ফরহাদ খান নাঈম ।।
আল্লাহ তায়ালার কিতাব কুরআনের সাথে সকলেই একটি বিশেষ সখ্যতা গড়ে তুলতে চায়। আর কুরআনের সাথে সখ্যতা কিংবা নিবিড়তা গড়ে তোলার একটি অন্যতম মাধ্যম হলো কুরআনকে হৃদয়ে স্থান দেওয়া।
কুরআনকে আত্মস্থ করার এই মহান চেতনা নিয়ে অনেক নারীই কুরআন হিফজ করতে শুরু করে। অনেকেই সফল হয়। আবার অনেককেই ব্যর্থ হয়ে মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে হয়।
কখনো পারিবারিক কারণে, আবার কখনো অন্যান্য পড়াশোনা, কখনোবা শুধুমাত্র আত্মশৃঙ্খলাবোধের অভাবে অনেক নারী কুরআন হিফজ করার মতো এক মহৎ কাজ থেকে ব্যর্থমনোরথ হয়ে পশ্চাপসরণ করে। অনেকে আবার ভাবতে থাকে- এই দুষ্কর কাজটি সাধন করা কি আসলেই আমার পক্ষে সম্ভব?
নিচে উল্লিখিত ছয়টি টিপস এক্ষেত্রে হিফজ প্রত্যাশী নারীদের কাজে আসবে ইনশাআল্লাহ।
অল্প অল্প করে শুরু করুন
কথায় আছে, হাজার মাইলের পথ একটি ছোট পদবিক্ষেপের মাধ্যমে শুরু হয়।প্রথমে এক লাইন – দুই লাইন করে মুখস্থ করতে শুরু করুন। এরপর যখন মনে হবে, আপনি আরো বেশি করে মুখস্থ করতে পারবেন, তখনই কেবল মুখস্থের পরিমাণ বাড়াবেন। এতে করে কুরআন হিফজ করার ক্ষেত্রে আপনার গতিবিধি ভারসাম্যপূর্ণ থাকবে। অন্যথায় অতিরিক্ত চাপের কারণে আপনার মন আপনার বিরোধিতা করতে পারে।
ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন
যেকোনো কর্মসিদ্ধির প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো, সংশ্লিষ্ট কাজে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। আর কুরআন হিফজ করার ক্ষেত্রেও এটির কোনো বিকল্প নেই। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে কুরআন মুখস্থ করার প্রক্রিয়া চালু রাখতে হবে। প্রথম প্রথম একদিনে খুব বেশি সময় নির্ধারণ না করে বরং যতটুকু বাস্তবায়ন করা সম্ভব ততটুকুই নির্ধারণ করা উচিত। প্রতি এক মাস অন্তর অন্তর অভ্যস্ততার উপর ভিত্তি করে সময় বাড়ানো যেতে পারে।
রিভিশন করতে ভুলবেন না
কুরআন হিফজ করা আসলে 80% রিভিশন ও 20% শুধু মুখস্থকরণ।তাই হিফজ করার জন্য নির্ধারিত সময়টাকে সেই অনুপাতে ভাগ করে নিতে হবে। মুখস্থের পরিমাণ যতো বাড়বে রিভিশনের গুরুত্বও ততো বেড়ে যাবে। সামনের দিকে মুখস্থ করতে থাকার পাশাপাশি যদি যথাযথভাবে রিভাইস করা না হয়, তাহলে তা হবে ফুটো বালতিতে পানি রাখার ন্যায়।
অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ শিক্ষকের অধীনে হিফজ করুন
কুরআন মুখস্থ করার এই যাত্রায় কখনোই একলা পথিক হবেন না। অবশ্যই একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের অধীনে থেকে কুরআন মুখস্থ করুন। এতে করে আপনার হিফজটা সুশৃঙ্খল হবে; এবং শিক্ষকের তদারকির কারণে এই মহৎ কাজটা আপনার জন্য আরো সহজ হবে।
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না
আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেককেই ভিন্ন ভিন্ন কর্মদক্ষতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এ কারণে সবার অর্জনও এক হয় না। তাই অযথা অন্যের সাথে তুলনা করবেন না। এতে করে হয়তোবা অন্যের চেয়ে তুলনামূলক কম পড়ার কারণে আপনি হতাশ হবেন, নয়তো অন্যের চেয়ে বেশি পড়ার কারণে আপনার মনে অহংকার সৃষ্টি হতে পারে। আর হতাশা ও অহংকার এ দুটিই কোনো কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়।
তীব্র ইচ্ছাশক্তি লালন করুন
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ টিপটি হলো, কুরআন হিফজ করা শুরু করার পূর্বে নিজের ইচ্ছাশক্তিটাকে একবার যাচাই করে দেখুন। সেখানে যদি কমতি থাকে তাহলে সেটিকে মেরামত করুন। আর সর্বদা মনে রাখতে হবে, আপনি শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাকেই সন্তুষ্ট করবার জন্য কুরআনুল কারিম হিফজ করছেন; অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়।
এ প্রসঙ্গে একটি হাদিস বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য- আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের বাহ্যিক অবয়ব কিংবা সম্পদের দিকে তাকান না; বরং তিনি তোমাদের হৃদয়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। মুসলিম।
তাই হিফজ করার পুরো সময়টা জুড়েই মাঝে মাঝে নিজের নিয়তটা নবায়ন করে নিতে হবে। হিফজ করার পেছনে নিয়তটা যদি হয়- আমার অন্যান্য সাথী হিফজ করেছে, তাই আমিও করবো কিংবা লোকে আমাকে হাফেজা বলবে, তাহলে আপনার নিয়তে ভেজাল আছে।
সর্বোপরি এ মহৎ কাজে নিজের সফলতার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট দুআ করতে হবে, সাহায্য চাইতে হবে। কখনো কখনো মনে হতে পারে, আমি বোধ হয় পারবো না। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই কঠোর অধ্যবসায় ও আন্তরিক দুআকে ছোট করে দেখা যাবে না। কঠোর অধ্যবসায় চালিয়ে যাওয়া আপনার কাজ, আর আপনার দুআ কবুল করে আপনাকে কুরআনের হাফেজা বানানো আল্লাহ তায়ালার কাজ।
-এটি