সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


ইসলামের দৃষ্টিতে মানব জীবনে শিষ্টাচার-ভদ্রতা অপরিহার্য

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

উসমান বিন আ.আলিম: মানব জীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজ গঠনে বা ব্যক্তি গঠনে যার প্রয়োজনীয়তা অতুলনীয়।কোন জাতিকে সু-সভ্য মানুষ রূপে গড়ে উঠানোর জন্য শিষ্টাচার অতি গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে আমাদের অশান্ত ও উচ্ছৃঙ্খল সমাজে শান্তি আনতে হলে সমাজের মানুষদের শিষ্টাচারসম্পন্ন হতে হবে।

কারণ, শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তি কোনো অন্যায়ের সাথে নিজেকে জড়ায় না, কারো সাথে শত্রুতা করে না বা কারো স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ব্যাঘাত ঘটানোর চেষ্টা করে না। শিষ্টাচার হচ্ছে ভদ্র, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণ।

একজন মানুষ ভালো না মন্দ তা বিবেচিত হয় মূলত সে ব্যক্তির আচরণ দেখেই। শিষ্টাচার মানুষকে সংযমী ও বিনয়ী করে তোলে। শিষ্টাচারসম্পন্ন ব্যক্তি তার ভদ্র ও সংযত ব্যবহার দিয়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে। শিষ্টাচার-সম্পন্ন মানুষকে সবাই শ্রদ্ধা করে। তাদের স্থান সমাজের উঁচু স্তরে। হোক সে ব্যক্তি অসুন্দর কিংবা গরীব। একমাত্র শিষ্টাচারই মানুষকে প্রকৃত মর্যাদায় ভূষিত করে।আমাদের ধর্ম ইসলামেও শিষ্টাচারকে ব্যপক গুরুত্ব দিয়েছেন।

শিষ্টাচারের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভাল ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুঅতের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ’।[আবু দাউদ,হা-৪৭৭৬]

হজরত আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) বলেন; ‘তুমি আদব অন্বেষণ কর। কারণ আদব হ’ল বুদ্ধির পরিপূরক, ব্যক্তিত্বের দলীল, নিঃসঙ্গতায় ঘনিষ্ঠ সহচর, প্রবাসজীবনের সঙ্গী এবং অভাবের সময়ে সম্পদ’।[ ইছবাহানী, মুনতাখাব; সাফারিঈনী, গিযাউল আলবাব, ১/৩৬-৩৭।]
আহনাফ আল-কায়েস বলেন;‘আদব বা শিষ্টাচার বিবেকের জ্যোতি যেমন আগুন দৃষ্টিশক্তির জ্যোতি’।[ফৎওয়া আল-মিছরিয়া, ১০/৩৫৯, ‘আদব’ অধ্যায়।]

রুওয়াইম ইবনু আহমাদ আল-বাগদাদী তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি তোমার আমলকে লবণ ভাববে, আর তোমার আদবকে মনে করবে ময়দা’।[ ড. আলী আব্দুল হামীদ, আত-তাহযীলুদ দিরাসী বিল ক্বাইয়েমিল ইসলামিয়াহ, (বৈরূত : ১ম প্রকাশ, ১৪৩০হিঃ/২০১০খ্রিঃ), পৃঃ ১৫৪; আল-কুরাফী, আল-ফুরূক্ব, ৩/৯৬।]

অর্থাৎ তুমি আমলের চেয়ে আদবকে এত অধিক গুরুত্ব দিবে, লবণ ও ময়দার স্বাভাবিক মিশ্রণে উভয়ের অনুপাত যেভাবে কম-বেশী হয়। সুতরাং মানব জীবনে আদব শিষ্টাচার অতি গুরুত্বপূর্ণ।

পৃথিবীতে যারা মানুষ হিসাবে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন, তারা কেবল শিষ্টাচার ও নম্র ভদ্র ব্যবহারের মাধ্যমেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছে। প্রত্যেক ধর্মে শিষ্টাচারের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহানবী (স.) ছিলেন শিষ্টাচারের মূর্ত প্রতীক। উন্নত ব্যবহারের জন্য তিনি ছোট-বড় সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। সংযম, বিনয়, ভদ্রতা তাঁর চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কখনো তিনি কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি, উদ্ধত আচরণ করেননি। এ কারণেই যুগে যুগে মানুষের কাছে তিনি এত শ্রদ্ধার পাত্র।

এক দার্শনিক তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আকল (বুদ্ধি) ছাড়া যেমন আদব হয় না; তেমনি আদব ছাড়াও বুদ্ধিমান হয় না।’ অর্থাৎ একটি আরেকটির পূরিপূরক।শিষ্টাচার হঠাৎ করে কারো মধ্যে গড়ে উঠে না। এর জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ প্রস্তুতি পর্ব। শিষ্টাচারের বীজ মূলত বপন হয় শিশুকালেই। আর এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা প্রধান। শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। পরিবারের বড়রা যেরকম ব্যবহার করে শিশুরা তাই অনুকরণ করে। বাল্যকালে শিশুদের সংযম, বিনয় ও উন্নত রুচির চর্চা ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে শিষ্টাচার গড়ে তোলে।যে ব্যক্তি শিষ্টাচার অর্জন করতে পারে না, তার মানুষ হয়ে জন্মানোর কোনো সার্থকতা নেই।

শিষ্টাচারহীন উদ্ধত মানুষ কেবল আকৃতির দিক থেকেই মানুষ, তাদের মনুষ্যত্বের কোনো বিকাশ ঘটে না। ফলে তারা সমাজের চোখে হয়ে থাকে ক্ষুদ্র কীট-পতঙ্গ সাদৃশ্য। সমাজ এদের কোনো মর্যাদায় ভূষিত করে না, কুরুচিপূর্ণ এসব মানুষকে ফেলে রাখে আস্তাকুঁড়ে। সমাজে শিষ্টাচারের অভাব নৈতিক অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে। সমাজজীবন হয়ে উঠে অশান্তিপূর্ণ। নানা কদর্যতা, অন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ফলে সমাজে বসবাসকারী মানুষরা ভোগে অস্তিত্বের সংকটে। শিষ্টাচারহীনতা একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নের অন্তরায়। তাই শিষ্টাচার সম্পূর্ণ জীবন গড়ি, আলোকিত সমাজ গড়ি। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুক আমিন।

লেখক: তরুণ আলেম, লেখক।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