোযা রাখত বলে প্রকাশ। হযরত মূসা (আ.) তুর পর্বতে চল্লিশ দিন রোযা রেখেছেন, হযরত দানিয়াল (আ.) একাধারে তিন সপ্তাহ রোযা পালন করেছেন বলে প্রকাশ। বাইবেল থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইহুদী-খ্রীস্টানেরা এছাড়া আরও রোযা রাখত। বর্তমান যুগেও তাদের ধর্মপরায়ণ লোকেরা বছরের বিভিন্ন সময়ে রোযা পালন করে আসছে।
আগের শরীয়তসমূহে রমযান মাসের ত্রিশটি রোযা ফরয ছিল কি-না এ প্রশ্নের উত্তরে মুফাস্সির ও ঐতিহাসিকগণের ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। কেউ বলেন, খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের উপর রমযান মাসের রোযা ফরয ছিল। কিন্তু খ্রীস্টানেরা তাতে দু’টি পরিবর্তন সৃষ্টি করে। প্রথমতঃ কষ্টের ভয়ে তারা গ্রীষ্মের পরিবর্তে শরৎকালে রোযা রাখত। দ্বিতীয়তঃ এই ত্রুটি পূরণের জন্য ত্রিশের অধিক রোযা রাখত। মুফাস্সিরগণের অন্যদল বলেন, শুধু উম্মতে মুহাম্মদিয়ার উপরই রমযান মাসের রোযা ফরয করা হয়।
ইসলামী শরীয়তে রোযা ফরয হওয়া সম্পর্কে হাফেজ ইব্নে হাজার (রাহ্.) বলেন, রমযানের রোযা ফরয হওয়ার আগে মুসলমানগণের উপর ১০ই মুহাররামের রোযা ফরয ছিল। অতঃপর রমযানের রোযার হুকুম আসলে উক্ত রোযার ফরযিয়্যাত রহিত হয়ে পড়ে। (বুখারী শরীফ)। আল্লামা ইব্নে কাসীর (রাহ্.) আপন তাফ্সীর ‘মাসনাদে আহ্মদ’ গ্রন্থে উল্লিখিত হযরত মাআজ ইব্নে জাবালের এক দীর্ঘ রিওয়ায়াত উল্লেখ করেন। এতে বলা হয় ইসলামের শুরুতে রোযার তিনটি স্তর অতিক্রম করে। প্রথম- রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদীনা শরীফ গমন করলে প্রতি মাসে তিনটি রোযা রাখতেন। তৎসঙ্গে আশূরার রোযাও পালন করতেন। অতঃপর রমযানের রোযা ফরয করা হয়। দ্বিতীয়- রমযানের রোযার আদেশ আসলে প্রথম দিকে মুসলমানদের ইখতিয়ার দেওয়া হয় যে, যার ইচ্ছা রাখবে এবং যার ইচ্ছা ফিদ্য়া দিবে। অতঃপর এই আয়াত নাযিল হয়ঃ “যারা রমযানের মাস পায়, তারা অবশ্যই রোযা রাখবে।” (সূরা বাক্বারাহ্)।
এই আদেশে মুসাফির ও পীড়িত নয় এমন প্রত্যেক নর-নারীর উপর রোযা পালন আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। তবে যারা চরম বার্ধক্যে উপনীত তাদেরকে প্রতি রোযার বদলে ফিদ্য়া দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়। তৃতীয়- ইতিপূর্বে রাত্রে শোয়ার পূর্ব পর্যন্ত খাওয়া-দাওয়া ও স্ত্রীসহবাসের অনুমতি ছিল। শুয়ে পড়লে সকল কাজ নিষিদ্ধ ছিল। অতঃপর কুরআনের অপর আয়াত মতে সুব্হে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত সকল আহার-বিহারের অনুমতি দেওয়া হয় এবং সুব্হে সাদিকের পর হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত রোযা পালনের আদেশ আসে। রোযা কোন মাসে ফরয হয়, এ সম্পর্কে আল্লামা ইব্নে কাসীর আল্ বিদায়া ওয়ান্ নিহায়া কিতাবে লিখেন, “হিজরী দ্বিতীয় সনে শা’বান মাসে বদর যুদ্ধের আগে রমযানের রোযা ফরয করা হয়।”
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইউসুফ বান্নূরী (রাহ্.) বলেন, হিজরী দ্বিতীয় সনের ১০ই শা’বান রোযা ফরয করা হয় এবং উক্ত সনেই ক্বিবলা পরিবর্তন, যাকাত ও সাদকায়ে ফিতরের হুকুম আসে।
