আওয়ার ইসলাম: কম ঘুম স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। ঘুমের সমস্যা জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে সামনে আসছে। ঘুমের ব্যাপারে ব্যক্তি ও সমাজের মনোযোগী হওয়া দরকার। করোনা মহামারিকালে অনেকে ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন। অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা মহামারিকালে বেড়েছে। অনিদ্রা ও ঘুমের বিভ্রাট জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দেওয়ার আগে এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার তাগিদ অনুভব করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষকেরা বলছেন, করোনা মহামারির কারণে অনেকে জীবিকা হারিয়েছেন অথবা তাঁদের জীবিকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। জীবিকার চিন্তায় অনেকের ঘুম কমেছে, ঘুম নষ্ট হয়েছে। তাঁরা আর আগের মতো নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারছেন না। করোনার কারণে অনেককে বাড়িতে-ঘরে বেশি সময় আবদ্ধ থাকতে হচ্ছে, তাই নতুন অভ্যস্ততায় অনেকের ঘুমের অভ্যাস বদলে গেছে। বাড়িতে-ঘরে থেকে টেলিভিশন দেখা বা মোবাইল ফোন-কম্পিউটার ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে শিক্ষার্থীদের। এসব ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে আগের চেয়ে বেশি। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর যেসব সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে, তার অন্যতম অনিদ্রা ও ঘুমের অন্য কিছু সমস্যা।
গত ডিসেম্বরে ইউরোপিয়ান স্লিপ রিসার্চ সোসাইটি ঘুমবিষয়ক সাময়িকী জার্নাল অব স্লিপ রিসার্চে কানাডার ৫ হাজার ৫২৫ জন নাগরিকের ওপর করা জরিপ ফলাফল প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করে। উত্তরদাতাদের ৩৬ শতাংশের মহামারির আগেই নানা ধরনের ঘুমের সমস্যা ছিল। তবে মহামারির সময় সেই হার বেড়ে ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে।
ঘুম আসে না
কেন ঘুম আসে, ঘুম কেন আসে না-এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের গবেষণার শেষ নেই। স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হলে ঘুমের প্রয়োজন। আবার প্রয়োজনমতো ঘুম কতটুকু, তা নিয়ে আছে নানা বিতর্ক, নানা বৈজ্ঞানিক যুক্তি। চিকিৎসকেরা বলছেন, গভীর ঘুম কিছু রোগ থেকে আরোগ্য দেয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘুমকে প্রভাবিত করে পরিবেশ, মানুষের জিনকাঠামো ও অভ্যাস।
কার কতটুকু ঘুম দরকার, তা নিয়ে অনেক কথা হয়। স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য ২০১৫ সালে আমেরিকান একাডেমি অব স্লিপ মেডিসিন এবং স্লিপ রিসার্চ সোসাইটি কয়েক হাজার গবেষণা প্রবন্ধ পর্যালোচনা করে কোন বয়সীদের কত ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, তার একটি চিত্র দিয়েছে। তারা বলছে, নবজাতক থেকে শুরু করে ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের ১৭ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন।
প্রয়োজনের তুলনায় কম ঘুমালে পরদিন সকালে সহজেই তা অনুভব করা যায়। যাঁরা নিয়মিত ঘুমান, তাঁদের তুলনায় প্রতিদিন ছয় ঘণ্টার কম ঘুমানো মানুষ কাজে ভালো করেন না বলে গবেষণায় দেখা গেছে। ঘুমে বঞ্চনা হলে তার প্রভাব পড়ে স্নায়ুতন্ত্রে, অনেক মানুষের স্মরণশক্তি কমে যায়, অনেকের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা কমে যায়।
ঘুমের শত্রু
নানা সামাজিক বা প্রতিবেশগত কারণে অনেক মানুষ প্রয়োজনীয় সময় ঘুমাতে পারে না। এর মধ্যে আছে শিশু, পোষা প্রাণী, শব্দ, আলো, তাপ, শয্যার ধরন, ব্যথা, শয্যাসঙ্গী, কাজের ধরন, অভ্যাস, মাদক, ওষুধ, টেলিভিশন, রেডিও, কম্পিউটার, মুঠোফোন এবং আরও অনেক কিছু।
কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তি চাইলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে, করতে পারেন। ঘুমের সময় চোখের মাস্ক পরলে আলোর সমস্যা দূর করা যায়। শোয়ার ঘর থেকে টেলিভিশন, টেলিফোন, রেডিও, পোষা প্রাণী সরিয়ে দেওয়া যায়।
আবার কিছু সমস্যা দূর করা কঠিন বা জটিল। সমাজে ঘুমের সমস্যা নিয়ে আলোচনা কম। বাড়ির পাশে রাস্তায় উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা রাখেন নগরকর্তারা। শব্দ প্রতিবেশীর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, এ কথা অনেকের বিবেচনায় থাকে না।
করণীয় ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক মণিলাল আইচ বলেন, ‘ঘুম বিষয়ে ব্যক্তি ও সমাজকে সচেতন হতে হবে। ব্যবসায়ী ও বড় অফিসের কর্মকর্তাদের বুঝতে হবে, প্রয়োজনীয় ঘুম না ঘুমালে কর্মকর্তা-কর্মচারী—কারও উৎপাদনশীলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে যায় না। কম ঘুম স্বাস্থ্যহানিকর।’
এমডব্লিউ/