রফিকুল ইসলাম জসিম ।।
কালের বিবর্তণ ও মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মনিপুরিদের ঐতিহ্য সাংগাই ঘর। যা মনিপুরিদের অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে একসময় ছিল আভিজাত্যের প্রতীক।
প্রাচীনকাল থেকে রয়েছে কিছু নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যবাহী কিছু ব্যবহার্য জিনিসপত্র। যুগ যুগ ধরে প্রত্যেক জাতি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ধারণ-লালন হয়ে আসছে। মণিপুরিরা এদেশে ইতিহাসে প্রায় দুইশত বছরের পথ অতিক্রান্ত করেছে। এই প্রবাহিত পথ পরিক্রমায় রয়েছে অনেক গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।
এই আধুনিক যুগে আধুনিক সংস্কৃতি, পণ্য ও অত্যাধুনিক কলাকৌশলের প্রতিযোগিতায় আস্তে আস্তে বাঙালির অতীত সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনেক কিছু আজ অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে।
হারিয়ে যাওয়া মনিপুরি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ হলো বসবাসের জন্য ঘর। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ বসবাসের জন্য তৈরি করতো ছনের ঘর, কাঠের ঘর, মাটির ঘর ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে মণিপুরিদের জনপ্রিয় ছিল সাংগাই ঘর। পূর্ব পশ্চিমমুখীঘরকে বলা হয় সাংগাই। উত্তর - দক্ষিণ কিংবা অন্য যেকোনো মুখী আড়াআড়ি ঘরকে বলা হয় সাংফাই।
প্রতিটি ঘরে কমপক্ষে ২১-২২টি তারেং(খুটি) থাকত এবং কক্ষগুলোর ভিন্ন ভিন্ন নাম ছিল। -পিবা-কা (ছেলের কক্ষ), ঘরের ডানদিকে নিঙল-কা(মেয়ের কক্ষ), ভিতরের কক্ষে মাইবা-কা (মা-বাবার কক্ষ), ফামুং-কা(বাসরঘর), ও সানামাহি কা, চাকফাম কা, আচাঙ কা, মন্ত্রী কা ইত্যাদি সহ মোট ১৮ টি কক্ষ থাকে । সামনের দিকে ফুংগা (রান্নাঘর), তিন-পায়া বিশিষ্ট জসবি(অ্যাঙ্গেল)দিয়ে তৈরি বিশেষ ধরনের চুলা থাকত ঘরের ভিতরে সোজা মূল দরজা বরাবর।
মণিপুরিদের সাংগাই ঘরের প্রচলন দিনে দিনে কমে আসছে। আবহমান কালের গ্রামীণ ঐতিহ্যের সাঙাইয়ের ঘর যেমন আরামদায়ক তেমনি স্বাচ্ছন্দময়। এ ঘর নির্মাণ খরচও কম। বর্তমানে এই ঘর খুব একটা চোখে পড়েনা। হারিয়ে যেতে বসেছে মনিপুরীদের আজন্ম স্মৃতি চিহৃটি। হয়ত সেদিনটি খুব বেশি দূরে নয়; যেদিনবসাঙাই ঘরের কথা মানুষের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে। আর আগামী প্রজন্ম রূপকথার গল্পেই এই ঘরকে স্থান দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে।
-এটি