সিয়াম বা রোযার উপকারিতা
রোযা পালন এবং অল্প খাদ্যের উপকারিতা; অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে অধিকাংশ শারীরিক ক্ষতি ভোজনের ফলে হয়। পেট ফাঁপা, বদহজম, গ্যাস্টিক, আলসার প্রভৃতি রোগ অনিয়মিত ও অতি ভোজনের কারণে হয়। রোযা এ সবের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পরিপাক শক্তিকে সতেজ করে তুলে। নিম্নে এ ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কিছু মূল্যবান মতামত পেশ করছি।
* অধ্যক্ষ ডি.এফ ফোর্ড বলেন, রোযা পালন আত্মশুদ্ধি ও সংযমের অন্যতম উপায়, যার মাধ্যমে স্রষ্টাকে লাভ করা যায়, স্বাস্থ্য রক্ষা করা যায়। হিংসা-বিদ্বেষ ও নৃশংস স্বভাব হতে দূরে থাকা সম্ভব হয় এবং খুব সহজে কুপ্রবৃত্তিকে দমিয়ে রাখা যায়। (সাইন্স করফর ফাস্টিং-১৪৩, রমযানের হাদিয়া-১৩৫)।
* মর্মাথিউ পিতকল বলেন, সভ্যতার এই চরম যুগসন্ধিক্ষণেও রোযার উপকারিতা সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। সকল মানুষকে কর্মক্ষম থাকার জন্য চেষ্টা করতে হয়। পরিশ্রমের কি গ্লানি তা প্রত্যক্ষ করার জন্য রোযার সাধনা এক প্রকৃষ্ট মাধ্যম। (তাফ্সীরে মাজীদী-১৪৪, রমযানের হাদিয়া-১৩৬)।
সিয়াম বা রোযার সামাজিক উপকারিতা
হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান মাসকে সহানুভূতির মাস বলে অভিহিত করেছেন। সুতরাং এ মাসে রোযাদার নিজের সামর্থ অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, অনাথ-এতিম ও দ্বীনদার দুঃখীদের খবরগিরী করবে এবং অধিক হারে দান-খায়রাত করে গরীব-নিঃস্ব ও দুঃখীদের মুখে হাসি ফোঁটানোর চেষ্টা করবে। অন্য দিকে রোযাদারকে অন্যের গীবত, শেকায়াত, অনাচার, অশ্লীলতা এবং ঝগড়া-বিবাদ থেকে বিরত থাকতে হয়। এমনকি হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, অন্য কেউ রোযাদারের সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতে চাইলে তাকে যেন নম্রতার সাথে বলে দেওয়া হয় যে, ভাই আমি রোযাদার অর্থাৎ বিবাদ করার সময় নয়। মোটকথা, রমযানের রোযা মানুষে মানুষে দয়া ও সহানুভূতি বাড়ায়, সমাজ অনাচার মুক্ত হতে থাকে এবং সর্বত্র শান্তির একটি বেহেশ্তী পরিবেশ বিরাজমান থাকে।
সিয়াম বা রোযার আহ্কাম
মাহে রমযানুল মুবারকের রোযা রাখা ইসলামের তৃতীয় ফরয। এই রোযার অস্বীকারে মুসলমান থাকা যায় না এবং যে এই ফরয আদায় করে না, সে বড় পাপী।
রোযার নিয়্যাত
নিয়্যাত অর্থ দিলে সংকল্প, তা মুখে উচ্চারণ করুক বা না করুক। রোযার জন্য নিয়্যাত শর্ত। বিনা নিয়্যাতে সারা দিন পানাহার না করলেও রোযা হয় না। রাতে রমযান মাসের রোযার নিয়্যাত করা উত্তম। নতুবা সূর্য ঢলার দেড় ঘণ্টা আগেও করা যায়।
যেসব কারণে রোযা ভেঙ্গে যায়
কান ও নাকে ঔষধ প্রবিষ্ট করা, ইচ্ছাকৃতভাবে পূর্ণমুখে বমি করা, কুলি করার সময় গলায় পানি ঢুকা, এমন কিছু গিলে ফেলা যা সাধারণতঃ খাওয়া হয় না যেমন কাঠ, লোহা ও গমের কাঁচা দানা প্রভৃতি। আগর বাতি ইত্যাদির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাক ও গলায় প্রবেশ করা, ভুলে পানাহার করতঃ পরে রোযা ভঙ্গ হয়েছে মনে করে খাওয়া-দাওয়া করা, রাত আছে মনে করে সুব্হে সাদিকের পর পানাহার করা, ইফতারের সময় হয়েছে মনে করে সূর্য ডুবার আগে ইফতার করা। এসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় এবং পরে শুধু ক্বাযা দিতে হয়, কাফ্ফারা নয়।
