রফিকুল ইসলাম জসিম ।।
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।বিশ্বে যা কিছু এল পাপ-তাপ, বেদনা অশ্রুবারি,অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।’ আর্থ-সামাজিক অবস্থান থেকে বাংলাদেশের মনিপুরি মুসলিম নারীরা তাঁতশিল্পের ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে।
বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে অষ্টাদশ শতক থেকে মণিপুরীদের বসবাস। বর্তমানে মৌলভীবাজার কমলগঞ্জের প্রায় ১১ হাজারের বেশি মণিপুরি মুসলিম রয়েছে। এ সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর মধ্যে এসময় দিনরাত বিরামহীন প্রতিযোগীতায় চলে তাঁতের কাপড় বুননের কাজ। ঐতিহ্যের ধারায় মনের স্বপ্ন ফুটিয়ে তুলতে যেমন ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন মনিপুরি নারীরা তেমনি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে তাঁতগুলোও। তাঁতের প্রতিটি সুতার ফাঁকে যেন লোকিয়ে আছে মনিপুরী জীবনের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
সরেজমিনে কমলগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে মণিপুরী সম্প্রদায়ের মুসলিম নারীরা তাঁতের কাজ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। জানা যায়, পুরো উপজেলায় প্রায় ১৫০০ জন মুসলিম মণিপুরী নারী তাঁতের কাজ করছেন। বর্তমানে নানা রঙের সুতো দিয়ে ফুল তোলা তাঁতের কাপড়ের দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা থাকায় মণিপুরী মুসলিম নারীরা এ কাজে উৎসুক হয়েছেন।
অনেক তাঁতিরা জানান, তাঁত শিল্পীরা নিজেদের কাজ এগিয়ে নিতে তাই সাহায্য নিতে হয় বিভিন্ন এনজিওদের। সেখান থেকে এনজিওরা তাদের ফায়দা লুটে নিলেও শিক্ষার অভাবে ঋণকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহারে ব্যর্থ হচ্ছে তারা। এই অঞ্চলে ব্র্যাক, স্বনির্ভর, আশা, গ্রামীণের মতো বড় বড় এনজিওগুলো বড় সুদে ঋণ দেয়। যা শোধ করতে গেলে মাঝে মাঝে তৈরিকৃত শাড়ি আরও কম দামে বিক্রি করতে হয়।
২০১৯ সালের বাংলাদেশ মণিপুরি মুসলিম ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (বামডো) কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যমতে, বাংলাদেশে বসবাসরত মনিপুরি জনসংখ্যা ১০,৯৪৭ জন৷ এর মধ্যে পুরুষ ৫৬৩৮ এবং মহিলা ৫৩০৯ জন৷ মোট পরিবার ১৯২১ টি এবং ৩৩ টি। মনিপুরিদের প্রতি বাড়িতে তাঁতে কাপড় বুননের জন্য তাদের নিজস্ব তাঁত রয়েছে। এ সম্প্রদায়ের শতকরা ৯০ ভাগ নারী তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত।
কমলগঞ্জ উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিলকিস বেগম নারীদের এ উদ্যামের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্য অনেকদিনের, এসব ব্যবহার করে অন্যরা লাভবান হচ্ছিল। তাঁত শিল্পে নারীরা এগিয়ে আসায় শুধু আর্থিকভাবে লাভ হইনি, আমাদের ঐতিহ্যও হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পাচ্ছে।
-এটি