আওয়ার ইসলাম: ভাষা শহীদদের রক্তের পবিত্রতা রক্ষায় বাংলা ভাষাকে ভিনদেশী আগ্রাসনমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ।
আজ শনিবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পুরানা পল্টনস্থ মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘ইসলামে মাতৃভাষা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, তিক্ত হলেও সত্য যে, একই চেতনা ও লক্ষ নিয়ে ভাষা আন্দোলন হয়েছিল। মায়ের ভাষাকে সর্বত্র প্রতিষ্ঠা করতেই বাংলার দামাল ছেলেরা জীবনের মায়া উপেক্ষা করে হায়েনাদের বুলেটের সামনে নিজেদের বক্ষকে উন্মোচিত করে দিয়েছিল। বাংলা ১৩৫৯ সালের ৮ ফাল্গুন থেকে আজ পর্যন্ত ৬৭ বছর পরও ভাষা আন্দোলনের সে চেতনার প্রতিফলন তথা মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। মনে হচ্ছে বাংলা ভাষার প্রতি নতুন প্রজন্মের সেই ভালোবাসা নেই। হিন্দি সিনেমা ও সিরিয়াল দেখে শিশুরা হিন্দি কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। উচ্চবিত্তরা তাদের সন্তানদের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এটিকে অনেকে এক ধরণের আভিজাত্য মনে করছেন। বাংলা ভাষার প্রতি এ জুলুম সত্যিই বড় নিষ্ঠুর। বাংলা ভাষার প্রতি এ অসদাচরণ বন্ধ করা এখন সময়ের দাবী। রাষ্ট্রকে এর দায় ও দায়িত্ব নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার নবী ও রাসুলদের তাদের নিজস্ব ভাষায় অর্থাৎ মাতৃভাষায় পাঠিয়েছেন বলে কুরআনে উল্লেখ করেছেন, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সা. কে তার মাতৃভাষা আরবিতে কিতাব দান করেছেন।
আইএবি'র প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়ে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ শ্লোগানে মুখরিত করে তুলেছিল রাজপথ। এই দূর্বার আন্দোলনে শামিল হয়ে জীবন উৎসর্গ করেন এদেশের বহু ছাত্র-জনতা। অথচ এখনো আমাদের আদালতে দাঁড়িয়ে বিচারপতিকে সম্বোধন করা হয় ‘মাই লর্ড’ বলে। ভিনদেশী ভাষা আজ ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মনে রাখতে হবে, ইসলামও মাতৃভাষার প্রতি যত্নবান হওয়ার প্রতি অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। নবীজি সা. বলেছেন, আমি আরবের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধভাষী। তাঁর মাতৃভাষার বিশুদ্ধতার জন্য তাকে শিশুকালে শহর ছেড়ে গ্রামে রেখে আসা হয়। কাজেই এতো কিছুর পরও বাংলা ভাষার প্রতি এ রকম উদাসীনতা মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা এবং ভাষা শহীদের আত্মত্যাগকে অবমূল্যায়ন করার শামিল।
সভায় মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে শাহাদাৎবরণ করেছেন তাদের রুহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা হয়।
ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, আলহাজ্ব আব্দুল আউয়াল মজুমদার প্রমূখ।
-এএ