রোযার কাফ্ফারা
ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার বা যৌন সঙ্গমের ফলে রোযা ভঙ্গ হয় এবং তজ্জন্য ক্বাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই দিতে হয়। রোযার কাফ্ফারা হল, একজন দাসকে মুক্ত করা। যেখানে দাস-দাসীর প্রথা নেই কিংবা দাস ক্রয়ের সামর্থ নেই, সেখানে একটানা ষাট দিন রোযা রাখতে হয়। মধ্যে কোন কারণে বিরতি হলে আবার নতুনভাবে শুরু করতে হয়। কিন্তু যদি রোযা রাখার শক্তি না থাকে, তবে ষাট জন প্রাপ্ত বয়স্ক মিসকিনকে দুই বেলা পেট ভরে মত খাদ্য দিতে হবে।
যেসব কারণে রোযা মাকরূহ হয়
অনাবশ্যকভাবে কোন বস্তুকে দাঁতে চিবানো, লবণ ইত্যাদির স্বাদ নিয়ে পরে থু-থু ফেলা, গোসল ফরয হওয়ার পর সারা দিন বিনা গোসলে থাকা, রোগীকে রক্ত দান করা, সিঙ্গা দ্বারা রক্ত বের করা, অনুপস্থিত লোকের গীবত করা, ঝগড়া-বিবাদ করা, গালি দেওয়া। এসব কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না, কিন্তু মাকরূহ্ হয়।
যেসব কারণে রোযা মাকরূহ হয় না
মিসওয়াক করা, মাথা বা দাড়ি মুছে তৈল দেওয়া, চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করা, সুগন্ধির ঘ্রাণ নেওয়া, গরম বা পিপাসার কারণে গোসল করা, যে কোন প্রকারের ইনজেকশন বা টিকা নেওয়া, কানে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় পানি প্রবেশ করা, গলায় অনিচ্ছায় ধোঁয়া, ধূলাবালি বা মশা-মাছি ইত্যাদি ঢুকে যাওয়া, অনিচ্ছায় বমি হওয়া, ঘুমে স্বপ্নদোষ হওয়া, দাঁতের রক্ত পড়া (যদি গলায় না যায়)। এসব কারণে রোযা ভঙ্গ ও মাকরূহ্ হয় না।
যেসব কারণে রোযা না রাখা যায়
রোগ-ব্যাধির কারণে যদি রোযার শক্তি না থাকে কিংবা বৃদ্ধির আশঙ্কা হয়, তবে রোযা না রাখা যায়। কিন্তু পরে ক্বাযা দিতে হয়। যে মহিলা গর্ভবতী হয় এবং রোযার ফলে নিজের বা গর্ভের সন্তানের প্রাণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, সেও রোযা না রেখে পরে ক্বাযা দিবে। মুসাফিরের জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। তবে কষ্ট না হলে রোযা রাখা উত্তম। অবশ্য রোযা রাখার দ্বারা সফর সঙ্গীদের কষ্ট হলে রোযা না রাখা ভাল। রোযা রাখাবস্থায় সফরে যাত্রা করলে সেই দিনের রোযা অবশ্যই পূরণ করবে। পক্ষান্তরে রোযা না রাখাবস্থায় সফর হতে দিনের বেলায় ঘরে ফিরলে অবশিষ্ট দিন খাওয়া-দাওয়া হতে বিরত থাকবে। আর যদি রোযার নিয়্যাত করা যায় মত সময়ে অর্থাৎ দ্বিপ্রহরের দেড় ঘণ্টা আগে কেউ সফর হতে ঘরে ফিরে, তার পক্ষে রোযার নিয়্যাত করা আবশ্যক (যদি সকাল হতে রোযা ভঙ্গের কোন কারণ না ঘটে)।
