শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


তালাক না নিয়ে অন্যের বউ বিয়ে করা বিষয়ে মাওলানা রব্বানীর বক্তব্য ভাইরাল

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও কেবিন ক্রু তামিমা সুলতানা তাম্মির বিয়ে নিয়ে তুমুল বিতর্ক ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তামিমার আগের স্বামী রায়হানের অভিযোগ তাকে তালাক না দিয়েই নাসিরকে বিয়ে করেছেন তামিমা। কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে বিষয়টি নিয়ে খুব আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এখন আবার শোনা যাচ্ছে নাসিরকে বিয়ের আগে ছয় মাস অন্য কারো সঙ্গে সংসার করেছেন এ কেবিন ক্রু। বেহাপনার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় তাকে নিয়ে কথা বলছেন অনেকেই।

কয়েকজন আইনজীবী নাসির ও তামিমার বিতর্কিত বিয়ে নিয়ে তাদের আইনি মতামত দিয়েছেন। এদিকে নাসিরের বিয়ের বিষয়টি ওয়াজ-মাহফিলের আলোচনায়ও স্থান পেয়েছে। অন্যের বউ বিয়ে নিয়ে অনেকেই মাওলানা গোলাম রব্বানী যুক্তিবাদীর কাছে তার মতামত জানতে চেয়েছেন। এ নিয়ে ঝিনাইদহে একটি ওয়াজে পবিত্র কোরআনের আলোকে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে ইউটিউব ও ফেসবুকে সেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।

নাসির-তামিমার বিয়ে প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নারীদের দোষ আগে দেবেন নাকি পুরুষের দোষ আগে দেবেন? সমাজের অবস্থা এমন হয়ে গেছে বউ তুমি কার? বউ একজনের আছে এরপরও আরেকজনের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। এগুলো নারী নাকি বেহায়া ডাইনি।

পবিত্র কোরআনের সূরা নুরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, দুশ্চরিত্রবান নারীর জন্য দুশ্চরিত্র পুরুষ, দুশ্চরিত্রবান পুরুষের জন্য দুশ্চরিত্র নারী।

তিনি বলেন, আমার কাছে ২০টি এসএমএস ও ১০০টি কল আসছে, সবাই জানতে চেয়েছেন- হুজুর পালিয়ে অন্যের বউ বিয়ে করা জায়েজ নাকি হারাম। অন্যের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করা জায়েজ নাই। এ ধরনের কাজ যারা করে তাদের বিয়ে হবে না, তাদের বিয়ে বাতিল। অন্য আলেম ওলামাদের কাছ থেকে ফতোয়া নেবেন। অন্যের বউকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করলে এ বিয়ে হবে না। শুধু তাই নয়, তিনি একজন মুসলমান ভাইয়ের হক নষ্ট করেছেন। এজন্য তার ডবল গুণাহ হবে।

এদিকে ভ্যালেন্টাইনস ডেতে কেবিন ক্রু তামিমা তাম্মিকে বিয়ে করেন নাসির। তাদের জমকালো বিয়ের অনুষ্ঠানে ছবি উষ্ণতা ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুক ব্যবহারকারীরা দুজনকে নিয়ে মেতে ছিলেন কয়েক দিন। কিন্তু এক সপ্তাহ পূর্ণ না হতেই জানা গেল নাসিরপত্নীর আগে আরেকটি বিয়ে হয়েছিল। তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসান। তার দাবি, তামিমা তাকে ডিভোর্স না দিয়েই নাসিরকে বিয়ে করেছেন।

তালাক ছাড়া বিয়ে করা বিষয়ে যা বলছেন আলেমরা

এ প্রসঙ্গে কথা বলেছিলাম জামিয়া কোরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ মাদরাসার প্রাক্তন শিক্ষক মুফতি তৈয়ব হোসাইন এর সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রিকেটার নাসিরের বউ এর আগের স্বামীর অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাদের মাঝে এখনো যদি শরীয়ত মোতাবেক অথবা মুসলিম পারিবারিক আইন যেটি বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন, এ আইন মোতাবেক তাদের মাঝে যদি ডিভোর্স বা তালাক না হয়ে থাকে তাহলে নাসিরের বিয়ে বৈধ নয়।

আর যেখানে বিয়ে বৈধ নয়; সেখানে তাদের সাথে সাক্ষাৎ, একসাথে থাকা কিংবা অন্য সকল কার্যক্রম হারাম ও নিষিদ্ধ। এবং শরীয়ত মোতাবেক এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি নিন্দনীয় ও অত্যন্ত গর্হিত হারাম কাজ। এর থেকে বিরত থাকা জরুরি।

একই ধরনের কথা বলছেন বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলার ও আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেছেন, নাসিরের বর্তমান বউ তামিমা আর তামিমার পূর্বের স্বামীর সাথে যদি শরীয়তসম্মতভাবে ছাড়াছাড়ি না হয়ে থাকে, তাহলে কোনভাবেই নাসিরের সাথে তার এই বিয়ে বৈধ নয়। তবে এর জন্য এখানে দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।

প্রথম বিষয় হলো, তামিমের সাথে তার প্রথম স্বামীর ছাড়াছাড়িটা ইসলামী শরীয়ত সম্মতভাবে হয়েছে কিনা। আর ডিভোর্স লেটার পাঠানো এবং সেই ডিভোর্স লেটারটি ইসলামী শরীয়ত সম্মতভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া পর্যন্ত পৌঁছেছে কিনা, এই বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে।

আর দ্বিতীয় বিষয় হলো, যদি তার (নাসিরের বউ তামিমার) শরীয়ত সম্মতভাবে ছাড়াছাড়ি বা বিচ্ছেদ হয়ে থাকে, তবুও তাকে তিন মাস পর্যন্ত ইদ্দত পালন করতে হবে।

এই দুটি বিষয়ের কোন একটি বিষয় যদি অনুপস্থিত থাকে, তাহলে নাসিরের বিয়ে শুদ্ধ হবে না। বরং এটি একটি অবৈধ বিয়ে।

এখন তাদের জন্য করণীয় হলো, যদি তারা ঘর সংসার করতে চায়, তাহলে আমরা যে দুটি শর্তের কথা বলেছি-এই দুটি শর্ত মেনে তারপর তাদের বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে। অন্যথায় এটি বিয়ে তো হবেই না বরং এটি যিনা-ব্যভিচার হিসেবে সাব্যস্ত হবে।

-এটি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