হত্যার হুমকি দিয়ে কাউকে রোযা না রাখতে বাধ্য করা হলে সেও রোযা না রাখতে পারে। কোন রোগ-ব্যাধি বা তীব্র ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর হয়ে প্রাণের ভয় হলে এবং কোন দায়িত্বশীল মুসলমান চিকিৎসক তা সমর্থন করলে, তার পক্ষে রোযা ভঙ্গ করা জায়েয, বরং ওয়াজিব হয়ে পড়ে। মহিলাগণের ঋতুকালে এবং নিফাস অর্থাৎ সন্তান প্রসবের পর রক্তক্ষরণ অবস্থায় রোযা রাখা জায়েয নয়। উল্লিখিত মজবুর ও মা’যুর লোকগণ পরে রোযার ক্বাযা দিবে। দ্রষ্টব্য যে, যাদের পক্ষে রোযা না রাখা জায়েয, তারা রমযান মাসের মর্যাদা রক্ষায় প্রকাশ্যে পানাহার হতে অবশ্যই বিরত থাকবে।
রোযার ক্বাযা
শরীয়ত সম্মত ওযরের কারণে রোযা ক্বাযা হলে পরে যথাশীঘ্র তা আদায় করা কর্তব্য। কারণ, জীবনের কোন ভরসা নেই। ক্বাযা দেওয়ার সময় একাধারেও রোযা রাখতে পারে, কিংবা মধ্যে বিরতিও দিতে পারে। মুসাফির দেশে ফেরার পর কিংবা অসুস্থ লোক সুস্থ হওয়ার পর যদি ক্বাযা আদায়ের সময়টুকু না পায় (যেমন মৃত্যু ঘটা), তবে তার জন্য ক্বাযা আদায়ের হুকুম রহিত হবে। অবশ্য যদি কয়দিন সময় পায়, তবে সেই দিনসমূহের ক্বাযা দিতে হবে। (অর্থাৎ তার মৃত্যুর পর ওয়ারিসগণ তার পক্ষ হতে না রাখা রোযাগুলোর ফিদ্য়া আদায় করবে যদি মৃত ব্যক্তি অসীয়ত করে এবং পর্যাপ্ত সম্পদ রেখে যায়)।
সাহরী ও ইফতার
সেহরী খাওয়া সুন্নাত এবং বরকত ও সাওয়াবের কাজ। অর্ধ রাতের পর সেহরী খেলেও সুন্নাত আদায় হয়। তবে রাতের একেবারে শেষ দিকে খাওয়া উত্তম। সুব্হে সাদিক হওয়ার আগে কেউ আযান দিলে তথাপি সেহরী খাওয়া যায়। খাওয়ার পর রোযার নিয়্যাত অন্তরে করলেও যথেষ্ট। আরবী ভাষায় এভাবে নিয়্যাত করা যায়- “বিসাওমি গাদিন নাওয়াইতু মিন শাহরি রমযান।”
সূর্য ডুবার ইয়াক্বীন হওয়ার পর ইফতারে বিলম্ব করা মাকরূহ্। তবে বৃষ্টি-বাদলের কারণে সন্দেহ হলে দু’চার মিনিট বিলম্ব করা ভাল। খেজুর ও খোরমা দ্বারা ইফতার করা উত্তম। অন্য জিনিস দ্বারাও ইফতার করলে অসুবিধা নেই। ইফতারের দোয়া- “আল্লা-হুম্মা বিসমিকা সুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা আফতারতু।”
নামাযে তারাবীহ
রমযান মাসে ঈ’শার ফরয ও সুন্নাত আদায়ের পর জামাআতের সাথে তারাবীহের বিশ রাক্আত নামায সুন্নাতে কিফায়া। মহল্লার মসজিদে যদি তারাবীহের জামাআত হয়, তবে কেউ ঘরে একা তারাবীহ্ আদায় করলেও সুন্নাত আদায় হয়। অবশ্য এই ক্ষেত্রে মসজিদ ও জামাআতের সাওয়াব থেকে মাহরূম থাকবে। কিন্তু যদি মহল্লার কোথাও জামাআত অনুষ্ঠিত না হয়, তবে সকল মহল্লাবাসী গুনাহ্গার হবে।
তারাবীতে এক খতম কুরআন পাঠ করাও সুন্নাত। কোথাও যদি কুরআনের হাফেজ পাওয়া না যায় কিংবা বিনিময় ও পারিশ্রমিক নিয়ে খতম পড়ে, তবে তার পরিবর্তে সূরা তারাবীহের ব্যবস্থা করবে। খতমে তারাবীহের বিনিময় নেওয়া ও দেওয়া উভয়ই হারাম। শব্দ পড়ে যায় মত খতম পড়া বড় গুনাহ্। এতে না ইমামের সাওয়াব হবে না মুক্তাদীর। নাবালক ছেলেকে তারাবীহের ইমাম বানানো আলেমগণের ঐক্যমতে জায়েয নয়। তারাবীহের কিছু রাক্আত ছুটে গেলে ইমামের সাথে বিতিরের নামায আদায় করে নিবে। অতঃপর ছুটে যাওয়া নামায একা আদায় করবে। (জাওয়াহিরুল ফিক্বাহ্)।
লেখক: আল্লামা হাফেজ মুহাম্মদ জুনায়েদ বাবুনগরী, শায়খুল হাদীস ও শিক্ষা পরিচালক- দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম, আমীর- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
-এটি